দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার নতুন স্ট্রেনের ওপর ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে না এমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য এখনও মেলেনি। তাই চিন্তার কারণ নেই বলেই আশ্বাস দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিষয়ক দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা কে বিজয় রাঘবন বলেছেন, করোনার নতুন স্ট্রেন মিউট্যান্ট অর্থাৎ জিনের বিন্যাস বদলেছে। অনেক দ্রুতগতিতে ছড়াতে পারে। আগের চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে। তবে এই নতুন স্ট্রেনকে রুখতে পারবে ভ্যাকসিন। দেশে এখন করোনার যে সম্ভাব্য প্রতিষেধকগুলি তৈরি হয়েছে সেগুলি বিফল হবে না বলেই দাবি করেছেন তিনি।
যে নতুন ভাইরাল স্ট্রেন খুঁজে পাওয়া গেছে তার নাম বি.১.১.৭ ( B.1.1.7) । বৈজ্ঞানিক নাম VUI–202012/01। এই ভাইরাল স্ট্রেনের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা খুব বেশি। কারণ মানুষের শরীরে ঢুকলে খুব দ্রুত এসিই-২ (ACE-2) রিসেপটর প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এর কারণ হল ভাইরাস তার স্পাইক প্রোটিনের বিন্যাস বদলে দিয়েছে। রাঘবন বলছেন, এই স্ট্রেনের দ্রুত বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণই হল N501Y মিউটেশন, যা মানুষের দেহকোষে ভাইরাসকে দ্রুত ঢুকে পড়তে সাহায্য করছে। স্পাইক প্রোটিনের দুটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড মুছে দিয়ে নতুনভাবে সাজিয়েছে ভাইরাস। ফলে অনেক বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। এর ট্রান্সমিসিবিলিটি রেট তথা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আগের স্ট্রেনগুলোর তুলনায় ৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছে, প্রাথমিকভাবে যা তথ্য মিলেছে তাতে অনুমান করা হচ্ছে, নতুন ভাইরাল স্ট্রেন ভ্যাকসিনের গুণেই নষ্ট হবে। ভাইরাসের জিনের গঠন বদলালে বা জেনেটিক মিউটেশন হলে, আশঙ্কা করা হয় প্রতিষেধক এর ওপর কার্যকরী হবে না। কারণ ভাইরাসের যে জিন নিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়, নতুন জিন তার থেকে প্রায় পুরোটাই আলাদা হয়। তাই নতুন জিনের ওপর ভ্যাকসিন কতটা কাজ করবে সে নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়। আর করোনা এত তাড়াতাড়ি জিনের গঠন বদলে ফেলছে যে ভ্যাকসিনের প্রভাব কতদিন টিকে থাকবে সে নিয়েও চিন্তা বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। তবে ডিএনএ ও আরএনএ টেকনোলজিতে যে সমস্ত ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে সেগুলো এই নতুন স্ট্রেনের ওপরে কার্যকরী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সেরামের টিকা অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনোভাইরাস নিয়ে তৈরি। এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ভেক্টর হিসেবে কাজ করবে, শরীরে ঢুকে স্পাইক প্রোটিনের নকল করে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উদ্দীপিত করতে দেহকোষকে। অন্যদিকে, ভারত বায়োটেকের টিকাও করোনার নতুন স্ট্রেন নির্মূল করার ক্ষমতা রাখে বলে আগেই জানানো হয়েছে। এই ভ্যাকসিনে রয়েছে এমন অ্যাডজুভ্যান্ট যা টিকার কার্যক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি মোডার্না ও ফাইজারের টিকা নতুন স্ট্রেনের ওপর কার্যকরী হবে বলে জোর দিয়েই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফাইজার ঘোষণা করেছে, দরকার হলে শুধুমাত্র করোনার নতুন স্ট্রেনের জন্যই মেসেঞ্জার আরএনএ বা বার্তাবহ আরএনএ-কে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত নতুন ভ্যাকসিনও তৈরি করতে পারে তারা।