দিনহাটার সভা থেকে মমতার গর্জন কমিশন-বাহিনীর বিরুদ্ধে

0
1085

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গতকাল নরেন্দ্র মোদীর পর আজ শীতলকুচিতে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেছেন, নন্দীগ্রামে দিদি হারছেন। কিচ্ছু করার নেই। ঠিক তার পরেই কোচবিহারের দিনহাটার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাজ্যের তৃণমূলকর্মীদের যেন অভয় দিতে চাইলেন ভোট নিয়ে। যোগাতে চাইলেন আত্মবিশ্বাস। একইসঙ্গে গর্জে উঠলেন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে।

এদিন মমতা বলেন, “আমি নন্দীগ্রামের মানুষকে অভিনন্দন জানাই। কালকে যে ৩০টায় ভোট হয়েছে আর তার আগে যে ৩০টায় ভোট হয়েছে, সবকটায় আমাদের মা-মাটি-মানুষের খুব ভাল ভোট হয়েছে। নিশ্চিন্তে থাকুন।

আপনারা জয়ের পথের দিকে তাকিয়ে থাকুন।”
দিদির এই মন্তব্য নিয়ে বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, “মমতা ব্যানার্জী এখন পিকে ব্যানার্জীর মতো ভোকাল টনিক দিতে চাইছেন। কিন্তু ওতে লাভ হবে না। দুটো স্পেলে যা খেলা হয়ে গেছে তাতে দিদি এমনিতেই অনেক গোলে পিছিয়ে পড়েছেন।”

একথা বলার পরেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানালেন তৃণমূলনেত্রী। নন্দীগ্রামে ভোটের আগের রাতে সিআরপিএফ আর বিএসএফ তাণ্ডব করেছে বলে অভিযোগ করলেন মমতা। কমিশনের উদ্দেশে মমতা বলেন, “উইথ হাম্বল রিগার্ডস টু দ্য ইলেকশন কমিশন, ভোটটা কমিশন করছে না। ভোটটা করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।”

অনেকেই বলছেন, কয়েকদিন ধরে দিদির গলায় বদলার সুর শোনা যাচ্ছে। এদিনও সে ভাবেই মমতা বলেন, “আমি শুধু শান্ত আছি নির্বাচনটার জন্য। ভোটটা হয়ে যাক, বিজেপির যে হার্মাদরা তাণ্ডব চালাচ্ছে তাদের রেহাই দেব না।” মমতার কথায়, “আমি এখনও মরে যাইনি। আমি চুরি পরে বাড়িতে বসে থাকি না।”
দিনহাটায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে উদয়ন গুহকেই। ষোলর ভোটের আগে উদয়নবাবু ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে। এদিন নাম না করে নিশীথের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শানান দিদি। তাঁর কথায়, “এখানে যাকে উদয়নের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে সে কেমন ছেলে আপনারা তো জানেন। আর কী কী হবে? এমপি হবে, এমএলএ হবে, জুতোর দোকান করবে, মিষ্টির দোকান করবে, আর কী কী করবে?”

নিশীথ একদা ছিলেন যুব তৃণমূলের নেতা তথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাঁর কী গণভিত্তি তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেই। জেলার একাধিক আসনে মাদারের প্রার্থীদের হারিয়ে যুব তৃণমূলের লোকজনকে জিতিয়ে এনেছিলেন। তারপর লোকসভার আগে বিজেপিতে যোগ দেন নিশীথ। অনেকে বলেন, নিশীথের বিজেপি যোগের পরেই এই জেলায় তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যায়।


এদিন মমতা প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে কর্মীদের নির্দেশ দেন, “ভোটের আগের দিন যদি ওরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভয় দেখায় তাহলে তোমরাও পাল্টা ঘুরে বেরাবে।”


দিনহাটার জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন তা এক নজরে:

আমি জিতবই। আমি একা জিতলে হবে না। সবাইকে জেতাতে হবে। তাই আমাদের প্রার্থীদের জেতান। 
আমরা আপনাদের সব কাজ করে দিয়েছি। এসসি, এসটি-দের পেনশন করে দিয়েছি। 
আমি আপনাদের জন্য আরও অনেক কাজ করতে চাই। বিজেপি ক্ষমতায় এলে কিছু করবে না। 
লোভে পা দেবেন না। কন্যাশ্রী-সহ সব সুবিধা পেতে হলে আপনাদের আমাকে ভোট দিতে হবে। 
উদয়নকে জেতান। আমাদের সমস্ত প্রার্থীদের জেতান। 
আমরা আমাদের পাশে ছিলাম, আছি আর থাকব। ৩৪ বছরে বামেরা কিছু করেনি। আমরা মাত্র ১০ বছরের মধ্যে অনেক কাজ করেছি। 
বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সবার নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে। 
ভোটের সময় মোদী বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। কেন? ভোটের জন্য গিয়েছিলেন। 

আমি নিজের টাকায় মতুয়াদের বড়মার চিকিৎসা করিয়েছি। 
কোচবিহার শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছি। 
রাজবংশীদের জন্য অনেক কাজ করেছি। রাজবংশী ভাষা-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করেছি। 
কামতাপুরী ভাষার প্রসারের জন্য অনেক কাজ করেছি। 
আমি আগেও আপনাদের এখানে এসেছি। রাস্তাঘাটের কী অবস্থা ছিল। এখন তো সব চকচক করছে। 
বাকি কাজগুলো করে দেব। 
মেয়েদের জন্য আরও নানা প্রকল্প আমরা আনছি। লেখাপড়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য কাজ করেছি। 
স্বাস্থ্য়সাথি কার্ড সবার জন্য করেছি। এই কার্ড চলবে। আমাদের সরকার চলবে। 
২০০-র বেশি আসন না পেলে সরকার গড়তে পারব না। তাই আমাদের জেতান। জিতলেই নতুন নতুন প্রকল্প এনে দেব। 

এবার আমরা সমস্ত বিধবাদের ভাতা দেব। তাদের মাসে ১০০০ টাকা দেব। 
এবার থেকে আর রেশন দোকানে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। 
মেয়েদের জন্য বড় ঘোষণা 
রাজ্যের সমস্ত মহিলাকে মাসে ৫০০-১০০০ টাকা দেওয়া হবে।
একর প্রতি কৃষকদের এবার থেকে ১০ হাজার টাকা দেব। 
ফালাকাটার সভা থেকে মেয়েদের উদ্দেশে মমতা বলেন, আপনারাই আমার মা। 
২ দফাতেই জয়ের পথে তৃণমূল কংগ্রেস
বিজেপি এখন বড় বড় কথা বলছে। ওদের কোনও ক্ষমতা নেই। 
আমাকে অনেক হুমকি দিয়েছে। কিছু করতে পারেনি। 
অসম থেকে বহিরাগতদের আনা হচ্ছে। 
দ্বিতীয় দফার ভোটেও আনা হয়েছিল। পরবর্তী দিনগুলিতেও ওরা আনবে। কিন্তু, ভয়  পাবেন না। 

Previous articleকরোনা সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের দশ বছর পূর্তির দিন হাসপাতালে ভর্তি সচিন
Next articleনন্দীগ্রামে দিদি হারছেন, নিজেই বুঝে গিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে উত্তরবঙ্গে তৈরি করা হবে এইমস -এর ধাঁচে হাসপাতাল, প্রতিশ্রুতি শাহের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here