দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার পাঁচ বছর পর নন্দীগ্রামের মাটিতে পা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর ছিল তেখালির সভা মঞ্চে। আর সেই বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে এসে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন তৃণমূলনেত্রী।
রহস্য রাখতে চেয়েও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জানিয়ে দিলেন, একুশে তিনিই লড়বেন নন্দীগ্রাম থেকে। সেই সঙ্গে বললেন, ভবানীপুরে অন্য ভাল প্রার্থী দেবেন। আবার পরে বলেন, প্রয়োজনে ভবানীপুর থেকেও লড়ব।
এদিন মমতা বলেন, “নন্দীগ্রাম আমার একটা লাকি জায়গা। বার বার আসব এখানে। কেন বলুন তো! ২০১৬ সালের ভোটের আগে আমি নন্দীগ্রাম থেকেই আমার ভোট ঘোষণা করেছিলাম। নন্দীগ্রামে ২০২১ এ তৃণমূল জিতবে।”একুশের মহাযুদ্ধে শুভেন্দু-গড়ে দাঁড়িয়ে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
পাঁচ বছর আগে এরকমই এক জানুয়ারি মাসে নন্দীগ্রামের সভা থেকে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, হলদি নদীর পাড়ের এই জনপদে তিনি প্রার্থী করবেন শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু এদিন মমতা প্রথমে প্রার্থীর নাম বলতে চাননি। তাঁর কথায়, “আর নন্দীগ্রামের সিটে আমি কারও নাম এখনই বলছি না, পরে বলব। কিন্তু নন্দীগ্রাম সিটে ভাল মানুষ দেব, যিনি সত্যিই আপনাদের সঙ্গে থেকে কাজ করবেন। এটা জেনারেল সিট।”
কিন্তু এখানেই থামেননি। এর পরেই বলেন, “আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়, ভাবছিলাম, একটু বললাম, একটু ইচ্ছে হল, আমার মনের জায়গা, আমার ভালবাসার জায়গা।”
নন্দীগ্রাম আমার একটা লাকি জায়গা। বার বার আসব এখানে। কেন বলুন তো! ২০১৬ সালের ভোটের আগে আমি নন্দীগ্রাম থেকেই আমার ভোট ঘোষণা করেছিলাম। নন্দীগ্রামে ২০২১ এ তৃণমূল জিতবে।
আর নন্দীগ্রামের সিটে আমি কারও নাম এখনই বলছি না, পরে বলব। কিন্তু নন্দীগ্রাম সিটে ভাল মানুষ দেব, যিনি সত্যিই আপনাদের সঙ্গে থেকে কাজ করবেন। এটা জেনারেল সিট। আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়, ভাবছিলাম, একটু বললাম, একটু ইচ্ছে হল, আমার মনের জায়গা, একটু আমার ভালবাসার জায়গা। আমি হয়তো ভোটের সময় বেশি থাকতে পারব না। আমাকে ২৯৪ টা সিটে লড়তে হবে। আপনারা আমার হয়ে কাজ করে দেবেন। তার পর যা কাজ আমি সব করে দেব।
রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বলছি, নন্দীগ্রামে যেন আমার নামটা থাকে। ভবানীপুরকেও আমি অবহেলা করছি না। সেখানেও ভাল প্রার্থী দেব।
ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম আমার ছোট বোন। পারলে আমি দুটো আসনেই লড়ব। আমার বিবেক আমাকে জাগ্রত করল নন্দীগ্রাম থেকেই ঘোষণা করা। তবে নন্দীগ্রামে দাঁড়াবই।
এ প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে তৃণমূলের নতুন জন্ম হল। বেশি সময় দিতে পারব না। কারণ, ২৯৪ আসনেই আমাকে লড়তে হবে। তবে কাজ করে দেব। ভবানীপুরকেও অবহেলা করব না। ওটাও আমার ভালবাসার জায়গা। ওখানেও ভালো প্রার্থী দেব। ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম আমার মেজ বোন। পারলে দুটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব। কারণ নন্দীগ্রামে থেকেই আন্দোলন করব। নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়াবই। আমার বিবেক একথা বলল। পারলে দুটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব’। এ ঘোষণার মাধ্যমে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুড়়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
অন্যদিকে, একুশের ভোটের বাংলায় এদিন শুভেন্দু-গড়ে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম ঘিরে স্মৃতির সরণিতে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে মমতার নিশানা, ‘কারও কাছে জ্ঞান নেব না যে নন্দীগ্রাম আন্দোলন কারা করেছে আর কে করেছে’।
নাম না করে শুভেন্দুদের টার্গেট করে এদিন মমতা বলেছেন, ‘রাজনীতিতে তিন ধরনের লোক হয়। লোভি, ভোগী, ত্যাগী। ত্যাগীরা মায়ের কোল ছাড়বেন না। কিন্তু আরেক দল, যাঁদের অনেক সম্পত্তি, প্রচুর টাকা, টাকাগুলোও হয়েছে ঢাকা। সেই টাকা রক্ষিত করার জন্য আজ বড় বড় কথা। হয় জেলে, নয় ঘরে, বলছেন বিজেপি নেতারা। আমার অনেক শুভেচ্ছা থাকবে, অভিনন্দন থাকবে, তোমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হও, বাংলাকে বিক্রি করতে দিও না। আমি বেঁচে থাকতে বিজেপি-কে বাংলা বিক্রি করতে দেব না’।
নন্দীগ্রামের তেখালির সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে ১৪ মার্চের ঘটনা স্মরণ করিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন বলেন, ‘অনেকে বড় বড় কথা বলেন, সেদিন ১৪ মার্চ গুলি চলার আগে, সিঙ্গুর থেকে আন্দোলন তৈরি হয়েছিল। তাপসী মালিককে পুড়িয়ে হত্যা করা হল। এখানে ৭ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু হল। ১৪ মার্চ গুলি চলল। ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। জমি অধিগ্রহণ আইন আন্দোলন করে বদলেছিলাম। এটা আপনাদের অবদান। আমার শরীর ভেঙে পড়ে। ২ টি অস্ত্রোপচার করতে হয়। এখানে গুলি চলছে শুনে ডাক্তারদের বারণ সত্ত্বেও এখানে আসি। কোলাঘাটের সামনে গাড়ি ঘিরে গালাগাল দিচ্ছে, গায়ে থুতু দিচ্ছে, পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে বলছে। তদানীন্তন রাজ্যপাল বলেছিলেন, মমতাজি ফিরে আসুন, আপনাকে হত্যার জন্য এসব করা হচ্ছে। বলেছিলাম। ফেরার জন্য আসিনি’।