বাংলার বিভিন্ন জেলার ঘরমুখী পরিযায়ী শ্রমিকের ঢল কি করোনা আবহ আরও জটিল করে তুলছে?

0
1008

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া ও আশোকনগরে নতুন করে এক সঙ্গে ২ জনের দেহে মিললো করোনা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ।হাবড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিমঙ্গল এলাকায় বছর ষাটের এক ব্যক্তি করোনা পজেটিভ হওয়ার খবর ছড়াতেই নতুন করে আতঙ্ক ছাড়ায় হাবড়াবাসীর মধ্যে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি লকডাউনের মধ্যেও বেলেঘাটা ফুলবাগানে নিজের দশকর্মার দোকানে যাতায়াত ছিল।

গত ২০ তারিখ জ্বর নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। তারপর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৩ তারিখ লালারস টেস্ট করতে দেওয়া হয়। বুধবার রাতে ওই ব্যক্তির রিপোর্টে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বারাসত করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি এবং এলাকায় সেনিটাইজ করা হয়।

পাশপাশি বাড়ির নয় জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে করোনা আক্রান্ত হলেন বছর পঁচিশ এর এক যুবক। ঘটনাটি অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার ২৩ ওয়ার্ডের বনবনিয়া নতুনপাড়া এলাকার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ তারিখ মুম্বই থেকে তিনি বাড়ি ফেরেন। ২৩ তারিখ হাবড়া হাসপাতালে তার লালা রস টেস্ট হয়। বুধবার তার খবর ওই যুবক করোনা পজেটিভ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ওই যুবক ও তার ভাই মুম্বইয়ের একটি হোটেলে কাজ করতেন।

দীর্ঘ দিন লকডাউনের কারণে তারা মুম্বইয়ে আটকে ছিলেন সম্প্রতি ওই যুবক অশোকনগরের বাড়ি ফেরেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আক্রান্ত যুবক নিজের বাড়িতেই গৃহবন্দি হয়ে আছেন। এই বিষয় নিয়ে অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভা পুর প্রশাসক প্রবোধ সরকার জানান স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। এই জেলার মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৫ নং গ্রাম সংসদের ল্যাম্ফ বাজার এলাকায় করোনা আক্রান্ত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজারহাটের করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর জানা গিয়েছ।চলতি মাসের ১৮ তারিখে মহারাষ্ট্র থেকে এ রাজ্যের মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন ৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা প্রত্যেকেই ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তাঁদের সকলেরই লালারস পরীক্ষা করা হয়।

মঙ্গলবার সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসলে দেখা যায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও বাকিদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই করোনা আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিককে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রাজারহাটের করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় । এলাকায় বসেছে পুলিশ পিকেট ।

বনগাঁ জয়পুর ফুলতলায় পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে পানীয় জল ,খাদ্য ,সামগ্রী দিচ্ছেন বাসিন্দারা।

বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা ব্লকেও শয়ে-শয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ঢুকছে৷বুধবার হায়দারাবাদ এবং মহারাষ্ট্র থেকে এসেছে বেশ কিছু শ্রমিক তাঁদেরকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই সঙ্গে অনেক কেই প্রশাসনের তরফে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হলেও ,সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই নিজের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইন এ রয়েছেন।বনগাঁ ফুলতলা কলোনীর এক বাসিন্দা ফিরেছেন মহারাষ্ট্র থেকে তাঁকে এবং তাঁর বাবা ,মা কেও স্থানীয় বাসিন্দারা গৃহবন্দি করে রেখেছেন, বাসিন্দাদের অভিযোগ মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে তাই কোন ভাবেই ত্রুটি রাখতে চাননা এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা মাথায় রেখে৷ওই পরিবারের খাদ্য খাবারের সমস্ত রকম ব্যাবস্থা নিয়েছেন বাসিন্দারাই।

কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পূর্ব বর্ধমানে। লকডাউন শিথিল হতেই রাস্তায় যানবাহনের দাপট বেড়েছে। দোকানপাট খুলতেই সেখানেও মানুষের ভিড় বাড়ছে। পাশাপাশি জেলায় প্রতিদিনই ঢুকছে পরিযায়ী শ্রমিকের দল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখার বদলে পরিযায়ী শ্রমিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে দায় সারছে প্রশাসন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আট জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে পূর্ব বর্ধমানে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরের বেলপুকুরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। রায়নার আলমপুরে একজন ও মেমারির বিজরায় দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ভাতারের কালিপাহাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গে ফেরা দু’বছরের এক শিশু রয়েছে বলে জানান তিনি। কালনাতেও তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের দুর্গাপরের বেসরকারি কোডিভ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলায় ঢুকতেই যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে রীতিমত আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। চিন্তার ভাঁজ জেলা প্রশাসনের কপালেও।

পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ভাবাচ্ছে নদিয়া জেলার প্রশাসনকেও। বুধবার নতুন করে জেলায় বারোজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী কৃষ্ণনগর এক নম্বর ব্লকে তিনজন, রানাঘাট দু নম্বর ব্লকের তিনজন, হাঁসখালি ব্লকের একজন, কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের একজন, হরিণঘাটা ব্লকের একজন, চাকদহ ব্লকের একজন এবং কালিগঞ্জ ব্লকের একজনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। রানাঘাট দুনম্বর ব্লকে যাঁদের করোনা ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক।

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা শুরু হতেই গ্রিন জোন পুরুলিয়াতেও এবার করোনার থাবা। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আদ্রায় পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারস পরীক্ষা করা হয়। তারপরেই জানা যায় এক শ্রমিক করোনা আক্রান্ত।মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসনের কাছে ওই রিপোর্ট আসার পর বুধবার সকালে বিষয়টি সরকারি ভাবে জানানো হয়।

গত ১৯ মে ওই শ্রমিক মহারাষ্ট্র থেকে ট্রাকে চেপে ঝাড়খণ্ড পৌঁছন। সেখান থেকে তিনি হাঁটা পথে জেলায় এসেছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর ১৯ মে তাঁর লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রিপোর্ট সন্দেহজনক হওয়ায় ফের ২৫ মে লালারস সংগ্রহ করে মেদিনীপুর পাঠানো হয়েছিল। ওই শ্রমিকের সংস্পর্শে আসা আরও তিনজনকে আপাতত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে।

Previous articleআগাম গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে পুলওয়ামার মতো হামলার চেষ্টা রুখে দিল সেনাবাহিনী, আটক করল বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি
Next articleআমপানে বিধ্বস্ত বাংলার পাশে শাহরুখ, অর্থ সাহায্য ছাড়াও নিলেন অনেক দায়িত্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here