দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: বনগাঁ,— নেশার টাকা চেয়ে না পেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় কাঠের পাটাতন দিয়ে আঘাত করে খুন করল দাদা। রক্তাক্ত ভাইকে ঘরের ভেতরে রক্তাক্ত, যন্ত্রনায় কাতর ভাইকে দেখেও বেশ কিছুক্ষণ কোনও হেলদোল হয় নি খুনি দাদার। শেষে মা কে ঘুম থেকে ডেকে এই ঘটনা জানিয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় হামলাকারী। পরে পুলিস হামলাকারীকে আটক করে। ছোটছেলের এই মর্মান্তিক পরিনতিতে শোকার্ত মা আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন। মঙ্গলবার ভোররাতে এই ঘটনা ঘটেছে বনগাঁ থানার সাতভাই কালীতলা এলাকায়। জানা গেছে, ওই এলাকার বাসিন্দা লিটু বাকচীর ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে। কাজের সূত্রে তিনি গুজরাটে থাকেন। বড়ছেলে বেঞ্জাইম, ছোটছেলে রায়ান ওরফে তারণ (১৯) এবং মেয়ে শতাব্দীকে নিয়ে বনগাঁর বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী ইতু বাকচী। তাঁদের বড় ছেলে বেঞ্জাইম বেশ কয়েক বছর ধরে মাদকাশক্ত হয়ে পরে। বছর চারেক আগে নেশার ঘোরে মায়ের পেটে ছুরি চালিয়ে দিয়েছিল সে। সেই যাত্রায় বেঁচে যান ইতুদেবী। এই অবস্থায় বেঞ্জাইমকে অনেকদিন গুজরাটে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। পরে তাকে সুস্থ করে তুলতে অশোকনগরের একটি নিশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এতোদিন সে সেখানেই ছিল। পুজো চলে আসায় তাকে কয়েকদিনের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পুজোর পর্ব মিটে গেলে তাকে ফের সেই কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবার কথা ছিল। এরইমধ্যে মায়ের কাছে নেশা করার জন্য টাকা চায় বেঞ্জাইম। কিন্তু মায়ের কাছে টাকা না পেয়ে বাবাকে ফোন করে। তিনি বলেন যে, ভাই রায়ানের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এরপর সে ভাইয়ের কাছে টাকা চায়। কিন্তু নেশার জন্য ভাই টাকা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দাদা বেঞ্জাইম। এদিকে, ৫ নভেম্বর চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিএ প্রথমবর্ষের ছাত্র রায়ান। সোমবার রাত দেড়টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে শুয়ে পরে সে। এরপর একসময় পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে ভাইয়ের ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত ভাইয়ের মাথায় একটি কাঠের পাটাতন দিয়ে সজোরে আঘাত করে। বেশ কিছুক্ষণ এই অবস্থায় ভাইকে ছটফট করতে দেখে সে। পরে মাকে ডেকে ঘটনার কথা জানিয়েই রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় বেঞ্জাইম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়ানকে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় তার। ছোটছেলের এই মর্মান্তিক পরিনতিতে শোকার্ত মা ইতু বিশ্বাস আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে পরিজনদের চেষ্টায় বেঁচে যান। প্রতিবেশি রথীন বিশ্বাস, মাধুরী ব্যানীর্জীরা জানান, পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল রায়ান। ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় জনপ্রিয় ছিল সে। তারমতো ছেলের এমন পরিনতি মেনে নিতে পারছেন না এলাকার মানুষজন। পুলিস জানিয়েছে, এদিন সন্ধে পর্যন্ত এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ জমা পরে নি। তাই বেঞ্জাইমকে আপাতত আটক করে রাখা হয়েছে।