দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ গজনির পর কন্দহরের দক্ষিণে অবস্থিত লস্কর গাহ শহরেরও দখল নিয়েছে তালিবান। কাবুলে আধিপত্য বিস্তার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই ভারতীয় দূতাবাস খালি করে নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে তৎপর হল নয়াদিল্লি। কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস-সহ সহ মোট চারটি কনস্যুলেট রয়েছে ভারতের।
ভারতীয় সেনার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও রয়েছেন সেখানে। কিন্তু যেভাবে আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশের দখল নিয়ে চলেছে তালিবান বাহিনী, তাতে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সাউথ ব্লকের তরফে ভারতীয়দের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, তালিবান আধিপত্য থেকে বাঁচতে আফগানিস্তানের সরকারি আধিকারিকরাই গা ঢাকা দিতে শুরু করেছেন। অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে কাবুল, কন্দহর, মাজার-ই-শরিফ-এর মতো শহর থেকে নিরাপত্তাবাহিনী-সহ সমস্ত আধিকারিক ও কর্মীকে দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী ভাবে উদ্ধারকার্য চালানো হবে, তার পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলি পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
তালিবান হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে আফগান সেনাবাহিনী। ১১টিরও বেশি প্রাদেশিক রাজধানী এখন তালিবানের দখলে। গোটা দেশে ৭০ শতাংশের বেশি এলাকায় তালিবান সাম্রাজ্য তৈরি হয়ে গেছে। জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ দু’দিক দিয়েই কাবুল দখলের পথে এগোচ্ছে তারা। রাজধানী কাবুল এখনও পর্যন্ত নিরাপদ থাকলেও, যেভাবে তালিবান গতি বাড়াচ্ছে, তাতে তাদের কাবুল পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে আছে তারা কাবুল থেকে।
তবে শুধু ভারতই নয়, অন্য দেশের তরফেও নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনও তাদের দূতাবাস থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। সূত্রের খবর, আমেরিকা ৩০০০ ট্রুপ পাঠাচ্ছে কাবুলে, সেখানকার দূতাবাস থেকে নিজেদের দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য। ব্রিটেনও ৬০০ জনের দল পাঠাচ্ছে তাদের দূতাবাস খালি করার জন্য।
এপ্রিল মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সেনা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেন। ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। বাইডেনের সেই ঘোষণার পর থেকেই সেখানে শক্তিসঞ্চয় করতে শুরু করেছে তালিবান।
জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে যারা জেল খাটছিল, তাদের বেশিরভাগই এখন মুক্ত। এদের মধ্যে অন্তত ৭০০ জন পুরুষ ও ৩০ জন মহিলা। এই বন্দিদের মধ্যে জেহাদিদের সংখ্যাই বেশি। তালিবান বাহিনীতে থাকা যুদ্ধাস্ত্র চালানোয় পারদর্শী অনেক জঙ্গিকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল বিভিন্ন সময়। তারাও এখন মুক্ত। এই জেলবন্দিদের নিয়েই তালিবানরা নিজেদের বিশাল দল গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণের বহু অঞ্চল তাদের দখলে চলে গিয়েছে। আফগান সেনার বহু কর্মীই তালিবানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশের সদর দফতর ও কারাগারগুলির দখল নেওয়ার পরেই, বন্দিদের মুক্ত করতে শুরু করেছে তালিবানরা।