দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত বুধবার থেকে আজ বুধবার।২০ মে বুধবার অতি তীব্র সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। দুই চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা তো বটেই। তা তছনছ করে দিয়েছিল কলকাতা শহরকেও। আজ সন্ধ্যায় ক্ষণিকের জন্য হলেও সেই স্মৃতি যেন নতুন করে তাজা হয়ে গেল।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল। তা ষোল আনা সত্যি হল। সন্ধ্যা নামতেই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে দেয়। ঝড়ের গতিবেগ অবশ্যই উমফানের মতো তীব্র ছিল না। কিন্তু খুব কমও ছিল না। ঝড়ের সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় বজ্র বিদ্যুৎসহ মুষলধারে বৃষ্টি। চারদিকে সাদা হয়ে বৃষ্টি হতে থাকে। আর তার সমানে চলতে থাকে ঝড়। দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি কলকাতায় প্রবল ঝড় বৃষ্টির খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলির বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন এলাকায় ঝড় শুরু হতেই লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে।
বাংলার একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। দুর্গাপুরে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। এমনকী সারা কলকাতা কদিন আগেই যেখানে গাছ পড়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল, সেইভাবেই কলকাতায় ফের বহু জায়গায় গাছ পড়েছে।
৫০-৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া, সেইসঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর আবহওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, বুধবার নাগাদ দক্ষিণবঙ্গের কাছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাবে রাজ্যে কালবৈশাখীর সম্ভাবনা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছিল।
সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। কলকাতা, আমপানে বিধ্বস্ত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান-সহ একাধিক জেলায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। কলকাতার যাদবপুর, শ্যামবাজারের মতো একাধিক জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেক কষ্টে কদিন পর বিদ্যুৎ এলেও এদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ফের তা চলে গিয়েছে।
পুরসভার তথ্য বলছে, আমপানের তাণ্ডবে শুধু কলকাতা শহরেই প্রায় ১৪ হাজার গাছ উপড়েছে। ঝড়ে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত রবীন্দ্র সরোবর উদ্যান এবং সুভাষ সরোবর। কেএমডিএ-র হিসেব অনুযায়ী, রবীন্দ্র সরোবরে মোট ২২০টি গাছ উপড়ে গিয়েছে অথবা ডাল ভেঙে পড়েছে। সুভাষ সরোবরেও ৫০টির মতো গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শ’খানেক গাছ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এগুলি সবই পুরোনো গাছ, গোড়া থেকে উপড়ে গিয়েছে। তবে মূল শিকড় অক্ষত রয়েছে। দুই সরোবর দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র আধিকারিক সুধীন নন্দী বলেন, ‘খুব বড় গাছের প্রতিস্থাপন অসম্ভব। ১০০টির মতো গাছকে প্রতিস্থাপন করার একটা ভাবনাচিন্তা হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এর আগেও এই দুই সরোবরে গাছ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। উম্পুনে কয়েকশো গাছ উপড়ে পড়েছে নিউ টাউনেও। এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, অন্তত ৭০ শতাংশ গাছ প্রতিস্থাপন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
বনগাঁয় আমপানের তান্ডবে যশোর রোডের দুধারের প্রাচীন গাছ শিকড় থেকে উপড়ে গিয়েছিল,ফের আজ বুধবার সন্ধ্যার ঝড়ে বড় বড় ডাল ভেঙে পড়ার খবর এসেছে৷ফের ভেঙেছে বেশ কিছু বাড়ি ,যা আগেই ক্ষতিগ্রস্থ ছিল আমপানের দাপটে৷ বনগাঁ ছয় ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় সামান্য অবশিষ্ট কিছু সবজী, এবং ফলের গাছ এদিনের ঝড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েগেছে বলে খবর এসেছে৷
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলি ছাড়াও আজ বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিমী মেদিনীপুরের বেশ কিছু অংশে। আজ সন্ধে থেকেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের তিন জেলা মালদা এবং দুই দিনাজপুরেও ঝড়বৃষ্টি হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বিহার থেকে মুর্শিদাবাদের উপর দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করছে। তার জেরেই দক্ষিণবঙ্গের এই ঝড়বৃষ্টি।
আজ সকাল থেকে আংশিক মেঘলা ছিল আকাশ। আলিপুর জানিয়েছিল, বিকেলের পর ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। হাওয়া অফিসের জানিয়েছিল আজ দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩২ ডিগ্রি এবং ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশেই থাকবে।
আজ বুধবার শহর কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি কম। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৭৫ শতাংশ। আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় দিনেরবেলায় ভ্যাপসা-গুমোট গরম ছিল। তবে বিকেলের পর বেশ কিছু জেলায় ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় ঝড়বৃষ্টি হয়নি।
রবিবার থেকেই বৃষ্টি চলছে রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলিতে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিও হয়েছে। সোমবার বীরভূম ও মালদহ জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হয়। কালবৈশাখীর দাপটে মালদহে আমের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। বীরভূমের সিউড়িতে ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। বেশ কিছু বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত।