দেশের সময়ওয়েবডেস্ক:অসমের ধুবড়িতে তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম চৌধুরির সমর্থনে এক জনসভায় বিজেপি–র বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি বলেন৷তৃণমূল কংগ্রেসকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না, ভয় দেখিয়ে কেনা যায় না, চমকে কেনা যায় না, ধমকে কেনা যায় না, জেলে ঢুকিয়েও কেনা যায় না। তৃণমূল কংগ্রেস মাটির দল, মানুষের দল, মায়ের দল, আমরা ভয় পাই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষকে কিছু দেয়নি এরা, একটা দিয়েছে ললিপপ, সেটা হচ্ছে এনআরসি। আরেকটা ললিপপ দিয়েছে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট।’ ধুবড়ির ভিড়ে ঠাসা জনসভা থেকে এদিন বারে বারে ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী মমতা’স্লোগান দিয়েছে জনতা।
শুক্রবার ধুবড়ির সভায় এনআরসি ও সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট প্রসঙ্গেই বেশি সরব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এনআরসি–র নাম করে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের নাম করে অসমের মানুষের ধর্মের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, জমি–বাড়ির অধিকার, এমনকী বাঁচার অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে মোদি সরকার। অসমের নাগরিকদের মধ্যে ৪২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গেছে। এই ঘটনা বুকে ব্যথা দিয়েছে।
কে নাগরিক, কে নাগরিক নয়, তা কি ওরা ঠিক করবে? ওরা দেশের মানুষকে নাগরিকত্ব দেবে? অসমে ৫ জন নিরীহ বাঙালিকে কেন গুলি করে হত্যা করা হল? কতজন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন অসমে? এনআরসি–তে দেখা গেছে, কারও বাবার নাম নেই, মায়ের নাম নেই। স্ত্রীর নাম আছে, স্বামীর নেই বা তার উল্টোটা।’
মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, এনআরসি করে অসমের মানুষকে যখন বিপদে ফেলা হচ্ছিল, তখন গোটা দেশের মধ্যে সবার আগে তৃণমূলই প্রতিবাদ করে। অসমে জনপ্রতিনিধি না থাকলেও দিল্লি থেকে গুয়াহাটি পৌঁছে যান সুখেন্দুশেখর রায়, মমতাবালা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্ররা।
তৃণমূলকেও একবার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্বল নই। অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে আমরা এবার ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছি। সব কেন্দ্রে পৌঁছব আমি।’ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কেন জনবিরোধী তা–ও বুঝিয়ে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিলটির তীব্র প্রতিবাদ সংসদে একমাত্র তৃণমূল করেছে। আমি আইন পড়ে এসেছি। আপনারা জানুন।
এই বিল নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে ৬ বছরের জন্য বিদেশি বানিয়ে দেবে। অর্থাৎ নিজের দেশেই আপনি ৬ বছরের জন্য বিদেশি হয়ে যাবেন। ন্যূনতম অধিকার থাকবে না মানুষের।’ অসমে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’–এর কথাও তুলে ধরেন তিনি। জানান, সেখানে বয়স্করাই নয়, বাচ্চারাও আছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, যারা শিশুদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখে, তারা কীভাবে মনুষ্যত্বের কথা বলে?
বিজেপি–কে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলে মমতার তোপ, ‘আমরা হিন্দু মুসলমান নিয়ে রাজনীতি করি না। আমি হিন্দু, তুমি মুসলমান বাংলায় তা মনে করি না আমরা। তবে বিজেপি সারা বছর হিন্দু–মুসলমান ভেদাভেদ করে রাজনীতি করে। যেখানে তাদের হিন্দু প্রয়োজন নেই, সেখানে হিন্দু তাড়ায়।
যেখানে মুসলমান প্রয়োজন নেই, সেখান থেকে মুসলমান তাড়ায়। অসমে এনআরসি–তে যেমন প্রায় ২২ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ গেছে, প্রায় ২০ লক্ষ মুসলমানের নাম বাদ গেছে। আদিবাসী, গোর্খা, বিহারি, দক্ষিণ ভারতীয়দের একটি অংশের নামও বাদ।’ মানুষের উদ্দেশে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ছিল, আপনারা জানেন কি বিজেপি কেন বাঙালি হিন্দু–বাঙালি মুসলমান ভাগাভাগি করে রাখে? মানুষ যদি একজোট হয়ে যায়, তবে মাত্র ৩০ শতাংশ হয়ে জাতপাতের ভোটাভুটিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে বিজেপি।’
তাঁর অভিযোগ, ‘অসমে ন্যূনতম উন্নয়ন হয়নি। এখান থেকে মানুষ আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে চিকিৎসা নিতে যান। ছাত্ররা পড়তে যায় উত্তরবঙ্গে। এরপরও কেন ভোট বিজেপি–কে?’ অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নাম করে সারদা দুর্নীতিতে তাঁকে বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসমে কোনও বিপদ হোক চাই না। তবে অসমের মানুষ বিপদে পড়লে বাংলা বুক পেতে তাঁদের আশ্রয় দেবে।