লকডাউনে অনেক ছাড় কিন্তু এখন আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে, বললেন মোদী

0
1738

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগামী কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে আনলক-১। অর্থাৎ ধাপে ধাপে সব কিছু স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে দেশ

পঞ্চমদফায় লকডাউন শুরু হচ্ছে সোমবার। এবার চলবে একমাস। ৩০ জুন পর্যন্ত। এই লকডাউনে অনেক কিছুতেই ছাড় ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তবে দেশ এখনও করোনা সংক্রমণের ভয় মুক্ত নয়। তাই দেশেবাসীকে এখনও সতর্ক থাকতে হবে। রবিবার তাঁর ৬৫ তম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর ভয় এখনও আছে, আমাদের এখনই খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে, আরও যা যা সতর্কতা অবলম্বন করা যায় তা করতে হবে। প্রতিটি জীবনই মূল্যবান।”

গত ২০ মে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপান-এ লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ওড়িশাতেও। সেই বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশার মানুষ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে লড়াই করছেন। আমি নিজে ঘুরে দেখেছি। বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। কৃষির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’

কৃষিতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে পশ্চিম ও মধ্য ভারতের চার-পাঁচটি রাজ্যে।  হানা দিয়েছে কোটি কোটি পঙ্গপাল। তাদের হানায় একরের পর একর ফসল নষ্ট হচ্ছে। এই পতঙ্গবাহিনীর হানায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী। 

প্রধানমন্ত্রী চতুর্থদফার লকডাউনের শেষ দিনে যখন তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেন তার কিছুক্ষণ আগেই এদিনের বুলেটিন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আর সেই রিপোর্ট বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮,৩৮০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দেশে। এখনও পর্যন্ত একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা এটাই সবচেয়ে বেশি। আর এদিনই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ছাড়াল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, “এখন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশই চালু হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্বেও ছ’ফুটের দূরত্ব (দো গজ কি দুরি) বজায় রাখতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে আর যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকতে হবে। আমাদের এখনও আরও বেশি করে সজাগ থাকতে হবে। সকলের সহযোগিতা পেলেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে দেশ কঠিন লড়াই লড়তে পারবে।”

এদিন প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘সাধারণ মানুষের যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে আমাদের। আমরা এমন এক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি যা সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা কম।”

দীর্ঘ সময় লকডাউনের মধ্য দিয়ে চলছে দেশ। ২৫ মার্চ শুরু হয় প্রথম দফার লকডাউন। প্রথমে যা ছিল ২১ দিনের তা এখন দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। দফায় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। সোমবার থেকে শুরু হতে চলা পঞ্চমদফার লকডাউনে যে অনেক ছাড় মিলতে চলেছে তা শনিবারই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে দেওয়া হবে। এখনও কনটেনমেন্ট জোনের মধ্যে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে। সেটুকু ছাড়া,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও হসপিটালিটি সার্ভিস খুলে যাচ্ছে। খুলে যাচ্ছে শপিং মল, ধর্মস্থানও। নিয়ম মেনে অফিস কাছারিও খোলা যাবে। বাকি থাকছে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বিমান, মেট্রো রেল, বার ইত্যাদি কয়েকটা ক্ষেত্র।

এই ঘোষণার পর দিনই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, অনেক কিছু খুলে গেলেও প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। করোনা সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়ে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও সেটা সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে সাধারণ মানুষকেও।

তবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে ভারত অনেক দেশের থেকে অনেকটা এগিয়ে সেটাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “আমরা যখন অন্য দেশের দিকে তাকাই তখন বুঝতে পারি কত বড় সাফল্য পেয়েছেন ভারতীয়রা। আমাদের জনসংখ্যা অনেক দেশের থেকেই অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তা সত্বেও দেশে মারাত্মক ভাবে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। দেশে মৃত্যুর হারও খুবই কম।” মোদী এদিন বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের প্রতিটি মানুষের ভূমিকা রয়েছে। দেশের মধ্যে ‘সেবা শক্তি’ প্রকাশ পেয়েছে। অপরকে সাহায্য করতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। মোদীর কথায়, এই মহামারীর ধাক্কা সমাজের সব শ্রেণির মধ্যেই পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছেন দেশের গরিব ও শ্রমিকরা। তাঁদের যন্ত্রণার কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

এক নজরে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন:

*আপনাদের সবার সুস্থতা কামনা করি 

• বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপালের হানা হয়েছে 

• এ ছাড়া দেশের অন্যত্রও কৃষিতে সঙ্কট রয়েছে 

• মানুষ প্রচুর সমস্যার মধ্যে রয়েছেন 

• আমি নিজে দুই রাজ্যে ঘুরে দেখেছি 

• কিন্তু দুই রাজ্যের মানুষ এই বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করছেন 

• বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন, কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে 

• পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় সুপার সাইক্লোনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে 

• করোনাভাইরাসের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক দুর্যোগ চলছে 

• যোগ ও আয়ুর্বেদ নিয়ে আগ্রহী অন্যান্য দেশও 

• কপালভাতি, অনুলোম-বিলোমের মতো আসন করা উপকারী 

• অনেক আসন আছে, যেগুলি করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেক কমে যায় 

• সেই সমস্যা কাটাতে যোগাসনের অভ্যাস করলে উপকার হয় 

• করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর 

• জাতীয় স্তরেও স্থানীয় দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে 

• স্থানীয় স্তরে উৎপাদিত জিনিসের চাহিদা বাড়ছে 

• এঁদের দুঃখ-দুর্দশা বলে শেষ করা যাবে না 

• তাঁদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করেছে সরকার 

• পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অনেক পদক্ষেপ করা হয়েছে 

• পঞ্জাবের এক প্রতিবন্ধী ৫০০০ মাস্ক তৈরি করে বিলি করেছেন  

• আগরতলার গৌতম দাস রিকশা চালক। তিনি তাঁর উপার্জনের পুরোটাই গরিব লোকজনকে খাওয়ানোর কাজে ব্যয় করছেন 

• কিন্তু করোনাভাইরাসের সঙ্কটের সময় তিনি সব টাকাই দান করে দিয়েছেন 

• তামিলনাড়ুর সি মোহন যেমন মেয়ের পড়াশোনার জন্য় ৫০০০ টাকা জমিয়েছিলেন 

• কিন্তু দেশের মানুষের সেবার মনোভাব আমাকে আশা জাগায় 

• আমাদের দেশে বিপুল জনসংখ্যা, বহু দেশের চেয়ে আমাদের জনসংখ্যা আমাদের দেশে বেশি 

• মাস্ক পরার ক্ষেত্রে আরও সাবধান হতে হবে, মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে 

• ২ গজ দূরত্ব বিধি আরও কড়া ভাবে মেনে চলতে হবে 

• এই সময় আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে 

• এখন ধীরে ধীরে সব কিছু চালু হচ্ছে, খুলছে 

• তাই হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, ২ গজ দূরত্বের বিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে 

• করোনা থেকে আমাদের দেশকে বাঁচাতেই হবে 

• সেই দিকে লক্ষ রেখে অবশ্যই গাছ লাগান 

• সারা বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে 

• এ বছরের থিম বায়ো ডাইভার্সিটি 

• সামনেই পরিবেশ দিবস আসছে 

• সেই সঙ্কটের সঙ্গেও আমরা যুদ্ধ করব 

• পঙ্গপালের হানায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য করা হবে

Previous articleদেশের সময়/Desher Samay
Next articleআমপান–পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার বনগাঁয় গিয়েছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here