সম্পাদকীয়ঃ দিল্লির মানুষ যে বার্তা দিল বিজেপিকে

0
657

দিল্লির নির্বাচনের ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ।কারণ এবার দিল্লির নির্বাচনের এক বিশেষ মাত্রা ছিল।গোটা দেশে বিজেপি যে ভাবে নতুন নাগরিকত্ব আইন ও সিএএ প্রয়োগ করতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলতে চাইছে তার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা দেশেই এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সেই সময় দিল্লির মত একটা রাজ্য,যা কিনা ভারতের রাজধানি ও একই সঙ্গে গোটা দেশের মানুষ এখানে বসবাস করেন,মানে মিনি ভারত বলতে যা বোঝায় দিল্লি একেবারে তাই।এরকম একটা জায়গায় বিজেপি তার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনে লড়েছিল,যদি তারা সফল হত তাহলে বোঝা যেত বিজেপির এনআরসি ও সিএএ নীতির পক্ষে রয়েছে মিনি ভারত।তখন বিজেপি বুকফুলিয়ে বলতে পারতো দিল্লির মানুষ প্রমাণ করে দিলেন বিজেপি যে পথে ভারতকে নিয়ে যেতে চাইছে তা দেশের মানুষ সমর্থন করবেন।

কারণ মিশ্র ভারত বলে যে স্থানের পরিচয় সেই দিল্লি বিজেপির নতুন নীতিকে অনুমোদন দিয়েছে।কিন্তু বাস্তব ফল হয়েছে ঠিক উল্টো।বিজেপি দিল্লির ভোটে চূড়ান্তভাবে মানুষের অনাস্থা কুড়িয়েছে।মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির বিভাজন ও উগ্র পাকিস্তান বিরোধী চর্চা তাদের পছন্দ নয়।ভারতের একটা রাজ্যের ভোট পর্বকে যে ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানুষের রায় যাচাই হিসেবে বিজেপির নেতারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাতে মানুষ তাদের বিমুখ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন এদেশের ভোটকে তারা এদেশের উন্নয়ন ও বিকাশের নিরিখেই বিচার করতে চান।কোন বাইরের রাষ্ট্রের সঙ্গে এদেশের কোন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে এক করে দিয়ে যে নোংরা ও বিপজ্জনক খেলা বিজেপি খেলতে চাইছে তাতে যে মানুষ অনুমোদন করে না তা দিল্লির নির্বাচনের ফলে পরিষ্কার।বিজেপি নেতাদের উচিত এই রায়ের মর্মকে অনুধাবনের চেষ্টা করা।

যদিও বিজেপি নেতারা সেই প্রয়াস করবেন কীনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।এর আগেও বার বার দেখা গেছে বিজেপি নেতারা মানুষের মতকে সম্মান দেওয়ার বদলে তাকে উপেক্ষা করতেই বেশী আগ্রহ দেখিয়েছেন।নির্বাচনে হেরে গিয়েও তারা ঘোরা কেনাবেচা করে ক্ষমতার অলিন্দে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

ক্ষমতা ও অর্থকে ব্যবহার করে বার বার বিজেপি যেভাবে গণতন্ত্রের ভিতকে দূর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে তাতে মনে হয় না দিল্লির মানুষের রায়কে তারা আদৌ সম্মান দিয়ে নিজেদের ভুল শুদরে নেওয়ার চেষ্টা করবে।তারা দেখাতে চাইবে দিল্লি একটা ছোট কেন্দ্র শাসিত রাজ্য সেখানে ভোটের ফলকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।প্রশ্ন উঠবেই তা যদি হয় তবে কেন বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে এই রাজ্য জয় করতে ঝাপিয়েছিল?

এ প্রশ্নের উত্তর বিজেপে দেবেনা জানা কথা কারণ তারা যে যখন যেমন তখন তেমন নীতি নিয়ে কথা বলতে ভালবাসে এতদিনে গোটা দেশের মানুষ তা জেনে গেছে।তবু বিজেপি নেতাদের মনে রাখা উচিত গায়ের জোর বা ক্ষমতা কিমবা অর্থের জোরে গণতন্ত্রকে চিরকাল দমিয়ে রাখা যায় না।মানুষ ঠিক সব চালাকি ধরে ফেলে।গোটা দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার যে অবনতি,বেকারি বেরোজগারি,শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পরিকাঠামোর উন্নতি না করতে পারলে শুধু হিন্দু-মুসলমান আর পাকিস্তানের তাস খেলে বিজেপি খুব বেশীদিন ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে পারবে না।দিল্লির মানুষ সেই বার্তাটাই বিজেপিকে দিয়ে দিল বলা যায়।

বিজেপি যদি দিল্লির সাধারণ মানুষের এই বার্তা কে উপেক্ষা করে এবং নিজেদের কার্যপদ্ধতি না বদলায় তবে তাদের আগামী দিন যে খুব সুখের হবে না তা বলে দেওয়ার জন্য হাত গোণার দরকার নেই,সাধারণ বুদ্ধিতেই তা ধরা যায়।গত লোকসভার পর হরিয়ানায় কোনক্রমে মিলেজুলে সরকার গড়া,তারপর মহারাষ্ট্রে হার,ঝাড়খন্ডে হার,তারপর দিল্লিতে এমন ঝাাঁটার আঘাত খাওয়ার পরও যদি সম্বিত না ফেরে তবে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই ঠিক হবে,এ রাজ্যে বিজেপির শেষ কলসিটা তিনিই ২০২১ এ ডুবিয়ে দেবেন।

তবে এ রাজ্যে অবশ্য বিজেপির সমাধি রচনা করতে মমতার মত জনপ্রিয় নেত্রীর দরকারই নেই সে কাজটা তো এ রাজ্যে দিলীপ ঘোষদের মত অপদার্থ ও গন্ডমূর্খ নেতারাই করে দেবেন।জানা নেই বিজেপির দিল্লির নেতাদের কবে বোধোদয় হবে!!

Previous articleনির্মলের ডানা ছেঁটে এনআরএসের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হল শান্তনুকে
Next articleএকুশে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন, এই রাজ্যকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি,মার্চে কলকাতায় সমাবেশ অমিতের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here