দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২২ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত স্যাটেলাইট লেন্সে বন্দি হওয়া ছবি বলছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে নাকি ভারতীয় ভূখণ্ডের ১৩৭ মিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে চিন। কিন্তু বিজেপি-কংগ্রেসের বাকযুদ্ধে চিন যে ভারতীয় রাজনীতির আর কোথায় কোথায় ঢুকবে সেটাই এখন দেখার!
বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, চিনের অনুদান রয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে। তার পাল্টা রবিবার কংগ্রেস বলল, পিএম কেয়ারে রয়েছে চিনের টাকা। বাংলা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মানু সিঙভি অভিযোগ করলেন, একাধিক চিনা সংস্থা টাকা ঢেলেছে নরেন্দ্র মোদীর পিএম কেয়ারে। বর্ষীয়ান আইনজীবী আরও বলেছেন, এই জন্যই চিনের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা দুর্বলতা রয়েছে।
হুয়াওয়েই, অপ্পো, শাওমির মতো ডাকসাইটে চিনা কোম্পানি পিএম কেয়ার নামক বিতর্কিত তহবিলে টাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। যা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে অত্যন্ত উদ্বেগের বলে মনে করছে কংগ্রেস।
রবিবার বেশি রাত পর্যন্ত কংগ্রেসের এহেন অভিযোগ নিয়ে বিজেপি দলগত ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে গেরুয়া শিবিরের ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে চিনের টাকা ঢোকা আর মহামারী মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তৈরি করা তহবিলের অনুদান কখনওই এক বিষয় হতে পারে না। রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন মানে যা সনিয়া গান্ধী ও গান্ধী পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে।
সুপ্রিম কোর্টের দুঁদে আইনজীবী সিঙভি বলেন, “যা রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তাতে গত ২০ মে থেকে প্রধানমন্ত্রী ওই বিতর্কিত তহবিলে ৯ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা নিয়েছেন। যখন চিনা বাহিনী সীমানা পেরিয়ে আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে তখন প্রধানমন্ত্রী চিনা সংস্থার টাকা নিচ্ছেন।”
এখানেই থামেননি প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির উদ্দেশে আট খানা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জবাব দাবি করেছেন। কী কী সেই প্রশ্নগলি? এক, প্রধানমন্ত্রী কি বিতর্কিত চিনা সংস্থা হুয়াওয়েইর থেকে সাঁট কোটি টাকা নিয়েছেন? হুয়াওয়েইর সঙ্গে কি চিনা সেনাবাহিনীর কোনও সম্পর্ক রয়েছে ? চিনা সংস্থা টিকটক কি পিএম কেয়ারে ৩০ কোটি টাকা দিয়েছে? যে পেটিএমের ৩৮ শতাংশ শেয়ার চিনা দখলে, তারা কি ওই তহবিলে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে? ওই তহবিলে কি শাওমি ১৫ কোটি টাকা দিয়েছে? অপ্পোর এক কোটি টাকা সত্যিই পিএম কেয়ারে ঢুকেছে?
এটিকে ব্যক্তিগত তহবিল বলে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। সেইসঙ্গে অডিট এবং তথ্য জানার অধিকার আইনের বাইরে রাখায় পিএম কেয়ারের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সাবেক দল।
গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাতের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে ধারাবাহিক নিশানা করা শুরু করে। এমনকি তাঁকে ‘সারেণ্ডার মোদী’ বলেও কটাক্ষ করেন রাহুল গান্ধী। তা ছাড়া সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ‘কেউ আমাদের সীমানায় ঢোকেনি, আমাদের ভূখণ্ড দখল করে কেউ বসেও নেই’ মন্তব্য নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। যদিও পাল্টা বিজেপি বলতে শুরু করে, কংগ্রেস আসলে ইসলামাবাদ আর বেজিংকে উৎসাহ দিতে এসব কথা বলছে।
লাদাখে চিনা হামলা নিয়ে কংগ্রেস–বিজেপি কাজিয়া অব্যাহত। রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাদাখে যারা ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে নজর দিয়েছিল, তারা যোগ্য জবাব পেয়েছে। আর এই দিনই রাহুল প্রশ্ন তোলেন, দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিেয় কবে আলোচনা হবে? এএনআই–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এর জবাব দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সংসদে আলোচনা করতে তৈরি। আমরা আলোচনায় ভয় পাই না। তবে আলোচনা হোক ১৯৬২ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত।’
তাঁর অভিযোগ, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করছেন রাহুল গান্ধী। পাল্টা কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিংভির অভিযোগ, একাধিক চিনা সংস্থা চাঁদা দিয়েছে পিএম কেয়ারস তহবিলে। যখন সীমান্ত সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ভারত ও চীন, তখন কেন এই চাঁদা নেওয়া হচ্ছে? চিনকে আগ্রাসী বলতেই বা দ্বিধা কেন প্রধানমন্ত্রীর? রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে চীনা চাঁদা নিয়ে আক্রমণে নেমেছিল বিজেপি। বলা যেতে পারে, পিএম কেয়ারস তহবিলে চিনা সংস্থার চাঁদার কথা তুলে তারই পাল্টা দিলেন কংগ্রেস নেতা।
বিজেপি এদিকে কংগ্রেসকে দেশবিরোধী প্রমাণের লাইনেই আছে। রাহুল গান্ধী ও কংগ্রসকে নিশানায় এনে এদিন অমিত শাহ বলেন, ‘আমরা ভারতবিরোধী প্রচার সামলাতে সক্ষম। কিন্তু একটা বড় রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন সভাপতি যখন সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করেন, তখন সেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। রাহুলের এটা ভেবে দেখা উচিত যে, তাঁর মন্তব্যগুলি ফরোয়ার্ড করছে পাকিস্তান ও চিন। ওই দুই দেশের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তাঁর বক্তব্য।’
তবে চিন-ভারত সংঘাত যত তীব্র হচ্ছে কংগ্রেস-বিজেপির আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পারদও চড়ছে হু হু করে।