দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মাটির তলায় লুকিয়ে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে চিন! এমনই মারাত্মক অভিযোগ আনল আমেরিকা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি রিপোর্টে আনা এই অভিযোগ আরও তীব্র করল চিন-আমেরিকা দ্বন্দ্ব। বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে।
গত বছরের শেষে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রাদুর্ভাব হওয়া করোনাভাইরাস কয়েক মাসের মধ্যে সারা বিশ্বে ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে হু হু করে, বেড়েছে মৃত্যুমিছিল। প্রায় ২১ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন মারণ অসুখ কোভিড ১৯-এ। আমেরিকার অবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ করোনা ঝড়ে। মারা গেছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ, আক্রান্ত সাড়ে ছ’লক্ষ।
এর জেরে কয়েক দিন ধরেই চিনের বিরুদ্ধে নানা রকম তোপ দেগেছে আমেরিকা। কখনও অভিযোগ তুলেছে জৈব মারণাস্ত্র হিসেবে করোনাভাইরাস তৈরি করেছে চিন, কখনও দাবি করেছে চিন এই অসুখের তথ্য গোপন করার জন্যই এমন বিশ্ব-মহামারী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চিনের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগে মার্কিন অনুদান বন্ধ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র।
এই পরিস্থিতিতেই ফের নতুন অভিযোগ আমেরিকার। দাবি, গোটা ২০১৯ সাল জুড়ে চিনের ‘লর নুর’ লেকে, গোপনীয় ভাবে মাটির নীচে শব্দ কম করে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বেজিং। এই ধরনের বিস্ফোরণের নাম ‘জিরো ইয়েল্ড’ বিস্ফোরণ।
চিন-আমেরিকা দ্বৈরথ নতুন নয়। শি জিনপিংয়ের আমলে তা বেড়েছে বই কমেনি। আমেরিকাকে জব্দ করতে একাধিক মিসাইল বানিয়েছে চিন। এবার কি তবে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে? ‘জিরো ইয়েল্ড’ বিস্ফোরণে এর কোনও চেন রিঅ্যাকশন তৈরি হয় না। ফলে তা নিয়ে হইচই হওয়ার সুযোগও প্রায় নেই।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট বলছে, “চিন সারা বছর ধরে লপ নুর এলাকায় পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে, কী জন্য হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে– সেসব নিয়ে কোনও স্বচ্ছতা নেই।” যদিও এই রিপোর্টের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কোনও তথ্য প্রমাণ দেয়নি ওই রিপোর্ট। ‘কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন’-এর এক মুখপাত্র অবশ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, গত বছরের অগস্ট মাস থেকে চিনের পাঁচটি সেন্সর স্টেশন থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
১৯৯৬ সালে আমেরিকা ও চিন কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) স্বাক্ষর করে। তবে কোনও দেশই তা অনুমোদন করেনি। সেই কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি এই চুক্তি। তবে চিন দাবি করেছে দতারা চুক্তির শর্ত মেনে চলছে। আমেরিকাও পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে। সিটিবিটি-র এক মুখপাত্র অবশ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, গত বছরের অগস্ট মাস থেকে চিনের পাঁচটি সেন্সর স্টেশন থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
আমেরিকার রিপাবলিকান সিনেটর টম কটোন এই অভিযোগের সপক্ষে টুইটারে লিখেছেন, বেজিং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আরও আধুনিক করছে এবং আমেরিকা একপাক্ষিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির ভিত্তিতে নিজেকে আটতে রেখেছে।
The Chinese Communist Party's conducting covert nuclear tests is yet another reason to unsign the Comprehensive Nuclear-Test-Ban Treaty. https://t.co/xH7SAedwn7
— Tom Cotton (@SenTomCotton) April 15, 2020
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, “নিয়ম মেনে পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে বেজিং। আমেরিকা সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ আনছে। চিন এ ব্যাপারে সবসময়ই দায়িত্বপূর্ণ আচরণ পালন করে এসেছে। আমেরিকা কোনও তথ্য ছাড়াই, ভিত্তিহীন ভাবে চিনকে দুষছে।”