দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রের নিয়ে আসা নতুন তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছেন কৃষকরা। দেশজুড়ে দিন দিন তীব্র হচ্ছে এই আন্দোলন। যদিও বিজেপির তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, এই আইন কৃষকদের দাবিদাওয়া মেনেই আনা হয়েছে। এবার কৃষকদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, এই কৃষি আইনের ফলে কৃষকদের রোজগার বাড়বে। কৃষকদের সামনে নতুন বাজার খুলে যাবে, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বাড়বে। আর তার সুবিধা কৃষকরা পাবেন বলে জানিয়েছেন মোদী।
এদিন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) ৯৩ তম বার্ষিক কনভনেশনে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন একটি সেক্টরে উন্নতি হয় তখন তার প্রভাব অন্য অনেক সেক্টরের উপর পড়ে। কিন্তু ভাবুন যখন বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় দেওয়াল খাড়া হয় তখন কী হয়। তখন কোনও শিল্পেরই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী উন্নতি হতে পারে না।”
এই বক্তব্যের পরেই বিতর্কিত কৃষি আইনের দিকে নজর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কৃষি ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সেক্টর যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্টোরেজ, কোল্ড চেইনের মধ্যে একটা অপ্রয়োজনীয় দেওয়াল খাড়া হয়েছিল। কিন্তু এখন এই দেওয়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে কৃষকদের সামনে নতুন বাজার তৈরি হবে। নতুন বিনিয়োগ আসবে। অনেক উন্নত প্রযুক্তি আসবে। আর তার ফলে আমার দেশের কৃষকরা সবথেকে বেশি লাভবান হবেন। তাঁদের রোজগার অনেক বাড়বে।”
ফিকির এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেন যাতে গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ে। তিনি আক্ষেপও করেন যে বেসরকারি মাধ্যমের যতটা বেশি কৃষির দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল ততটা দেওয়া হয়নি। মোদী বলেন, “এখন কৃষকদের সামনে মান্ডি ছাড়াও বাইরে ফসল বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। এই পরিবর্তন করা হয়েছে কৃষকদের রোজগার বাড়ানোর জন্যই।”
এ ছাড়া, তাঁর ভাষণে কৃষি ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রসঙ্গটিও এসেছে। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে কৃষি ক্ষেত্রে এতদিন সবচেয়ে কম বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে। নয়া আইনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রেও বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ সম্ভব হবে যা, ক্ষেত্রটিকে আরও বড় করে তুলবে।’’
প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির তরফে অবশ্য যাই বলা হোক না কেন, এই তিনটি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লির বাইরে বিক্ষোভে বসেছেন কয়েক লাখ কৃষক। এখনও পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে পাঁচবার বৈঠক করেছে কৃষক সংগঠনগুলি। অনেক বার বৈঠকের পরেও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি। কেন্দ্র জানিয়েছে, কৃষকদের দাবি মেনে কৃষি আইনে কিছু সংশোধনী করতে রাজি আছে তারা। কিন্তু কৃষক সংগঠনের দাবি, এই আইন পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। যতদিন না সেটা প্রত্যাহার করা হচ্ছে ততদিন তারা আন্দোলন চালাবে বলেই জানিয়েছে। শুধু তাই নয় আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এমনকি এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে কৃষক সংগঠন।
যদিও মোদীর কথায় চিঁড়ে ভিজবে বলে মনে হয় না। কারণ, বিক্ষোভের ১৭ তম দিনে এসেও কৃষকরা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এখনও অনড়। শনিবার নতুন করে দিল্লি অবরুদ্ধ করে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন কৃষকরা। দিল্লি হরিয়ানা সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পুলিশ বাহিনী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে প্রশাসন।