পার্থ সারথি নন্দী , বনগাঁ: কোনো মাপ কাঠিতেই বোঝা যাচ্ছে না আবহাওয়ার মতিগতি। সূর্যের কড়া মেজাজের মধ্যেই হঠাৎ আকাশ কালো করে মেঘের ঘনঘটা। তারপরেই নামছে বৃষ্টির ধারা। কখনও মুষলধারে আবার কখনও ঝিরিঝিরি। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনা জারি রয়েছে৷
অন্যদিকে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ফের একশো ছাড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলয়৷ যদিও দৈনিক সংক্রমণ ১০০ ছাড়ানো নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানিয়েছেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এত বড় জেলায় দৈনিক ১০০ আক্রান্ত উদ্বেগের বিষয় নয়। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ দেখুন ভিডিও:
এক দিকে আবহাওয়ার ভ্রুকুটি অন্যদিকে করোনার রক্ত চক্ষুর মধ্যেই চলছে পুজোর প্রস্তুতি। কোথাও সবে খুঁটি পুজো করে বাঁশ বাধা শুরু হয়েছে, আবার কোথাও প্যান্ডেলের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই।
পুজোর বাকি আর মাত্র মাস খানেক। তাই জোর কদমে চলছে শহরের মণ্ডপ তৈরির কাজ। কোথাও তক্তা পাতা হচ্ছে, কোথাও আবার ওয়েলেন্ডিং-এর কাজ, কোথাও আবার চলছে চাটাই বাধার কাজ। সকাল থেকে কাজ শুরু হলেও মাঝে মধ্যেই বাধ সাধছে বৃষ্টি। প্রতিমা শিল্পী গোপালপাল ও লক্ষণ পাল, জানান-
কাজ বন্ধ করে মাথা বাঁচাতে ব্যস্ত কারিগররা। আবার বৃষ্টি থামলেই আসছে কাজের গতি। হাতে সময় কম, মাথায় ভাবনা অনেক। তাই সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই কারিগরদের। একে রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। সেইরকমই করোনার প্রতিকূলতার সঙ্গেই চোখ রাঙাচ্ছে প্রকৃতি।
আগে একই সঙ্গে দু’তিন জায়গার মন্ডপের কাজ থাকত শম্ভূ পাত্র- শুভেন্দু ভুইয়াদের। কিন্তু এবার জুটেছে এক জায়গার কাজ। সেই কাজেই মন-প্রাণ উজাড় করে দিচ্ছেন তাঁরা। শম্ভূর কথায়,”করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই পরিস্থিতি খারাপ, তাই যেটুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে কাজ করছি। প্যান্ডেলের কাঠামো তৈরি করতে করতে বললেন, ‘কাজ এগোচ্ছে, ভালই।’ তবে করোনার জন্য ১০-১২ জন করে কাজ করছে প্যান্ডেলে। মানতে হবে যে সামাজিক দুরত্বের বিধি।
প্রস্তুতি তো চলছে। কিন্তু ক্লাব কর্তাদের মাথায় ঘুরছে ২০২০ সালের কলকাতা হাইকোর্টের রায়। সেই কথা মাথায় রেখেই মণ্ডপ সজ্জা করছেন কর্তারা। যদি আগের বছরের মতো দর্শক ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা নিষেধ জারি হয়, সেই কথা মাথায় রেখেই খোলামেলা মণ্ডপ তৈরি করছেন ক্লাব কর্তারা।
শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাবের এক কর্তা শঙ্কর আঢ্যর কথায়, ‘আগের বছরের হাইকোর্টের রায়কে মাথায় রেখেই এবারের থিম ভাবা হয়েছে। দর্শকরা যাতে বাইরে থেকেই প্রতিমা ও মন্ডপ দর্শন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
ক্লাব সম্পাদক বিশাল পাল জানালেন করোনায় মন খুব খারাপ তবে পুজো আসছে মন্ডপ তৈরী হচ্ছে মাযের আগমনে বার্তা ফের আনন্দে ভরিয়ে দেবে সবার মন, এবারে ইন্দোনেশিয়ার একটি শিব মন্দিরের আদলে মন্ডপ সজ্জা হচ্ছে৷
একই কথাই শোনা গেল মাতৃমন্দির বা মতিগঞ্জ ঐক্যসন্মেলনী এবং প্রতাপ গড় স্পোর্টিং ক্লাবের মত শহরের দুর্গাপুজো কমিটিগুলোতেও।
তাঁদের কথায় ‘এমনই ভাবনা নিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে যাতে যদি শেষ মুহূর্তে হাইকোর্টের তরফে আগের বছরের মতো নির্দেশ আসে তাহলে যাতে দর্শক মন্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করতে পারে সেই ব্যবস্থা প্রথম থেকেই নেওয়া হচ্ছে।’
বনগাঁর অভিযান সংঘের সদস্য অরুণাংশু বিকাশ দাস এর কথায়, ‘আগের বছরের হাইকোর্টের রায়কে মাথায় রেখেই এবারের থিম ভাবা হয়েছে। দর্শকরা যাতে বাইরে থেকেই প্রতিমা ও মন্ডপ দর্শন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ সেই একই কথাই শোনা গেল কুঠিবাড়ি স্পেটিংক্লাব বা ৩নং টালিখোলা এগিয়েচলো সংঘ ক্লাবের মত শহরের দুর্গাপুজো কমিটির কর্মকর্তাদের মুখে৷
এখনও পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট বা রাজ্য সরকারের তরফে দুর্গাপুজো নিয়ে কোনো ঘোষণা করেনি। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে একটি গাইডলাইন প্ৰকাশ করেছে মাত্র। তবে তার মধ্যেও আগেরবারের হাইকোর্টের রায়কে মাথায় রেখেই পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা সহ জেলার দুর্গাপুজো কমিটিগুলো।
২০২০ সালে দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে মণ্ডপে দর্শক ঢোকার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল। বড় পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপে একসঙ্গে ৪৫ জন ও ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ১৫ জন থাকার অনুমতি ছিল। কিন্তু, এবার এখনও হাইকোর্টের তরফে কোনো ঘোষণা আসেনি, তাই আগের নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখেই মণ্ডপ তৈরি করছে কলকাতা সহ জেলার ক্লাবগুলো।