দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশ,ওড়িশা,রাজস্থানের মতো বাংলাতেও বাজি নিষিদ্ধ করা হল। বৃহস্পতিবার, রাজ্যে কালীপুজোর মরসুমে যাবতীয় উৎসবে সব রকম বাজির কেনাবেচা নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কালী পুজো,জগদ্ধাত্রী পুজো এবং কার্তিক পুজোর মন্ডপে দুর্গাপুজোর মতোই ‘নো-এন্ট্রি’ জারি করল ডিভিশন বেঞ্চ।
করোনা আবহে বাজি-মুক্ত কালীপুজোর জন্য লাগাতার প্রচরা শুরু হলে সাধারণ মানুষে তাতে কতটা সচেতন হবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিলই। সেই জন্যই শব্দবাজির সঙগে আতসবাজিও কীভাবে বন্ধ করা যায়, তার চূড়ান্ত নির্দেশের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট ও পরিবেশ আদালতের নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে ছিল রাজ্য সরকার।
উত্সব মরসুমে কালীপুজো, দিওয়ালি ও ছট পুজোয় সার্বিকভাবে বাজি বন্ধের জন্য হাইকোর্টে মামলা করে রাজ্যের পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশ আদালতে মামলায় দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে ৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করার আর্জি জানানো হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করল কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। পরিবেশ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, কালীপুজো থেকে ছট পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে না। বিক্রিও করা যাবে না বাজি।
এদিন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়টি পুলিশকে দেখতে হবে। দুর্গাপুজোয় মণ্ডপগুলি যেমন নো এন্ট্রি জোন করা হয়েছিল, তেমনই কালীপুজোর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে।
এদিন আদালত বলেছে, ৩০০ বর্গ মিটারের ছোট মণ্ডপের পাঁচ মিটার দূরে থাকবে নো এন্ট্রি বোর্ড। সর্বাধিক ১০ জন মণ্ডপের ভিতর থাকতে পারবেন। ৩০০ বর্গ মিটারের চেয়ে বড় মণ্ডপে একসঙ্গে ৪৫ জনের থাকার অনুমতি দিয়েছে আদালত। ঢাকিরা এই দূরত্বের মধ্যে থেকেই ঢাক বাজাতে পারবেন।
এ রাজ্যে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই সব রকম বাজি বন্ধে চিঠি দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে। তাঁদের আশঙ্কা, করোনাকালে বাজি পোড়ানো হলে বায়ুদূষণের হার বেড়ে সংক্রমণও অনেক বেড়ে যাবে।
দিল্লি-সহ চার রাজ্যে বাজি বন্ধের মামলার আর্জিতেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এখন রাজধানীতে যেখানে দৈনিক পাঁচ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, বাজির দূষণে তা তিনগুণ বাড়তে পারে। বাড়বে মৃত্যুর হারও।
চলতি সপ্তাহেই দীপাবলির দিন করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আগেই আতসবাজি পোড়ানো ও বিক্রির উপর ব্যান করে দিয়েছে রাজস্থান। উত্সবের মরসুমে গ্রিন আসতবাজির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ছাড় দিয়েছে দিল্লিও। চিকিত্সকদের কথায়, আতসবাজির পোড়ানোর পর বাতাসে যে দূষণ ছড়ায় তা যে কোনও মানুষের পক্ষেই ক্ষতিকর। তবে দেশে যে হারে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে বেশ উদ্বিগ্ন চিকিত্সকমহল। দিওয়ালিতে আতসবাজি পোড়ানোর জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন করোনার রোগীরা।
প্রসঙ্গত, করোনাকালে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দর্শকশূন্য করার রায় কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছিল তাঁর করা মামলাতেই। এ বার কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ও ছটপুজোয় ভিড় ঠেকাতে সেই মামলাকারীই ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
তবে শুধু ভিড় নয়, করোনা পরিস্থিতিতে বাজির ধোঁয়ার দূষণ ঠেকাতেও এই তিনটি পুজোয় সব রকম বাজি পোড়ানোর উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে তিনি আবেদন জানিয়েছেন। তালিকায় রয়েছে বড়দিনও।
কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী ও কার্তিক পুজো-সহ সব পুজোতেই সব রকম বাজি বন্ধে জনস্বার্থ-আবেদনের শুনানি রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। তবে কালীপুজো ও শুধুমাত্র ছট পুজোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট রায় ঘোষণা হবে ১০ নভেম্বর। তার আগে জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই সংক্রান্ত রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করল হাইকোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্ট দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দর্শকশূন্য করার নির্দেশ দেওয়ায় রাস্তায়, প্যান্ডেলে এ বার ভিড় ছিল অনেক কম। দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে। তবে এখনও রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগের। একই সঙ্গে গোটা দেশে করোনা-সংক্রমণে বিপজ্জনক জায়গায় থাকা পাঁচ রাজ্যের অন্যতম বাংলা।
এই অবস্থায় আরও কিছু দিন সংক্রমণ এড়াতে করোনা-বিধি মানার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।