দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও। কিন্তু শুক্রবার তা নিয়েই ময়নাতদন্তে নেমে বৈঠকের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।
শুক্রবার তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের বৈঠকে ডাকছেন মানে বুঝতে হবে ‘বাংলায় হাতি কাদায় পড়েছে’। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, হাতি কাদায় পড়লে সহানুভূতি পাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তা পাচ্ছে না। কারণ, ইতিমধ্যে যে লণ্ডভণ্ড করেছে, তাতে উল্টে লোকজন বলতে শুরু করেছে, বেশ হয়েছে! তাই সেই হাতি এখন দলভারী করতে চাইছে। সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে লোক দেখানো কমিটি করে দেখাতে চাইছে, লণ্ডভণ্ডের দায় তার একার নয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার সর্বদল বৈঠকের পর শাসক দল প্রস্তাব দেয়, করোনা সংকটের মোকাবিলা ও আমপানের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের উপর নজর রাখতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। স্থির হয়, সেই কমিটির মাথায় থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কমিটিতে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
ওই কমিটি প্রসঙ্গে এদিন অধীরবাবু বলেন, এই ধরনের কমিটির কোনও মানে আছে? মুখ্যমন্ত্রী কাকদ্বীপে গিয়ে মিটিং করে হুঁশিয়ার করে আসছেন, ত্রাণের টাকা নিয়ে যেন অনিয়ম না হয়। সে কথাই দলের লোকেরা শুনছে না। লুঠ হয়ে যাচ্ছে সেই টাকা। আর পার্থবাবুর কথা কে কেয়ার করবে? প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, ব্যক্তিগত ভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আমার কোনও বিরোধিতা নেই।
কিন্তু শিক্ষা দফতর চালাতেই ওনার অপদার্থতা প্রতি পদে প্রকট হয়ে যাচ্ছে। ওনার নেতৃত্বে কমিটির কোনও বর্তমানই নেই তো ভবিষ্যৎ! আসলে এ হল, লোক দেখানো কমিটি। ত্রাণ নিয়ে এবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেই দায় বাকিদের উপরেও চাপানোর রাস্তা বের করা যাবে!
সর্বদল বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। অধীরবাবুর কথাতেই স্পষ্ট সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে তিনি নন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, একই ধরনের মত বিজেপিতেও রয়েছে। দিলীপ ঘোষ সর্বদল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের অনেকের মতে, ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া দিলীপবাবুর উচিত হয়নি।
কারণ, সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল মিলে ওই বৈঠকে কেন্দ্রের সমালোচনা করেছে, তা ওনাকে বসে শুনতে হয়েছে। আর উনি যে কথা শুনিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন, তা বাইরে খুব একটা প্রচার পায়নি।
অধীরবাবুর বক্তব্য, বাংলায় বিরোধীদের কোনওদিনই মর্যাদা দেয়নি তৃণমূল। বরং ছলে, বলে, প্রলোভন দেখিয়ে বিরোধী দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। পঞ্চায়েতে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি, মারধর করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছে—কিছুই বাদ যায়নি। আজ বিরোধীদের কথার দাম শাসকের কাছে এতো বেড়ে গেল যে বিস্ময় তো জাগবেই। তাঁর কথায়, হতে পারে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিকে রুখতে বাম, কংগ্রেস সবাইকে নিয়ে একটা দল পাকাতে চাইছে তৃণমূল।
এও হতে পারে, শাসক দলের সেই খেলায় কংগ্রেস বা সিপিএমের কেউ কেউ তলে তলে উৎসাহিত। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, নিজের আসনটা যদি বাঁচিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু বাস্তব হল, তৃণমূলের অপশাসন নিয়ে মানুষের মনে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে তাঁদের সঙ্গে কোনও আঁতাতে গেলে উল্টে আরও ভরাডুবি হবে। বিধানসভা ভোটে তাঁর মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে আপসের যে কোনও প্রশ্নই নেই তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীরবাবু। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমার লড়াই আপসহীন।
তৃণমূলের এক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, কংগ্রেসের বাংলায় কোনও অস্তিত্বই এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো কোন হতাশা থেকে অধীরবাবু এ সব কথা বলছেন।