দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভিন রাজ্য থেকে বাংলার শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। কখনও প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী, কখনও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করেছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সরকারের অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসবের মধ্যেই রাজ্য সরকার ১৫টি ট্রেনে করে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়েছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, আরও ২৩৫টি ট্রেনে অনেককে ফিরিয়ে আনা হবে।
শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা থেকে তাঁদের পরীক্ষা করা, বাড়ি পৌঁছানো এই কাজটা যে সহজ নয় সেটাও এদিন বুঝিয়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, অনেক জেলা, অনেক গ্রাম থেকে প্রতিরোধ হচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ এলে তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সেটাও দেখতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই নাম না করে বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। প্লিজ তা করবেন না।”
এই রাজ্যের ঠিক কত মানুষ ভিন রাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন সেই সংখ্যা নিয়েও অনেক জল্পনা রয়েছে। অনেকেই দাবি করেন, বাংলার ২০ লাখ শ্রমিক রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছেন। এদিন সেই দাবি উড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, সংখ্যাটা আদৌ ২০ লাখ নয়। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২০ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক নেই। ওটা ভুল সংখ্যা। প্রকৃত সংখ্যা তার থেকে কম।” সেই সঙ্গে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই বাংলায় ১৬টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন এসে গেছে। ২ লাখ লোক ট্রেনে, বাসে করে রাজ্যে এসেছেন। এখন আরও ২৩৫টি ট্রেন রাজ্যে আসবে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১১৫টা ট্রেন চেয়েছি। ১৫ দিনের মধ্যে আরও ১২০টা ট্রেন চাইব। আমরা চেষ্টা করব ১৫ দিনের মধ্যে যথাসম্ভব শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার। রোজ দশটা করে ট্রেন ঢোকাব।”
ট্রেনে করে এত পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে আসা মানে যে রাজ্যের উপরে বড় চাপ সেটাও এদিন বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৩৫টা ট্রেন আসা মানে রাজ্যে সাড়ে চার লক্ষ লোক ঢুকে যাবে। আগে প্রতি ট্রেনে ১২০০ যাত্রী আসছিল, এখন ১৮০০ জন আসছে। তাঁর কথায়, “ট্রেনে আসার পরে শ্রমিকদের চেক আপ করতে হচ্ছে। তার পর বাড়ি পাঠাতে হচ্ছে”। তাঁর কথায়, “কতগুলো জায়গা বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। চেন্নাই, মুম্বই, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, ইনদৌরে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে।”
কোভিড সংক্রমণের ফলে রাজ্যের রাজস্ব আদায় যে তলানিতে ঠেকেছে তা ঘোর বাস্তব। এই পরিস্থিতিতে এত শ্রমিককে ট্রেন ভাড়া দিয়ে নিয়ে এসে, খাইয়ে দাইয়ে, পরীক্ষা করে, সরকারি বাসে চাপিয়ে বাড়ি পাঠানোতেও খরচ রয়েছে। তাতে কোষাগারে চাপ পড়ছে সন্দেহ নেই। তাই কিছুটা অসহায়তাও প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এক দিনে আমার ঘাড়ের উপর ঠেলে দিলে, অত লোককে কোথায় ঢোকাব। গ্রামের থেকেও তো বাধা আসছে। তা ছাড়া বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অত ব্যবস্থাও তো নেই”। তাঁর কথায়, “ওই শ্রমিকরা যেখানে পৌঁছবে, সেখানে নজর রাখতে হবে। আমি যদি হাজার হাজার করোনা ছেড়ে দিই, মানুষ কি ছেড়ে দেবে? জেলায় কোথায়, কত লোক ঢুকতে পারবে, কতটা ক্যাপাসিটি রয়েছে, তাও তো দেখতে হবে।”
রাজ্যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার চাপের মধ্যেই আবার ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। এই সব মিলিয়ে যে রাজ্য প্রশাসন যে ব্যতিব্যস্ত তা এদিন স্পষ্ট হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, “একদিকে কোভিড নিঃশ্বাস ফেলছে, ওদিকে আমফান নিঃশ্বাস ফেলছে, অন্যদিকে নার্সদের নিয়ে চলে যাচ্ছে, শ্রমিকরা ঢুকছে—কোনদিকে যাব!”