দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃবুধবার বিকেলে রাজ্য বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পরই তাঁকে চাঁচাছোলা ভাবে সমালোচনা করলেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
শুভেন্দু যে দলের কাজকর্মে অসন্তুষ্ট সেটা আন্দাজ করার পর সৌগতবাবুকে তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সৌগত রায় বলেন, “শুভেন্দু পার্টির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিল, সব মিটে গেছে। পরের দিন টেক্সট করে বলল, একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।” তাঁর কথায়, তার পর আমরাও মনস্থির করে ফেলেছিলাম, ওকে আর বোঝানোর চেষ্টা করা হবে না।
সৌগতবাবু এদিন আরও বলেন, “বিজেপির সঙ্গে ওর বোঝাপড়া হয়েছে। বিজেপি কী ডিল করেছে, কী দর কষাকষি হয়েছে তা বলতে পারব না। কেউ যদি তিনটে গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব পেয়েও সন্তুষ্ট না হন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা রাখেন তাহলে কিছু বলার নেই”। তাঁর কথায়, “আদর্শ নয়। এসব আসলে পদের জন্য দরাদরি। বিজেপির কাছে পদ পাওয়ার আশ্বাস পেয়েই শুভেন্দু গেছে। দেখুক বিজেপি ওকে কী দিতে পারে। পার্টি পার্টির মতো চলবে।”
সৌগতবাবুর এই প্রতিক্রিয়া শুনে এদিন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “সৌগতবাবু একদিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রতীকে তিনি সাংসদ হয়েছিলেন, কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। সে দিন কীসের প্রত্যাশায় তিনি কংগ্রেস ছেড়েছিলেন? সেদিন তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কী ডিল হয়েছিল? সেদিন তা হলে উনি ব্যক্তি স্বার্থেই দল ছেড়েছিলেন বুঝতে হবে।”
এদিকে, তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরক্ষণেই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে চিঠি লিখলেন শুভেন্দু অধিকারী।
রাজ্যপালের কাছে তাঁর আবেদন, তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে যেন এটা নিশ্চিত করেন যে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বা তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা না করে।
বাংলায় রাজনৈতিক বিরোধীদের মিথ্যা মামলা ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ভূরিভূরি। আবদুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরী, দিলীপ ঘোষ—এঁরা প্রত্যেকেই অন্তত এক হাজার বার করে সেই অভিযোগ করেছেন। যে মুকুল রায় এক সময়ে তৃণমূলের অলিখিত ‘নম্বর টু’ ছিলেন, তিনিই এখন অভিযোগ করেন বাংলায় পুলিশ রাজ চলছে। পুলিশ দিয়ে দল চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে অন্তত চল্লিশ খানা ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। এমনকি সদ্য কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের ঘটনায়, মুকুল রায়কে অভিযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়েছে।
রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে শুভেন্দু বলেছেন, “মানুষের কল্যাণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করেই আমি মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এখন আমি জানতে পারছি, যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা আমার এই অবস্থানের জন্যই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে পারেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে পুলিশকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হতে পারে।”
তাঁর কথায়, “রাজ্যের ক্ষমতাশীল দলের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলা নিশ্চয়ই কারও মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পূর্ব শর্ত হতে পারে না।” শুভেন্দু চিঠিতে লিখেছেন, “এই কারণেই এক প্রকার বাধ্য হয়ে আপনার হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
শুভেন্দুর এই চিঠি নিয়ে শাসক দলের কেউ এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, একদম উচিত কাজ করেছেন শুভেন্দু। শুভেন্দু সঠিক বুঝেছেন যে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হতে পারে। কারণ বর্তমান জমানায় সেটাই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। ফলে তিনি ছাড়া আর কার হস্তক্ষেপ চাইতে পারতেন শুভেন্দু।