ভাইরাসের আশঙ্কা: যশোর রোডে আটকে রয়েছে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষৎ

0
622

দেশের সময়,বনগাঁ : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আটকা পড়ে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ট্রাক কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে পেট্রাপোল-বেনাপোল অঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের ২,৩০০ টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধের কারণে৷ এবং করোনা ভাইরাসের আশঙ্কার কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রীপরিবহন এবং চলাচলের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে দীর্ঘদিন ধরেই৷

পেট্রাপোল শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানাগিয়েছে যে ২,১০৩ টি ট্রাক – বেশিরভাগই পণ্যবোঝাই – ভারী স্টক আনলোডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ভারতের পার্কিং জোনে দাঁড়িয়ে আছে, ২২৮ টি ট্রাক বাংলাদেশের বেনাপোলে আটকা পড়ে আছে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত পেট্রাপোল হ’ল এশিয়ার বৃহত্তম ভূমি শুল্ক বন্দর এবং ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের বেশিরভাগ অংশ এই বন্দর দিয়ে সম্পূর্ণ হয়৷

গত বছর বাংলাদেশে রফতানি ছিল ২ ৯.২১ বিলিয়ন ডলার, তখন সেই ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি দাঁড়িয়েছে ১.২২ বিলিয়ন ডলার, প্রায় ৫০০ ট্রাক দৈনিক ভিত্তিতে পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল চলাচল করত।

এছাড়া রেল পথে বাণিজ্য চলে দূদেশের মধ্যে৷ উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা শাসক চৈতালী চক্রবর্তী দেশের সময় কে বলেন বাণিজ্য হচ্ছে এবং পেট্রাপোল-বেনাপোল রুট ধরে ট্রেন চলাচল চলছে। 

স্থানীয় প্রশান সূত্রে জানাগিয়েছে যে, ভারতের ২৩১টি ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে (সুসংহত চেকপোস্টের দিকে, পেট্রাপোলের দিকে) স্থানীয় পৌর সংস্থার পরিচালিত একটি পার্কিং এ আরও ৫৭২ টি ট্রাক পার্ক করা আছে; এবং প্রায় ১,৩oo টি লোডিং-আনলোড লোডিং এর কাজের জন্য দাঁড়িয়ে আছে৷ এছাড়াও সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন প্রাইভেট পার্কিংগুলিতে পার্ক করা আছে। এদিকে, বেনাপোলের দিকে, ১৩৮ টি ট্রাকে লোডিং-আনলোডিং এর কাজ শুরু করা হয়েছিল, তবে তারা এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। আরও ৯০ টি ট্রাকের ক্ষেত্রে, আনলোডিং এর কাজ করা এখনও শুরু হয়নি।  

বাংলায় লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে ২৩ শে মার্চ পেট্রপোল দিয়ে ট্রাক চলাচল প্রথম বন্ধ হয়। এরপরে, কেন্দ্র সরকার একটি লকডাউন ঘোষণা করেছিল যা ২৫ শে মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল থেকে ৪ মে এর মধ্যে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হয়েছিল, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যেখানে ‘জিরো পয়েন্ট’ রয়েছে সেখানে লোডিং-আনলোডিং এর কাজ চালু হয়। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক সমস্যার পরে ট্রাক চলাচল ফের বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ এপ্রিল, ভুট্টার বীজ এবং পাট বহনকারী দুটি গাড়িকে শূন্য পয়েন্ট পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরের দিন, ১ মে, ছুটি ছিল। ২ মে, প্রায় ১৩ টি গাড়ি বেনাপোলে চলে গেছে। এর একদিন পরে, তৃণমূল কংগ্রেস-সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়ন, যা বেশিরভাগ শ্রমিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের সদস্যদের স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ জানিয়ে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে, এর ফলে ট্রাক চলাচল স্থগিত হয়।

