দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বনগাঁ ব্লক এলাকায় লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। বিএমওএইচ জানান, সোমবার ও ব্লকে নতুন করে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২৩২ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ২ জন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ ব্লকের মধ্যে সব থেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন গাঁড়াপোতা পঞ্চায়েত এলাকায়। সোমবার ওই এলাকা পরিদর্শনে যান বিএমওএইচ। তাঁর কথায়, ‘‘গাঁড়াপোতা এলাকায় করোনায় প্রকোপ ছড়ালেও মানুষ সচেতন নন। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পড়ছেন না। বাজারহাট, দোকানে মানুষ শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখে চলছেন না। মানুষ সচেতন না হলে করোনার সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়।’’
করোনা পজ়িটিভ জানতে পেরে আতঙ্কে হাসপাতাল থেকে পালাচ্ছেন আক্রান্ত ব্যক্তি:
সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁর সুন্দরপুর ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে পঞ্চায়েত এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতায় তাঁকে খুঁজে বের করেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ ব্লকের ট্যাংরা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর ওই ব্যক্তি সোমবার সকালে সামান্য সর্দি নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন। চিকিৎসক তাঁকে দেখে করোনা হয়েছে বলে সন্দেহ করেন। হাসপাতালেই তাঁর র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়। আধঘণ্টার মধ্যে রিপোর্টে জানা যায়, তিনি করোনা আক্রাম্ত। তাঁকে সে কথা জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়।
কিছুসময় পরে খোঁজ করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখেন, ওই ব্যক্তি উধাও। হাসপাতাল চত্বর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। চিন্তায় পড়ে যান ব্লক স্বাস্থ্য দফতর কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে। করোনা পরীক্ষার আগে ওই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখে রেখেছিলেন। সেই মতো স্বাস্থ্যকর্মীদের খোঁজ শুরু করতে বলা হয়। খোঁজাখুঁজির পরে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বাড়িতেই লুকিয়ে রয়েছেন।
বনগাঁর বিএমওএইচ বলেন, ওই ব্যক্তির ধারনা হয়েছিল , তাঁকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হবে। এই ভয় থেকেই তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। আপাতত তাঁকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাঁর কোনও উপসর্গ নেই। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর লক্ষ্য রাখছেন।
করোনা নিয়ে ভীতির কারণেই এই ঘটনা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তবে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মত তাঁদের। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, পজ়িটিভ রিপোর্ট এলে কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা, পরিবারের উপর সামাজিক চাপ,এ সব ভাবনা -চিন্তা থেকে অনেকেই উপসর্গ নিয়েও করোনা পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে করোনা সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা ।
বনগাঁ শহরে করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেকেই হাসপাতালে যেতে চাইছেন না করোনা পরীক্ষার জন্য। ওষুধ নিতে এসেছিলেন এক যুবক। জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। স্বাদ-গন্ধ নেই। ওষুধ দোকানি তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। এক ওষুধ বিক্রেতা পার্থ কুণ্ডু বলেন, ‘‘হাসপাতালে যেতে বললে অনেকেই অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। বলছেন, আমার করোনা হবে না। হাসপাতালে যেতে কেউ কেউ ভয়ও পাচ্ছেন।’’
শহরের বাসিন্দারা জানান, ‘‘শহরের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। জ্বর, সর্দি-কাশি হলেও মানুষ লালারস পরীক্ষা করাচ্ছেন না। বাড়িতে থেকে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। লালারস পরীক্ষা করালে করোনা পজ়িটিভ হলে কোনও হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, পারিপার্শ্বিক চাপ এবং সামাজিক ভাবে বয়কট হওয়ার আশঙ্কা থেকে মানুষ উপসর্গ নিয়েও বাড়ি বসে থাকছেন। এর ফলে সংক্রমণ আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’’
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শহরের সম্পাদক আশিসকান্তি হীরা বলেন, ‘‘ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে এমন করছেন। তাঁরা মনে করছেন, করোনা পজ়িটিভ হলে কোথাও ধরে নিয়ে যাবে। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে না। তবে তাঁদের বোঝা দরকার, অন্তত পরিবারের লোকজনকে রক্ষা করতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। এতে মৃত্যুর হার কমবে। চিকিৎসা দেরি করে শুরু করলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ উপসর্গ থাকলে লালারস পরীক্ষা করতে হবে সময় থাকতে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো জানান, রোজ হাসপাতালে কম করে ১০০ জনের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। লালারস এবং র্যা পিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে তা করা হচ্ছে। উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা বহির্বিভাগে এলে তাঁরও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ দিকে, বনগাঁ শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে অনেক দিন আগেই। নিয়মিত ভাবে এখানে মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এত কিছুর পরেও কিছু মানুষ সচেতন নন। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন,মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। শরীরের তাপমাত্রা মাপছেন। কেউ অসুস্থ থাকলে লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত পরিবারের লোকজনকে বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে।
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, পুলিশ,প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য,সব বিভাগের কর্মীরা সমস্ত রকম পরিষেবা দিচ্ছেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্য লড়ছেন তাঁরা, কিন্তু করোনা নিয়ে যে আতঙ্কের ভূত তাড়া করে বেড়াচ্ছে মানুষকে,সেই ভূত তাড়াতে হবে, আরও বেশি ভাবে সচেতন করতে নতুন কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে৷যাতে দ্রুত করোনা আতষ্ক থেকে মানুষকে বাঁচানো যায়৷