মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল সংঘাত এবার চিঠিতে

0
354

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় সাংবিধানিক সংকট কি ক্রমশই অনিবার্য হয়ে উঠছে? সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় পরস্পরকে যে ভাষায় চিঠি লিখলেন, তার পর সেই আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বাংলায় যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে তা নিয়ে বিশদে জানতে সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিরেক্টরকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাজ্যপালের সেই তলব তোয়াক্কা করেননি প্রশাসন ও পুলিশের এই দুই শীর্ষকর্তা। তাতে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল এর পর কাল মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে রাজভবনে তলব করে নবান্নে চিঠি পাঠান। তিনি কাল রাজভবনে যাবেন কিনা তার স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে এর পর রাজ্যপালকে কড়া ভাষায় জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেই চিঠির পাল্টা উত্তর দেন রাজ্যপাল। এবং দু’জনেই সেই চিঠি প্রকাশ করেও দেন।

চিঠিতে কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?

রাজ্যপালকে লেখা সংক্ষিপ্ত চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের সিনিয়র অফিসারদের সমালোচনা করে আপনি ঘন ঘন যে সাংবাদিক বৈঠক করছেন ও টুইট করছেন, তা দেখে আমি খুবই মর্মাহত। আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন যে গোটা দেশে যে পরিস্থিতি চলছে তার নিরিখে রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাটাই এখন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য”।

এর পরেই রাজ্যপালকে খোঁচা দিয়ে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমি মনে করি শান্তি ও সদ্ভাবের পরিবেশ বজায় রাখতে রাজ্য সরকারের পাশে থাকাটাই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা, বিশেষ করে যারা শৃঙ্খলার পরিবেশকে নষ্ট করতে চাইছে তাদের উস্কানি না দেওয়াটাই কর্তব্য। দয়া করে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করুন।”

মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির শেষ লাইনের বার্তা পরিষ্কার। অনেকের মতে, মমতা বোঝাতে চেয়েছেন রাজ্যপাল আসলে উস্কানি দেওয়ার কাজটাই করছেন।
নবান্নের ওই চিঠি পাওয়ার পর রাজ্যপালও জবাব দিতে আধ ঘন্টার বেশি সময় নেননি। চিঠিতে তিনি লেখেন, “আপনার চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে যেভাবে আপনি তির্যক উক্তি করেছেন তা পড়ে আমি বিস্মিত শুধু নই, প্রচণ্ড মর্মাহতও হয়েছি। আপনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই তাই অনুরোধ করছি আপনি আত্মসমীক্ষা করুন।”


চিঠিতে রাজ্যপাল আরও লিখেছেন, “আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে আমি সুচিন্তিতভাবে কিছু পদক্ষেপ করেছি। শান্তি, সদ্ভাব ও আইনের শাসন যাতে বজায় থাকে সেজন্য বহুবার সাধারণ ও সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি”।

এর পরেই চিঠিতে তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যপাল। তিনি লিখেছেন, “রাজ্যপাল পদে এই কম সময়ের মধ্যে আপনার মন্ত্রীরা আমার সম্পর্কে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে ভরিয়ে দিয়েছে। আমার অমর্যাদা করেছেন। আমার সাংবিধানিক পদের গুরুত্বও ভুলে যাওয়া হয়েছে। সেই বিষয় এবং সংবিধানের ১৬৬ ও ১৬৭ ধারার অমর্যাদা করার ঘটনা নিয়ে আপনারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, কিন্তু কোনও জবাব পাইনি। এমনকি চলতি সংকটের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কোনও স্তরের কেউই ( পড়ুন কোনও আমলা বা পুলিশ কর্তা) আমাকে বিশদে কিছু জানাননি”।

সবশেষে রাজ্যপাল লিখেছেন, “যাই হোক সেই সব কথা নিয়ে এখন আর ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাইনা। বরং জনস্বার্থে দু’জনে মিলে সমন্বয় করে চলে চলতি হিংসার পরিস্থিতি থেকে মানুষকে রেহাই দিয়ে শান্তি কায়েম করা উচিত বলেই মনে করছি। এবং আগামী কালের মিটিংয়ের ব্যাপারে আপনার থেকে ইতিবাচক জবাব আশা করছি”।
অর্থাৎ এত কিছু পরেও রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে কাল মঙ্গলবার রাজভবনে মমতাকে তলব করেছেন তিনি। সে বিষয়ে এখনও কোনও জবাব কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দেননি।
ফলে এই চিঠি ঠোকাঠুকিতেই সংঘাত আপাতত শেষ হল বলে অনেকেই মনে করছেন না। বরং কাল পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Previous articleবনগাঁয় ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির জন্য জমির ব্যবস্থা করছে মমতার সরকার,তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান বিমান বসু:
Next articleআজ ফের প্রতিজ্ঞার মিছিলে মমতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here