‘হিন্দুদের ভোট নেবে বিজেপি, মুসলিমদেরটা ওরা, আমি কি কাঁচকলা খাব?’,উত্তরবঙ্গে বললেন দিদি

0
3218

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উনিশের ভোটে বিজেপি যখন বাংলায় ১৮ টি আসন পেল, তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “টোটালটাই হিন্দু মুসলমান করা হয়েছে…।” সেই সাংবাদিক বৈঠকে দিদি এও বলেছিলেন, “যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও খাব…।” যা শুনে অনেকে মনে করেছিলেন, সংখ্যালঘুদের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।
একে তো একুশের ভোটেও উনিশের মতই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ ধর্মীয় মেরুকরণের সিঁদুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে। তার উপর শোনা যাচ্ছে, কট্টরপন্থী মুসলিম পার্টি মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন তথা মিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও এ বার রাজ্যে প্রার্থী দেবেন। এবং তাতে কেউ কেউ প্রমাদ গুণছেন সংখ্যালঘু ভোটেই ভাগ বসাতে চাইবেন তাঁরা। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বোঝাতে চান— বিজেপি-মিম গট-আপ রয়েছে। হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করে ওরা ভোট ভাগাভাগি করে নিতে চায়।

সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করার জন্য একটা হায়দরাবাদের পার্টি ডেকে এনেছে। সেই পার্টিটা এখানে কয়েকটাকে জোগাড় করেছে…। বাংলার ভাল সংখ্যালঘু ভাইবোনরা ওদের সঙ্গে নেই। বিজেপি ওদের টাকা দেয়, আর বিজেপির টাকায়…বিহারে তো দেখেছেন, ওরা কী করেছে।”
“হিন্দুদের এলাকায় গিয়ে খুব গালাগালি দেবে হিন্দুদের। তা হলে কী হবে হিন্দুদের ভোটটা বিজেপি পাবে। আর মুসলিমদের এলাকায় গিয়ে এতো ভাল ভাল কথা বলবে যাতে মুসলিমদের ভোট ওরা পায়। অর্থাৎ বিজেপি হিন্দুদের ভোট নেবে, আর ও মুসলিমদের ভোট নেবে। আর আমি কি কাঁচাকলা খাব?”

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, গত রবিবার বাংলার চার জেলা থেকে সংখ্যালঘু নেতারা হায়দরাবাদে গিয়ে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কোন কোন আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে বলেছেন ওয়াইসি। একটি সূত্রের মতে, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওয়াইসি। তিনি বাংলার নেতাদের বলেছেন, আমি জানি ওরা আপনাদের কোনও সভা করতে দেয়নি। কাকে কাকে আটক করেছিল তাও জানি। সব হিসাব হবে।


এও খবর যে, ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি মিম তথা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আব্বাসও কট্টরপন্থী বলে পরিচিত। তাঁর সব ফেসবুক লাইভে রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে যেন আগুন ঝরে। ইদানীং দক্ষিণবঙ্গে আব্বাসের সভায় ভাল লোকও হচ্ছে। এর উপর আবার অনেকের মনে কৌতূহল রয়েছে, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও এঁদের সঙ্গে হাত মেলাবেন।
এই তিনটি সংখ্যালঘু শক্তি হাত মেলালে তৃণমূলের জনভিত্তিতে তার আঁচ পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা রয়েছে। শাসক দলের আশঙ্কা এই খেলার নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে। তারাই এ সব করেছে। তবে তৃণমূলের এক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় এদিন বলেন, বিহার ভোটের ফলাফল বিচার করলে দেখা যাবে মিম নিয়ে যতটা বেলুন ফোলানো হয়েছে, ব্যাপারটা কিন্তু ততটা নয়। তারা ভোট কেটে বিজেপিকে কোথাও জেতাতে বা হারাতে পারেনি। আসনওয়াড়ি ফলাফলে তা স্পষ্ট।

কিন্তু স্রেফ এই তত্ত্বের উপর ভরসা করে কি রাজনীতি করা যায়। সব রাজ্যের প্রেক্ষাপট সমান নয়। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কথায়, মনে রাখতে হবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সংখ্যালঘুরা কিন্তু সেখানকার শাসক দলের মুসলিম নেতাদের হাতেই অত্যাচারিত।
এই সামগ্রিক ছবির প্রেক্ষাপটেই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে দেখছেন অনেকে। এখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর একটি সাম্প্রতিক মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে তৃণমূল। আর সেই কারণেই বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হয়, সবটাই সাজানো ও পূর্ব পরিকল্পিত। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো সংখ্যালঘুদের দেখাতে চেয়েছেন, বিজেপির উপর হামলা করতে তাঁরাই পারেন। আর কেউ নয়। এর টার্গেট অডিয়েন্স কারা সেটাও বোঝা যাচ্ছে।”

Previous articleচটঘেরা জায়গায় আঙুল টিপলেই জবাব পাবেন: তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর
Next articleআমি বড় না ও বড় এ সব করার কোনও প্রয়োজন নেই, ভোটের সময় অন্যের সঙ্গে বোঁচকা বাঁধলে বরদাস্ত নয়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here