রাজীবের নাম না করে বললেন ‘‌চুরি করে বিজেপি–তে পালিয়েছে’! ৭-৮ দিনে ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে, আলিপুরদুয়ারে: মমতা

0
689

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে দলের কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ৭-৮ দিনের মধ্যে ভোট ঘোষণা করে দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। বক্তৃতায় অবশ্য আর একবার তিনি বলেন, ৩,৪,৫ দিনের মধ্যে ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে।

যে হেতু সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা এ বার মে মাসের ৪ তারিখ থেকে হবে সেই কারণেই ভোট এগনোর সম্ভাবনা প্রবল। ২০১৬ বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছিল ১৯ মে। এ বার এপ্রিল মাসের মধ্যেই ভোটের গণনাও হয়ে যেতে পারে। সেই হিসাবে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


সাধারণ, প্রথম দফার ভোট গ্রহণের অন্তত চল্লিশ দিন আগে নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করে কমিশন। এই সব অঙ্ক কষেই অনেকে মনে করছেন, আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে।

এর মধ্যে শুধু একটাই প্রশাসনিক কাজ বাকি রয়েছে। তা হল, রাজ্য বাজেট তথা ভোট অ্যাকাউন্ট ঘোষণা। সংসদে সাধারণ বাজেট পেশ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ হবে। ৮ তারিখ বিধানসভার অধিবেশন চলতি মেয়াদে শেষ দিনের জন্য বসবে। তার পর যে কোনও দিন ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।

এদিন তৃণমূলত্যাগীদের বিরুদ্ধে ফের আক্রমণের সুর চওড়া করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে দলত্যাগীদের নিশানা করে তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন বলেন, ‘যাঁরা লোভী-ভোগী, তাঁদের তাড়ানোর আগে তাঁরা নিজেরাই চলে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য রাস্তা খোলা। তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি করা যায় না। আমি মনে করি, তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়করা টাকা দিয়ে বিক্রি হন না। আমাদের টিকিট পেতে লবি করতে হয় না। যাঁরা যত বেশি দুর্নীতি করেছেন, তাঁরা তো পালাবেনই। কেউ ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।’ একইসঙ্গে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতার সাফ কথা, ‘তৃণমূলে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, এখানে লোভের জায়গা নেই। এটা মা-মাটি-মানুষের দল। যদি কেউ ভুল করে থাকেন, তাহলে সংশোধন করে নেবেন। নেতাদের বড় ছাতা হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা।’

এর আগে মুকুল গেছেন। শোভন গেছেন। শুভেন্দু গেছেন। তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ তোলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। দলত্যাগীদের সমালোচনা করে কড়া বার্তা দিয়েছেন বড়জোর। এই প্রথম সেটা করলেন। নাম না করে আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে কর্মিসভায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন। 

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়:‌ বিজেপি–তে যোগ দিয়েই জনসভায় রাজীব আক্রমণ করেন নিজের পুরনো দলকে। বলেন, আসন্ন বিধানসভায় তৃণমূলকে হারিয়েই ছাড়বেন। এই দাবি প্রসঙ্গে মমতার তোপ, ‘‌বন সহায়ক পদ নিয়ে কারসাজি করেছে, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। রাজ্য সরকার তদন্ত করে দেখছে। চুরি করে বিজেপি–তে পালিয়েছে। বিজেপি ওয়াশিং মেশিন। সব ধুয়ে যাবে। এখন বড় বড় কথা বলছে। তৃণমূলকে হারাবে। বিজেপি কোনও দিন জিতবে না।’‌

দলত্যাগী:‌ মমতার কড়া বার্তা, ‘‌যাঁরা এদিক ওদিক যেতে চায় যেতে দাও। যাঁরা ভোগী, তাঁরাই দল ছেড়ে যাচ্ছেন। যাঁরা যাবেন, চলে যান। প্রকৃত তৃণমূল কর্মীরা কেউ ভোগী নন। তাই তাঁরা দল ছেড়ে যাবেন না। ভোটের পর সব লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে। যাঁরা বিজেপিতে গেছেন, তাঁদের লেজে যেদিন আগুন লাগবে সেদিন দেখবেন, আর একটা লঙ্কা কান্ড ঘটবে।’

