দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে চাঞ্চল্য। রিপোর্টে উল্লেখ করা ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’দের তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। তালিকায় রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উদয়ন গুহ, শেখ সুফিয়ান, পার্থ ভৌমিক, শওকত মোল্লা, জীবন সাহা, খোকন দাস। এই তালিকা ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে পেশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতর।
বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত টিম যে রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশ করেছে তাতে জেলা, ব্লক, থানা উল্লেখ করে অশান্তির ঘটনাগুলির উল্লেখ রয়েছে। কোন জেলায় কোন থানায় কতগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং তার মধ্যে কতগুলি এফআইআর হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে সে খতিয়ানও রয়েছে। এলাকা ধরে ভোট পরবর্তী হিংসায় জড়িতদের নামের তালিকাও জমা দিয়েছে কমিশনের টিম। যা কার্যত বিস্ফোরক রিপোর্ট বলা চলে।
দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন আদালতের কাছে রিপোর্টের মাধ্যমে আর্জি জানিয়েছে যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সিবিআই তদন্ত হোক। এবং এও বলেছে, এই মামলা যেন রাজ্যের বাইরে পাঠানো হয়।
তারপর ওই রিপোর্টের আরও কিছু সংযোজনী দিয়েছে কমিশন। তারই একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনালস/গুনস’-এর তালিকা। সেই কুখ্যাত ও দাগী অপরাধীদের তালিকায় যাঁদের নাম রাখা হয়েছে তা রোমহর্ষক। অসংখ্য নামের মধ্যে বেশ কয়েকটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত পর্যবেক্ষকদের।
যেমন দিনহাটার ক্ষেত্রে নটোরিয়াস ক্রিমিনালের তালিকায় রয়েছে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহর নাম। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ক্ষেত্রে দু’জনের নাম রয়েছে। একজন মহম্মদ আলম ও অন্য জন সৈয়দ আলম। মহম্মদ আলম সিভিক ভলান্টিয়ার আর সৈয়দ তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী।
এবার জেলা থেকে যদি কলকাতায় আসা যায় তাহলে সেখানেও দেখা যাচ্ছে শাসক দলের লোকের নাম দাগী অপরাধীর তালিকায় লিখেছে মানবাধিকার কমিশন গঠিত কমিটি। চিৎপুরে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করা হয়েছে স্থানীয় তৃণমূলনেত্রী উমা দাস এবং তাঁর স্বামী লাল্টু দাসকে।
তালিকায় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক খোকন দাস, নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান এবং ক্যানিংয়ের তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লারও নাম রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, না জেনেই মানবাধিকার কমিশন এই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জ্যোতিপ্রিয় এও বলেন তাঁর নামে বাংলার কোনও থানায় অভিযোগ নেই। তারপরেও এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে যা লজ্জাজনক।
সেইসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় আরও বলেছেন, দল পুরোটা দেখছে।প্রয়োজনে মানহানির মামলা হবে।
কমিশন আগেই বলেছিল, বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা পরিদর্শন করে দেখেছেন পুলিশ এফআইআর-ই গ্রহণ করছে না। তার স্বপক্ষেও রিপোর্টে নিবিড় পরিসংখ্যান তুলে দিয়েছে তারা। যেমন রিপোর্টে লেখা রয়েছে, উত্তর চোপড়ায় ৮৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তার মধ্যে ৭৫টি এফআইআর হিসাবে নথিভুক্ত হয়নি। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে ৯০টি এফআইআ দায়ের হয়েছিল রেজিস্টার্ড হয়নি ৮৫টি। এমন সমস্ত জেলারই তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিন কমিশনের এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন বিচারাধীন ব্যাপার নিয়ে মন্তব্য করবেন না। সেইসঙ্গে তিনি এও বলেছেন, “এত হেরেও এদের লজ্জা নেই। সমস্ত নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিজেপি দখল করে নিয়ে নানা রকম চক্রান্ত করছে।” মমতা আরও বলেন, “হাথরাস থেকে উন্নাও—উত্তরপ্রদেশে এত কিছু হচ্ছে, কটা কমিশন গেছে, ক’বার গেছে?”