“এপ্রিল-শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী বা পিপিইগুলির (প্রাইভেট প্রোটেকটিভ গিয়ার) প্রাপ্যতার মতো বিষয়গুলি উঠে আসে। তদুপরি, বেশিরভাগ শ্রমিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টরা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন রকম বীমা কভারেজ পান না। স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার উদ্বেগ বাড়ার সাথে সাথে ট্রাক চালকরাও এই অবস্থায় কাজ করা বন্ধ করেদেয়৷ তাতেই সম্পূর্ণ ভাবে ব্যাহত হয় আমদানি রফতানির কাজ।

”পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস’ স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কার্তিক চক্রবর্তী বলেন। 
স্থানীয় মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে আমারা পণ্যপরিবহন চালু করতে সক্ষম নই,এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যৌথ সহযোগিতার প্রয়োজন। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যম কে জানিয়েছেন সীমান্ত বাণিজ্য চালু হবে খুব শীঘ্রই, আপাতত রেল পথ খোলা রয়েছে ,এখন দেখার সড়ক পথে কবে চালু হয় সীমান্ত বাণিজ্য৷

বিকল্প সমাধান পশ্চিমবঙ্গকে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে আন্তঃ-স্থলসীমান্ত সীমান্ত পরিবহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য ২৪ এপ্রিলের আদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (এমএইচএ) বলেছে যে রাজ্য এখনও কোনও কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দায়ের করতে পারেনি।  
এমএইচএ লিখেছিল: “একতরফা পদক্ষেপ … প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রস ল্যান্ড সীমান্ত চলাচল বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের আইনানুগভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত বৃহত্তর প্রভাব পড়বে …” পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যে প্রস্তাব করেছে যে নদীয়া জেলা (গেদে-দর্শনা রুট) দিয়ে একটি ট্রেন রুট বাংলাদেশে ও যানবাহনের প্রয়োজনীয় পরিবহনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হোক। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার অন্যান্য উপলব্ধ ট্রেনের রাস্তা হ’ল রাধিকাপুর-বিরল এবং সিংহবাদ-রোহনপুর। নেপাল এবং ভুটানের সাথে বাণিজ্যের জন্য, বাণিজ্য পয়েন্টগুলির মধ্যে (বাংলার মধ্য দিয়ে) পানিটানকি এবং জয়গাঁও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

প্রসঙ্গত স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ” করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে বনগাঁ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং সংলগ্ন বাজারহাটে প্রশাসনের তরফে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। গত রবিবার থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোর রোড, চাকদারোড ও বাগদা রোড কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায়। এর ফলে ট বাজার নিউমার্কেট, রেলবাজার,  নেতাজি মার্কেট, চাঁপাবেড়িয়া বাজার বন্ধ।

সীমান্ত বাণিজ্যের সাথে যুক্ত অধিকাংশ ব্যাবসায়ীদের কথায়,বনগাঁ শহরকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করায় যশোর রোড,সহ বাগদা, চাকদা রোড অবরুদ্ধ রয়েছে৷ফলে এই পথে কবে শুরু হবে যান চলাচল তা এখন স্থানীয় প্রশাসন ছাড়া কেউ জানেন না, তাই বলাই যায় জাতীয় সড়ক যশোর রোডেই আটকে পড়েছে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষৎ। কারণ এটাই কলকাতা থেকে পেট্রাপোল স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে যাতায়াতের প্রধান সড়ক।আর সেটাই সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ বনগাঁ শহরে৷ব্যাবসায়ীদের মন্তব্য স্বাস্থ্য সচেতনতা অপরিহার্য,তবে যশোর রোড অবরুদ্ধ করে সাময়িক রাজনৈতিক লাভের কারণে দীর্ঘ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ল সীমান্ত বাণিজ্য সঙ্গে বহু মানুষ হারালো তাঁদের রুজি-রুটি৷

Previous articleফের উত্তরপ্রদেশে পথ দুর্ঘটনার মৃত্যু ২৪ পরিযায়ী শ্রমিকের, পশ্চিমবঙ্গ-বিহার-ঝাড়খণ্ডে ফিরছিলেন তাঁরা
Next articleTrucks held up at Petrapole for no reason 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here