মদন মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর: রাস উৎসব কে ঘিরে মেতে উঠেছে সারা রাজ্যর পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। তার মধ্যে বিখ্যাত পটাশপুরের পঁচেটগড়ের রাস উৎসব। প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো পঁচেটগড় রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহি এই রাস উৎসব। ইতিহাস বলছে, একসময় ঐ রাস উৎসবের জাঁকজমক দুর্গোৎসবের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। দেখুন ভিডিও:
করোনার কোপে গত বছর রাস উৎসব পালিত না হলেও বর্তমান সময়ে করোনার গ্রাফ গতবছরের তুলনায় নিম্নমুখী হওয়ায় নানান বিধি নিষেধ মেনে পালিত হতে চলেছে ষোড়শ শতাব্দী প্রাচীন পঁচেট গড় জমিদার বাড়ির রাস উৎসব। উৎসব হলেও রয়েছে কতগুলো গাইডলাইন , করোনার কারনে জলসা ঘর এবারও মুখরিত হবে না মার্গ সঙ্গীতের সুরে। তবে করোনা বিধি মেনে মেলার আয়োজনে থাকছে লোকসঙ্গীত, বাউল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে নানান দেশি ও বিদেশি স্টল। মেলা থাকবে আর খাওয়া দাওয়া থাকবে না? তাই ভোজন রসিক বাঙালীর কথা মাথায় রেখেই রাস মেলায় থাকছে বহু আকর্ষণীয় খাবারের দোকান। চাইনিজ থেকে মোগলাই, বাদাম থেকে শুরু করে জিলাপি।
রাজপরিবারের বর্তমান বংশধরদের দাবি, ওড়িষ্যার আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাড়ির আদি পুরুষ কালামুরারি দাস মহাপাত্র। জগন্নাথ দেবের সামনে নিত্যদিন সঙ্গীত পরিবেশন করতেন তিনি। সেই সঙ্গীতেই মুগ্ধ হয়ে রাজা তাকে মন্দির পরিচালনা র দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্দিরের পাশে পেয়েছিলেন জমি। পরবর্তী সময় জাহাঙ্গীর এর নজরে পড়ে যান। তাকে বাংলা, বিহার ও তাম্রলিপ্ত বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেন মোঘল সম্রাট। কাজটি তিনি সূচারুভাবে করেন এবং পটাশপুর এলাকার খাঁড়ে বিশাল গড় নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে উদ্ধার হয় শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের চারপাশে বেনারস থেকে আনা আরো চারটি শিবলিঙ্গ বসানো হয় ।ঐ শিবলিঙ্গ দিয়েই কালামুরারি দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। ধিরে ধিরে পঞ্চেশ্বর নামটি প্রচার হতে থাকে। এখানেই তিনি তৈরি করেন পঁচেটগড় রাজবাড়ি। শ্রী চৈতন্যদেব যখন পটাশপুর হয়ে পুরী গিয়েছিলেন তখন জমিদার বাড়ির সদস্যরা শৈব থেকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন। পরে জমিদার বাড়ির কুলদেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন কিশোররাই জিউ। যাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কার্ত্তিক পূর্নিমা থেকে শুরু হয় রাস উৎসব।
অতীতে শুধুমাত্র জমিদার বাড়ির সদস্যরা রাস উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন। এখন এই উৎসব সবজনীন। নহবত, খোল-করতাল, মৃদঙ্গ, কাঁসর ঘণ্টা সহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহযোগে জমিদার বাড়ির মন্দির থেকে – কিশোররাই জিউ পঁচেট মেলার রাস মঞ্চে অধিষ্ঠিত হন।
রাস উৎসবে প্রতি সন্ধ্যায় কিশোররাই সহ কুড়িজন মহাপ্রভু বিগ্রহ মঞ্চে থাকেন। তবে রাতে ফের মূল মন্দিরে ফিরে আসেন কিশোররাই। আগামী ২৩ নভেম্বরে দধি উৎসবের দিন প্রতিবারের মতোই ভোর থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত রাস মঞ্চে থাকবেন কিশোররাই জিউ। মেলা শুর হলো ১৯ নভেম্বর চলবে ২৮ শে নভেম্বর পর্যন্ত। প্রশাসনের অনুমতিক্রমে দশদিনের মেলায় ভিড় আটকাতে পর্যাপ্ত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় গোটা মেলাচত্বরে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পঁচেট গড় রাজবাড়ির বাড়ির সদস্য তথা পঁচেট গড় দেবোত্তর সেবায়ত বোর্ডের সম্পাদক সুব্রত নন্দন দাস মহাপাত্র বলেন, “প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই করোনা বিধি মেনে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া হবে। মেলার নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। তবে করোনা বিধি মেনে এবারও বসছে না সঙ্গীতের আসর।”