প্রবীণরা কেন করোনার কোপে কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা, কীভাবে রাখবেন অভিভাবকদের জানুন

0
1833

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিশ্বজোড়া মহামারী নভেল করোনাভাইরাস। সংক্রামিত যেমন সদ্যোজাত, তেমনি সংক্রমণের শিকার যে কোনও বয়সের মানুষই। তবে পরিসংখ্যান যে বিপদের ইঙ্গিত দিয়েছে সেটা হল, কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুহার বেশি প্রবীণদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানাচ্ছে, ৫০ থেকে ৬৯ বছর, আবার ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বয়স যদি ৮৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে সারা শরীরেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, ষাটের বেশি বয়স মানেই কি কাবু করতে পারে করোনা? বিজ্ঞানীরা বোঝালেন, বয়স একটা কারণ বটে তবে আনুষঙ্গিক আরও কিছু কারণ রয়েছে যেটা যথেষ্টই উদ্বেগের বিষয়
দুর্বল শরীরের খোঁজে করোনা:

‘ট্রাভেল মেডিসিন’ জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপকৃগবেষক জেমস ডিয়াজ বলেছেন, বিটা-করোনাভাইরাসের স্ট্রেন সার্স-কভ-২ (SARS-COV-2) এমন শরীরের কোষকেই তার বাহক বানাচ্ছে যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তার উপর শরীরে নানারকম ক্রনিক বা অন্যান্য রোগ বাসা বেঁধে আছে। বিশেষত হার্টের যে কোনও রোগ, হাইপারটেনশন, উচ্চরক্তচাপ এবং ক্রনিক কিডনির রোগ থাকলে সেই ব্যক্তির উপরে কোভিড-১৯সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি ঘনঘন ধূমপান করেন, ফুসফুসের রোগ রয়েছে, হাঁপানি বা শ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রভাব প্রাণঘাতী হতে পারে। মোদ্দা কথা, যে শরীর আগে থেকেই দুর্বল, সেই শরীরেই নিজেদের পছন্দের বাহক বা Host Cell খুঁজে নিচ্ছে করোনার এই বিশেষ ভাইরাল স্ট্রেন। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ৭০-৮০ বছর বয়সীদের বেশিরভাগেরই কার্ডিওভাস্কুলার রোগ বা কিডনি, হাইপারটেশনের সমস্যা রয়েছে। কাজেই করোনার প্রভাব এই বয়সের লোকেদের উপরেই বেশি।

ডায়াবেটিসহাইপারটেনশন,কিডনির রোগ থাকলে সতর্ক থাকুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি-র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপারটেনশন ও করোনারি আর্টারির রোগ থাকলে অথবা হৃদরোগের রোগীর উপর ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব মারাত্মক। সেক্ষেত্রে রোগীদের অ্যাঞ্জিওটেনশন কনভার্টিং এনজাইমম ইনহিবিটর (ACEIs) ও অ্যাঞ্জিওটেনশন রিসেপটর ব্লকার্স (ARBs) দেওয়া হয়ে থাকে, যেগুলো কার্ডিওভাস্কুলার রোগের চিকিৎসায় লাগে। তবে ডায়াবেটিস বা ক্রনিক কিডনির রোগ থাকলে এবং ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে কোনও চিকিৎসাতেই তেমন কাজ হবে না।

মোহালির ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইআইএসইআর)-এর ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক-বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ভাইরাস যখন মানুষের শরীরে হানা দেয় তার একটা বাহক বা Receptor দরকার হয়। প্রতিটি ভাইরাসের আলাদা আলাদা রিসেপটর প্রোটিন (Receptor Protein) থাকে। যেমন সার্স (SERS) ভাইরাসের রিসেপটর প্রোটিন ছিল ACE-2 (angiotensin-converting enzyme 2) । মার্সের (MERS) ক্ষেত্রে এই বাহক DPP4 (dipeptidyl peptidase 4)। মনে করা হচ্ছে এই সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের রিসেপটরও ACE-2। এর স্পাইক প্রোটিনের (S) রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন নাড়াচাড়া করে দেখাগেছে ‘ক্রস স্পিসিস ট্রান্সমিশন’ (Cross species transmission) ঘটিয়ে এর ভাইরাল স্ট্রেইনগুলো (Strain) এক ধাক্কায় ফুসফুসের দফারফা করছে। এখন যে রোগী বেশি ধূমপান করেন, তাঁর ক্ষেত্রে ফুসফুসের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এর পরের স্টেজ নিউমোনিয়া, শ্বাসযন্ত্রের ক্ষমতা কমে যাওয়া, শেষে কিডনি-সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল এবং অন্তিম পরিণতি মৃত্যু।

বয়স্কদের ৮০% আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, কী বলছে হু-এর সমীক্ষা জানুন:

৫০-৬৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে-স্পেনে ৬,০৪৫ জন আক্রান্তের মধ্যে ২,১৬৬ জনই এই বয়সের রোগী। ৫০-৬৯ বছর বয়সী ৮৩ জন মারা গেছেন সম্প্রতি।

ইতালি, চিন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ০.৪-৩.৬% এই বয়সী রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

৭০ বছর বয়সী- স্পেনে ৭০ বছর ও তার উপরে প্রায় ৭০৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

ইতালি, চিন, কোরিয়ায় এই মৃত্যুহার ৬.২%-২০.২%।

সমীক্ষা বলছে, উহানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে যে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের অর্ধেকই ছিলেন হাইপারটেনশনের রোগী। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁরা আরও বেশি করে হাইপারটেনশনের শিকার হয়ে পড়েন। সত্তোরর্ধ্ব ব্যক্তি যারা সিগারেটে বেশি আসক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও হাইব্লাড প্রেশারের শিকার, ভাইরাসের সংক্রমণে তাঁদের মৃত্যুহার সব থেকে বেশি।

কীভাবে রাখবেন অভিভাবকদের

বয়স্কদের কীভাবে সামলে রাখা যাবে সেই নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই গাইডলাইন দিয়েছিল। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের নির্দেশিকাও তেমনটাই। কিছু সাধারণ নিয়ম মানলেই সুস্থ রাখা যাবে প্রবীণদের।

নিজের মধ্যে কোনও উপসর্গ টের পেলে বাড়ির বয়স্কদের সামনে যাওয়া ঠিক হবে না।

হাইপারটেনশন, হার্ট ও ডায়াবেটিসের রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার। উপসর্গ না থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভাল।

বাড়ির বয়স্ক অভিভাবকদের কাছে গেলে ১ মিটার দূরত্ব রাখা উচিত।

ভাল করে সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়েই হাত মেলানো বা গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হবে। প্রয়োজন হলে হাত মেলানো বা তাদের খুব কাছাকাছি যাওয়া এই সময় উচিত হবে না।

যতটা সম্ভব ঘরেই তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

মোবাইল, টিভি রিমোট বা অন্য দৈনন্দিন জিনিস এই সময় আলাদা রাখুন। বয়স্কদের জামাকাপড়ের সঙ্গে নিজেদের জামাকাপড় মেশাবেন না।

বয়স্ক অভিভাবকদের ঘর স্যানিটাইজ করে রাখা ভাল।

দরকার হলে তাদের বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখা ঠিক হবে। সংক্রামিত না হলেও।

Previous articleট্রেনের টিকিটের সম্পূর্ণ ভাড়াই ফেরত পাওয়া যাবে,ক্যানসেলের প্রয়োজন নেই জানাল রেল
Next articleচলে গেলেন ‘রে’সলেন্সম্যান’, শোকবার্তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here