দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে তাঁর মন্ত্রিসভার বড়সড় সম্প্রসারণ করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে রদবদলের সম্ভাবনাও প্রবল। শেষ মুহূর্তে কৌশলের কোনও বদল না হলে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে তা হওয়ার সম্ভাবনা বলে জানাগিয়েছে বিজেপি সূত্রে৷
উনিশের লোকসভা ভোটে একাই তিনশ পেরনোর পর বড় কোনও রাজনৈতিক সাফল্য আসেনি মোদী-অমিত শাহদের ঝুলিতে৷ মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, বাংলা বিপর্যয়ের তালিকা বেশ দীর্ঘ। উপরি করোনার ধাক্কায় ঘরোয়া অর্থনীতিও যথেষ্ঠ নিম্নমুখী।
পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই বলেন, ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভরকেন্দ্র হল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়৷ তুলনায় মন্ত্রীদের ক্ষমতা অনেক সীমিত। ফলে রাজনৈতিক সমীকরণ ও পরিস্থিতি বিচার করেই যে সম্ভাব্য সম্প্রসারণ ও রদবদল হতে চলেছে সেটাই রাজনৈতিক পরিসরে আম ধারণা।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালকে কেন্দ্রে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। অসমে বিজেপি এ বার জিতলেও সর্বানন্দকে মুখ্যমন্ত্রী করেনি। পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সেই কারণেই কেন্দ্রে পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে সর্বানন্দকে। একই ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পুনর্বাসন পেতে পারেন বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সর্বোচ্চ ৮১ জন সদস্য থাকতে পারে। তবে প্রথম মেয়াদ থেকেই মোদী মন্ত্রিসভায় সদস্যের সংখ্যা কম। মিনিমাম গভর্নমেন্ট ম্যাক্সিমাম গভর্নেন্সের সূত্রে তা সুচিন্তিত ভাবেই করেছেন মোদী-শাহরা। বর্তমানে মন্ত্রিসভায় সদস্য রয়েছেন ৫৩ জন। অর্থাৎ সম্প্রসারণের জন্য সুযোগ রয়েছে অঢেল।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব বাড়তে পারে। বাংলায় লোকসভা ভোটে ১৮ টি আসন জেতার পর মাত্র ২ জনকে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী। এ বার আরও অন্তত দু’জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। সেদিক থেকে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের কপালে শিঁকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা তুলনায় বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিশীথ প্রামাণিক, জগন্নাথ সরকার, দিলীপ ঘোষের নাম নিয়েও জল্পনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নিশীথ প্রামাণিকও দিল্লিতে ছিলেন। আবার মধ্যপ্রদেশ থেকে অবধারিত ভাবেই মন্ত্রিসভায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার। গত বিধানসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশে হেরেছিল বিজেপি। কংগ্রেস সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এর পর জ্যোতিরাদিত্য সদলবলে শিবির বদল করে পদ্মদলে যোগ দেন। তাতে কংগ্রেসের সরকারের পতন ঘটে। কংগ্রেসের বিশ্বাস ভেঙে মোদী-শাহর আস্থা অর্জনের সেই পুরস্কার পেতে পারেন জ্যোতিরাদিত্য।
তবে সর্বভারতীয় রাজনীতির চোখ আটকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এমনিতে হিন্দিবলয়ের সব থেকে বড় এই রাজ্যে বিরোধী দলগুলির অবস্থা এখন খুবই দুর্বল। ঘরে বসে আস্ফালন ব্যতিরেকে মাঠে ময়দানের রাজনীতিতে অখিলেশ যাদব, মায়াবতী বা প্রিয়ঙ্কা বঢ়ড়ার দেখা নেই। কিন্তু তা যেমন ঠিক, তেমনই এও ঠিক যে উপর্যুপরি বেশ কিছু ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি মলিন হয়েছে। হাথরসের ঘটনা বা কোভিডে মৃতদের দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়েছে দেশজুড়ে।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, একাধিক তরুণ মুখ মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। যেমন মহারাষ্ট্র থেকে প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম মহাজন, মহীশূরের প্রতাম সিমহা, দিল্লির মীনাক্ষী লেখি কিংবা পরবেশ ভার্মা প্রমুখ।
তা ছাড়া কৃষক আন্দোলনের ভরপুর প্রভাব রয়েছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। ফলে উত্তরপ্রদেশ থেকে নতুন কোনও মুখ মন্ত্রিসভায় আসে কিনা, বা এলে তাঁরা কারা তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অসীম।
পর্যবেক্ষকদের মতে মন্ত্রিসভার রদবদলের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে একটা বিষয়ে মিল রয়েছে। তা হল, এ ব্যাপারে দুজনেই খুব গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন।
কংগ্রেস জমানায় যেমন মন্ত্রিসভার রদবদলের দু-তিন দিন আগেই মোটামুটি ভাবে একটা স্পষ্ট ছবি পাওয়া যেত, তা মোদী জমানায় হয় না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকে হাতে গোণা মাত্র কয়েক জনের। ফলে রদবদল ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বড় কোনও চমকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।