দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে বাংলার ক্ষমতা থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই হাতে। বিজেপি-কে রুখে দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ে বড়সড় স্বস্তি মিললেও জয়ের মুকুটে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নন্দীগ্রামের ফলাফল। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষমেশ নন্দীগ্রামে একদা সৈনিক শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই সূত্রেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নন্দীগ্রামে পরাজয় সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কি ফের শপথ নিতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
সাংবিধানিকভাবে দেখতে গেলে, পরাজয় সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন মমতা। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত না হয়েও যে কোনও ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমনকী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে, সেই ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হতে হবে। এক্ষেত্রে, তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথের ছয় মাসের মধ্যে ফের ভোটে লড়ে নির্বাচিত হতে হবে মমতাকে।
এমন উদাহরণ অবশ্য দেশে অনেক রয়েছে। ২০১১ সালে যখন বাংলায় পরিবর্তন ঘটে, সে সময় বিধায়ক ছিলেন না মমতা। বিধায়ক পদ ছাড়াই বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেছিলেন মমতা। পরে নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন তিনি। বঙ্গ রাজনীতির বাইরে বেরোলে এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। সম্প্রতি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত না হয়েই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিরথ সিং রাওয়াত।
অন্যদিকে, দল জিতেছে কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হেরে গিয়েছেন, দেশে এমন উদাহরণও নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সালে হিমাচলপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও হেরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেম কুমার ধুমাল। পরে জয়রাম ঠাকুরকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি৷
১৯৫২ সালে দেশে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন হয়। সে সময় মহারাষ্ট্র ও গুজরাট মিলিয়ে ছিল স্টেট অফ বম্বে। সে সময় বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন মোরারাজি দেশাই। কিন্তু, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ওই বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সি রাজাগোপালাচারি। তিনি দেশে শেষ গভর্নর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ছিলেন। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উপনির্বাচনেও লড়েননি তিনি। মাদ্রাজ চেম্বার্স অফ কমার্সের কোটায় তিনি বিধান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উপনির্বাচনেও যদি হারেন মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কী হবে?
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উপনির্বাচনে হেরে গিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে দেশে। ১৯৭০ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভুবন নারায়ণ সিং উপনির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন উপনির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। চাপে পড়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছিলেন। ঝাড়খণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল।