তৃণমূল মাথা নত করে না,যে দল বদল করে পালিয়ে যাবে, তাকে প্রার্থী করব না, টিকিট বণ্টন নিয়ে মন্তব্য মমতার

0
1530

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের টিকিট দেওয়া নিয়ে এবার স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়গঞ্জের সভা থেকে সাফ জানালেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কারও কাছে মাথা নত করে টিকিট দেয় না। যাঁরা কাজ করেন তাঁদের টিকিট দেয়।’

কর্মীদের উদ্দেশ্য করে দলনেত্রীর বার্তা, ‘মানুষের সেবা করতে হবে। যদি কেউ ভাবে আমি বড় নেতা তবে ভুল। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মাথা উঁচু করে থাকতে হবে। সবাইকে ভালো কাজ করতে হবে।’ গান্ধীজি, নেতাজি, আব্দুল কালামের মতো নেতা হতে হবে বলেও এদিন কর্মীদের পাঠ দেন মমতা।

রায়গঞ্জের জনসভা থেকে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ তথা রথযাত্রা করছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এটা রথযাত্রা নয়, ভিতরে বিলাসবহুল বন্দোবস্ত রয়েছে। বেআইনি হোটেল। এই বিজেপি নেতারা কি জগন্নাথ দেবের থেকেও বড়?’’

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা লোভী, তাঁদের বাদ দিন। যাঁরা ভোগী, তাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন।’’ বহিরাগত ইস্যুতেও আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘এরা সব বহিরাগত। দিল্লি থেকে এসে বাংলা শাসন করবে, এটা আমি কোনও ভাবেই হতে দেব না। আমি রুখবই। আমি আন্দোলন করতে করতে এই জায়গায় এসেছি। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’’


গতকাল থেকে কার্যত ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কালনা ও বহরমপুরে জনসভা করেন দিদি।

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের বক্তৃতা এক নজরে—


অনেক দূর থেকে মা-বোনেরা পায়ে হেঁটে কাজকর্ম ফেলে এই সভায় এসেছেন। আমি তাঁদের প্রণাম জানাই।
আমি আমার তৃণমূল কর্মীদের কাছে একটি কথাই বলব, গ্রামসভা হোক বা পৌরসভা , বিধানসভা হোক বা বুথ, আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে।

আমি নেতা নই। আমি নিজেকে কর্মী ভাবি। আমি যখন সরকার চালাই নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী ভাবি না। সাধারণ মানুষ হিসেবে চালাই।
আমি যদি মনে করি আমি একা থাকব আর কেউ থাকবে না সেটা ভুল।
তৃণমূল কংগ্রেসের স্বচ্ছতা আছে। যখন টিকিট দেয় তখন মাথা উঁচু করে দেয়।
কিছু ভুঁইফোড় রয়েছে। যাদের এখানে ওখানে কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম তারা কেউ কেউ গুছিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক চলে গেছে।
আমি অনেক ছোটবেলা থেকে কাজ করছি। আমার মনে হয় না ভাল গয়না পরে ঘুরি। আমার মনে হয় না ভাল বাড়িতে থাকি।
রাজনীতিতে তিন ধরনের লোক থাকে। লোভী, ভোগী আর ত্যাগী। তৃণমূল যারা করে তারা ত্যাগী।
আমি তো ২০ বছর ভাত খাই না। মুড়ি খাই। আমি ভাবি আমার তো মাথায় একটা চাল আছে।

গয়না দিয়ে কী হবে? হীরের চচ্চড়ি খাব না মণিমুক্তর ডাল খাব?
বিজেপি পার্টিটার খুব অহঙ্কার, ওদের অনেক টাকা আছে।
রামকৃষের কথায় টাকা মাটি, মাটি টাকা। টাকা দিয়ে মানবিকতা, মনুষত্ব কেনা যায় না।
কী হবে এত মারামারি, খুনোখুনি, বিজেপির হুড়োহুড়ি করে? এটা দিল্লিকা লাড্ডু নয়। এটা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, পঞ্চানন বর্মাদের বাংলা।
কয়েকটা নেতা জুটেছে… নেতা কেমন হওয়া উচিত? গান্ধীজির মতো। যিনি কোনও ভাগাভাগি করেন না। দেশ কা নেতা ক্যায়সা হো? গান্ধীজি য্যায়সা হো…।
নেতারা কেন মিথ্যে কথা বলবেন? একটা পলিটিক্যাল পার্টি বিজেপি কী মিথ্যা কথা বলে ভাই। বিশ্বাস করতে পারবেন না মা-বোনেরা।
মাথায় তিলক কাটলেই ধর্ম হয় না। আমরা সবাই জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় যাই। আমি নিজে রথ টানি। আমরা সেখানে গিয়ে বলি জয় জগন্নাথ, জয় বলরাম।

এখন দেখছি দেবতারা রথে চড়ছেন না। দশতলা রথ এনে, সমস্ত ভোগ করার জিনিস রেখে রথযাত্রার নামে যা খুশি করে বেড়াচ্ছে।
বিজেপির আমার উপর খুব রাগ। ওরা চায় যেনতেনপ্রকারেণ ওকে সরিয়ে দাও তাহলে দিল্লি থেকে ক্ষমতা দখল করবে।
আমরা জগন্নাথের রথ দেখেছি। তাহলে কি বিজেপি নেতাদের এবার জগন্নাথ বলে পুজো করতে হবে? আমার কৃষ্ণের রথ দেখেছি। এরা কি তাহলে কৃষ্ণ? আর আমরা রাবনের রথ দেখেছি। যুদ্ধের রথ। যাতে করে সীতাকে হরণ করা হয়েছিল।
বাবুরা রথ বের করেছে। বিরিয়ানি, পোলাও, খানাপিনা রেখে নেতারা ফূর্তি করছে। আমি সরি, এরা জগন্নাথ দেবের রথকে কালিমালিপ্ত করেছে।
তোমার চোখে কি ন্যাবা হয়েছে? এরা মানুষের চোখে ন্যাবা করে দিতে চাইছে।
বিজেপির রোজ বলে বেড়ায় মহিলারা রাস্তায় বের হতে পারেন না। কি মা-বোনেরা আপনারা রাস্তায় হাঁটেন না ? বাজারে-দোকানে যান না? ওদের উত্তরপ্রদেশে মেয়েরা রাস্তায় বের হতে পারে না।

বাংলা এমনিই সোনার বাংলা আছে। নতুন করে করার দরকার নেই। ওরা দাঙ্গার বাংলা করতে চায়। এ বাংলা কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, হিন্দু, মুসলমান, রাভা, রাজবংশী, আদিবাসী, বৌদ্ধ, জৈন—সবার বাংলা।
বীরসা মুণ্ডার জন্মদিন ছুটির দিন কে ঘোষণা করেছে?
বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। স্বাস্থ্যসাথী আমরা আগে করে দেখাই। আর বিজেপি বলে করব। কিন্তু করে না।
প্রার্থী কে হল বড় কথা নয়। আসল হল সিম্বলটাই। যে দল বদল করে পালিয়ে যাবে তাকে প্রার্থী করব না।

Previous articleরতিক্রিয়ায় অসমর্থ বলে বুঝিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে শারীরিক মিলনের আনন্দ পেতে চাওয়া, তারপর কী ঘটল!
Next articleমালদহে ভোটে ফজলি আম চাইলেন মমতা, আক্ষেপের সুরে বললেন অনেক উন্নয়ন করেছি, কিন্তু একটাও আসন পাইনি লোকসভা ভোটে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here