অর্পিতা দে,কলকাতা:
কবিগুরুর নানান বয়সের চিত্র ধরা আছে তার সংগ্রহে৷যখন কবি বাল্মীকি প্রতিভা লিখেছেন, কিংবা সদ্য বিদেশ থেকে ফিরেছেন, অথবা সদ্য পিতৃহারা রবি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বৃদ্ধ কবি দোয়াত কলম নিয়ে ছবি আঁকায় ব্যস্ত, কিংবা শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পথে কবি ট্রেনে বসে আছেন তার সামনের টেবিলে রাখা আছে এক পেয়ালা চা, নন্দলাল বসুর হাতে আঁকা কবির পোর্ট্রেট, কিংবা কবির একদম শেষ বয়সের ছবি; শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি৷ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এইসব দুর্লভ ছবির সংগ্রহ নিয়ে প্রতি বছর কবির জন্মদিনে ২৫ শে বৈশাখের দিন ভোর থেকেই জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির পশ্চিম ফটকে বসতে দেখা যায় এক প্রৌঢ়কে৷ কবির প্রেমে পাগল, প্রায় ৩৪ বছর ধরে প্রতিবছর তিনি আসেন এই দিনে, এই একই জায়গায় কবির নানা দুর্লভ ছবির সম্ভার নিয়ে৷ পোস্টকার্ড সাইজ থেকে ৬-৭ ফুট এর সব রকম সাইজের ছবি মিলবে তার কাছে, আর দাম ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৪২ হাজার পর্যন্ত| উদ্দেশ্য শুধু ছবি বিক্রি নয়, মানুষকে কবির এইসকল দুর্লভ মুহূর্তের সঙ্গে পরিচয় করানোও৷ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ২৫ শে বৈশাখের অনুষ্ঠানে স্টেজে রাখা হয় তারই সংগ্রহের ছবি৷ জোড়াসাঁকো তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেও দেখা যায় স্বপনদার সংগৃহিত কবির দোয়াত কলম নিয়ে বসে ছবি আঁকার মুহূর্তটি। জোড়াসাঁকোতে আশা বহু বিখ্যাত মানুষ, লেখক, অধ্যাপক ছবি কিনে নিয়ে যান সেইদিন তার কাছ থেকে৷
তিনি আর কেউ নন উত্তর কলকাতার বিধান সরণীর সকলের প্রিয় স্বপন দা ওরফে স্বপন চক্রবর্তী; স্কটিশ চার্চ স্কুলের অনতি দূরেই ট্রাম লাইনের ধারে তার পৈতৃক ব্যবসা; সেই ১১ বছর বয়স থেকে দাদুর কাছে হাতে খড়ি ছবি বাঁধাইয়ের, তিন পুরুষের ব্যবসার বয়সও একশোর বেশি৷ বর্তমান চতুর্থ পুরুষ নিজের ছেলে অমিত কেও যুক্ত করেছেন এই কাজে, বেড়েছে ব্যবসার দায়িত্বও; এখন শুধু একটাই খেদ, আর কি কখনোও বসতে পারবেন ২৫শে বৈশাখের দিন জোড়াসাঁকোর ওই পশ্চিম ফটকের বাইরে, বছর তিনেক হলো আসছে নানারকম পারিপার্শিক বাঁধা৷ এবছর বোধয় আর সেই দুর্লভ ছবির সম্ভার চোখে পড়বে না কবির বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা পথ চলতি মানুষের৷ তবুও স্বপ্ন দেখা ছাড়তে রাজি নন স্বপন দা৷ “যাবো একবার যদি ওরা বসতে দেয়;” নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলে গেলেন কবির আরো একটা নতুন ছবি ফ্রেমবন্দি করার সময়।