চার্টার্ড বিমান:‌ শুভেন্দু–রাজীবদের দিল্লি যাওয়ার জন্য চার্টার্ড বিমান পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মমতা সেই নিয়ে বললেন, ‘‌তৃণমূলে যারা বদমাইশি করেছে তাদের নিয়ে যাচ্ছে জেট প্লেনে। আর পরিযায়ী শ্রমিক এল পায়ে হেঁটে।’‌

বাজেট: এদিনও নিজের স্বকীয় ভঙ্গিতে‌ কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন মমতা। রাজ্যে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। সেই প্রসঙ্গও তুলে বললেন, ‘‌বাংলায় ৮৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা করেছি। এখন বলছে ৬৫০ কিমি রাস্তা করবে। আপনি আসুন একটু হাঁটি হাঁটি পা পা করে যান।’ তিনি এও বললেন,‌ ‘‌কেন্দ্রীয় সরকার যে বাজেট করেছে, সেটা জনবিরোধী। কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেলে সেস বাড়িয়ে দিয়েছে। ৮ দফা তেলের দাম বাড়িয়েছে। আরও বাড়াবে। বিজেপি আম জনতার পার্টি নয়। বড়লোকদের পার্টি।’‌

প্রতিশ্রুতি:‌ মমতার দাবি, ‘‌বাংলায় কোনও বিভেদ নেই। পাহাড়ের জনজাতি, আদিবাসী, সবাই আমরা এক হয়ে এখানে কাজ করি। তৃণমূল সরকার গড়লে আপনারা বিনা পয়সায় রেশন পাবেন, শিক্ষা পাবেন, চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন, বেতন বাড়বে। জীবনযাত্রা আরও উন্নত হবে। কিন্তু বিজেপি শুধু মিথ্যে কথা বলে। ভোটের পরে পালিয়ে যায়।’

উল্লেখ্য, একুশের ভোটযুদ্ধের মুখে একের পর এক তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদরা দল বদলে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। গত বছরের শেষলগ্নে দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল হাতে তুলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দলবদলের পরই সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া, উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, ডায়মন্ডহারবারের বিধায়ক দীপক হালদাররা। নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছাড়ার যে হিড়িক পড়েছে, তাতে ঘর রক্ষা করে ভোটবাক্সের লড়াই এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এই প্রেক্ষিতে দলত্যাগীর যে ভাষায় টার্গেট করলেন মমতা, তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগেও দলত্যাগীদের নিশানা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কয়েকদিন আগে এক জনসভায় মমতা বলেছিলেন, ‘এরপর আর তৃণমূলে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনাদের নেব না। তোমাদের মতো চোরকে নেব না।’ দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশ্ন, ‘তৃণমূল টিকিট দেবে না। তাই ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কেন টিকিট দেব?’

আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টার্গেট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি দলটা লোভে ভরে গিয়েছে। পচে গিয়েছে অশান্তি করে। চা বাগান খুলে দেবে বলেছিল, করেছে? মিথ্যা কথা বলছে সব। সব বিক্রি করে দিচ্ছে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ছে, কৃষকরা মারা যাচ্ছেন। আর যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁদের জেট বিমানে করে নিয়ে যাচ্ছেন মোদীজি! আমরা চাই উন্নয়ন, ওঁরা চান বিসর্জন’।

রাজ্য সরকারের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মমতা। সেই সঙ্গে বিজেপি-কে বিদায় জানানোর আওয়াজও তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

Previous articleএকুশের ভোটে মোদীর প্রথম জনসভা রবিবারই,প্রধানমন্ত্রীর আগে ও পরে রাজ্য সফরে নড্ডা-শাহ
Next articleবনগাঁর কালিতলায় মুরগি চুরি রুখতে গিয়ে খুন নিরাপত্তা কর্মী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here