দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন।সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে সর্বত্র।এ রাজ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে ঢুকতে দেয়নি ছাত্ররা।এক ছাত্রী দেবস্নিতা চৌধুরি সিএএ র প্রতিলিপি ছিঁড়ে সমাবর্তন মঞ্চে তাঁর তাঁর প্রতিবাদ ধ্বণিত করেছেন।দিল্লির জামুরিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ আন্দোলন বন্ধ করতে রাতের অন্ধকারে পুলিশ ঢুকে ছাত্রদের উপর নির্মম অত্যাচার করেছে।এই পরিপ্রেক্ষিতে আবার নতুন করে সেই বিতর্ক সামনে আসতে শুরু করেছে ছাত্ররা কেন এতটা সরকার বিরোধী প্রচার আন্দোলন করবে?কেন ছাত্ররা শুধু পড়াশোনা নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে না।আমরা জানি এদেশের শিক্ষা নীতি বার বার একথা সোচ্চারে বলেছে ছাত্রা নাং অধ্যায়ং তপঃ মানে ছাত্রাবস্থাতে অধ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকাই ধর্ম।সেই যুক্তি মেনেই কেউ কেউ বলছেন ছাত্ররা বাড়াবাড়ি করছে,দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত না দিয়ে তারা বরং নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে ভাবুক।নেতা হওয়ার সময় তাদের এখনও হয় নি।এ রাজ্যের রাজ্যপালকে যেভাবে যাদবপুর ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল তা সংবিধান বিরোধি বলেও অনেকের মত।আমরা এই মতের সরাসরি কোন বিরোধিতা না করে কিছু যুক্তির কথা বলতে চাইবো,বুঝতে চাইবো ছাত্রদের আবেগ বিহ্বলতাকেও।
ছাত্ররাও এদেশের নাগরিক,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন তারা সচেতন নাগরিক।তাই দেশের কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট একটা মত থাকা অস্বাভাবিক নয়। ছাত্ররা শুধু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন এই যুক্তি যারা দেন তারা বোধহয় পড়াশোনাকে শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ দেখতে ্অভ্যল্ত,তারা বরং নিজেদের পুরনো ধ্যানধারনা বদলে ফেলুন আজকের পৃথিবীতে জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় আটকে নেই।সময়ের উত্তাপ নিতে জানাটাও জ্ঞান চর্চার অঙ্গ।চারপাশে যা হচ্ছে,যা চলছে সে সম্পর্কে ছাত্রদের চেয়ে ভাল বিশ্লেষক আর কে হতে পারে?সময়কে চিনতে শেখে তারুণ্য এ নিযে পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে আছে।সমাজটাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার দায় এডিয়ে যায় যে ছাত্র সে আত্মকেন্দ্রীক,আত্মসর্বস্ব তাকে দিয়ে সমাজের কোন উপকার হয় না,যে ছাত্র সমাজের নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে নাড়া খায় সেই যথার্থ সংবেদনশীল।এদেশের হিন্দু মুসলমান বিভাজনের বিরুদ্ধে যে ছত্ররা প্রতিবাদে নেমেছেন মনে রাখতে হবে তারা কোন সংকীর্ণ স্বার্থে নামেন নি নেমেছেন এক বৃহত স্বার্থে।মানুষে মানুষে পরিচয়ে ধর্ম কেন পাঁচিল হয়ে দাঁড়াবে,এই প্রশ্ন যে ছাত্ররা করছেন তারা মানবতাকে গুরু্ত্ব দিতে চান।জামুলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হিন্দু ছাত্রীটি তার মুসলমান সহপাঠিদের বাঁচাতে পুলিশের লাঠির সামনে পিঠ পেতে দাঁড়িয়ে যায় সে আসলে এই শিক্ষাই দেয় যে ছাত্রদের কোন ধর্ম হয় না,জাত হয় না।আমাদের সংবিধান এতদিন আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে এসেছিল,আজ আচমকাই যদি তাকে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা হয় তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার আছে।ছাত্ররাই বোধ ও চেতনার চর্চা করে তাই শুধু পাঠ্যবইয়ের পাতাতেই নয় ছাত্র সমাজ শিক্ষা নেয় সমাজের নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত থেকেও।আমাদের তাই ছাত্রদের প্রতিবাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি।মনে রাখতে হবে প্রশ্ন করা ও বিরুদ্ধ স্বরে বাজাটা গণতন্ত্রকে দূর্বল করে না বরং শক্তিশালী করে।আমাদের ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধ স্বর তাই গণতন্ত্রকে মজবুত করারই প্রয়াস।