অরিত্র ঘোষ দস্তিদার: ‘২০শে এপ্রিল বৈশাখী অমাবস্যা তিথি; শ্রীচৈতন্য-পার্ষদ শ্রীল গদাধর পণ্ডিতের আবির্ভাব দিবস। উপলক্ষে ১৯ শে এপ্রিল অধিবাস-সন্ধ্যায় একটি অনলাইন কার্যক্রমের আয়োজনে করে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’। অনুষ্ঠানে প্রভু গদাধরের জীবনী ও লীলা-বর্ণন করেন মহানাম সম্প্রদায়ের সম্পাদক তথা মহাউদ্ধারণ মঠের বিশিষ্ট সন্ন্যাসী ও গবেষক শ্রীমৎ বন্ধুগৌরব ব্রহ্মচারী এবং ইস্কন মায়াপুরের মুখ্য সমন্বয়ক শ্রী জগদার্তিহা দাস।
অনুষ্ঠানটির বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিশিষ্ট শিল্পী শ্রীমান শীর্ষ আচার্যের অঙ্কন প্রদর্শন। তিনি গদাধর পণ্ডিতের একটি অসাধারণ ছবি আঁকেন — গদাধর পালকের একটি কলম দিয়ে কিছু লিখছেন। এদিনই ছবিটি সনাতনী হিন্দু মহলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। নানান গ্রুপে ছবিটি নিয়ে গৌরভক্তদের মধ্যে এদিন ছিল বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনা।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে গদাধর পণ্ডিতের লীলা মাহাত্ম্যের একটি ঝলক উপস্থাপন করেন ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর অন্যতম স্থাপয়িতা শ্রীমান অরিত্র ঘোষ দস্তিদার। স্বাগত ভাষণে তিনি জানান, এই কার্যক্রমের মধ্যে যেমন আধুনিক প্রযুক্তির ঝলক দেখছি, তেমনই আমরা প্রাচীন ইতিহাসেও জারিত হচ্ছি। গৌরাঙ্গ সমসাময়িক একটি যুগকে এদিন সংক্ষেপে তুলে ধরেন তিনি। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা যায় বাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীমান মিলন খামারিয়াকে। সভার সৌকর্য বৃদ্ধি পায় শ্রীমতী অঙ্কিতা চৌধুরীর উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে।
সভার শুরুতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম তত্ত্ব শ্রী গদাধর পন্ডিতের পাদপদ্মে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম নিবেদন করেন জগদার্তিহা দাস। এরপর প্রণাম জানান সভায় বন্ধুগৌরব মহারাজজী। সভায় জানা যায়, গৌরলীলার পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শ্রীল গদাধর পণ্ডিত। তিনি শ্রীচৈতন্যের প্রিয়পাত্র, লীলাসহচর ছিলেন। তিনি শ্রী মাধব মিশ্র এবং শ্রীমতী রত্নাবতী দেবীর দিব্য সন্তান। নবদ্বীপ, মতান্তরে শ্রীহট্টে গদাধরের জন্ম পঞ্চদশ শতকের শেষে। তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের চাইতে কয়েক বছরের ছোটো। ১৪৮৬ সালে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব নবদ্বীপে। শিশুকাল থেকেই গদাধরের মধ্যে বিশেষ গৌর-অনুরাগ দেখা যায়। তিনি গৌরাঙ্গের সহপাঠী; দিব্যোন্মাদ বন্ধুকে সর্বদা আগলে রাখতেন তিনি, সবসময় কাছাকাছি থাকতেন, সেবায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন গৌরহরিকে। জীবনের শেষ পর্যন্ত গৌরলীলায় নিমজ্জিত ছিলেন তিনি। তিনি বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের কাছে এক অপূর্ব নাম ও ইতিহাস।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ছিল গদাধর সম্পর্কে প্রশ্নোত্তরের মূল্যবান আসর। এ সময় ভক্তবৃন্দের নানান প্রশ্নের উত্তর দেন শ্রীমৎ বন্ধুগৌরব ব্রহ্মচারী মহারাজ। দর্শকদের মধ্যে এদিন কৃতবিদ্য বহু বৈষ্ণবজন উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ড. রীতা ভট্টাচার্য, শ্রীমতী কুঞ্জশ্রী দাশগুপ্ত, শ্রীযুক্ত ঋতায়ণ গুহ, ড. অশোক চ্যাটার্জী প্রমুখ। কুঞ্জশ্রীদেবী গৌড়ীয় পদাবলী আবৃত্তি করেন। এছাড়াও তিনি তিলক বিষয়ক নানান প্রাসঙ্গিক তথ্য সভায় পরিবেশনা করে ভক্তজনকে সমৃদ্ধ করেন। সভার শেষে ‘দেশের মাটি’-র পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শ্রী অসীমলাল মুখার্জী।
এই রকম নানান সভা নিয়মিত আয়োজন করে থাকেন দেশের মাটির কৃতবিদ্য সদস্যগণ। প্রতি শনিবার রাতে তাদের সাপ্তাহিক অনলাইন সাহিত্য-সংস্কৃতি সভা বসে। তাতে নানান গুণীজন অংশগ্রহণ করেন। এদিনও সভায় উপস্থিত সকল শ্রোতা ও গৌরভক্তমন্ডলী সমগ্র অনুষ্ঠানটি আগ্রহ ভরে শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা লিখিত মন্তব্য চ্যাটবক্সে উপস্থাপন করতে থাকেন৷ শেষে হরিবোল ধ্বনি এবং পদাবলী পরিবেশন করে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়৷