এবার ভোটে কমিশনের কড়া নজর সর্বত্র! অর্থশক্তি, পেশীশক্তির আস্ফালন বরদাস্ত নয়,আমলা-পুলিশকে হুঁশিয়ারি!

0
1108

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এবার ভোটে সিভিক পুলিশ এবং ভলান্টিয়ারদের ব্যাবহার করা হবে না৷শুক্রবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনের সুনীল অরোরা সেই কথাটাই স্পষ্ট করে বললেন। সেই সঙ্গে আমলা ও পুলিশকে হুঁশিয়ার করে বললেন, “গত বার নির্বাচনের সময়ে দুই আইএএস অফিসার ও পাঁচ জন পুলিশ কর্তাকে বদলি করতে হয়েছিল। এ বার বলছি, দেখবেন সে সবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়”।
বাংলায় এক শ্রেণির পুলিশ ও আমলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীরা স্পষ্ট বলেন, তাঁরা দলদাস। রাজনৈতিক প্রভুর নির্দেশে কাজ করেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অকাতরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে দ্বিধা করেন না। এমনকি আবদুল মান্নানদের এও অভিযোগ, কোনও কোনও জেলায় পুলিশ সুপাররা তৃণমূলের জেলা সভাপতির মতো আচরণ করেন। কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছেও বৃহস্পতিবার তাঁরা সেটা জানিয়েছেন।

এর পরই এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিক বৈঠক করেন। সুনীল অরোরা বলেন, “পশ্চিমবাংলার আইন-শৃংখলার উপর আমরা নজর রাখছি। আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক।”
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী কি তিন মাস আগেই মোতায়েন হবে। জবাবে তিনি বলেন, “এ ভাবে সময়, মাস ধরে বলা যায় না। প্রয়োজন মতো মোতায়েন করা হবে সেন্ট্রাল ফোর্স।” “নির্বাচনী আচরণবিধি লাঘু হওয়ার সাথে সাথেই বাইক রেলী বন্ধ ,বাইক মিছিল করা যাবে না।”

“কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্য পুলিশের সাথে ক্লোজ কো-অর্ডিনেশন থাকবে।”
“নির্বাচনে অর্থের বেলাগাম ব্যবহার ও পেশীর ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। ”
“এবারের নির্বাচনে তিনজন অবজারভার থাকবেন। স্পেশাল অবজারভার, যিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন। দুই, জেনারেল অবজারভার এবং তিনি এক্সপেন্ডিচার অবজারভার।”
“এ বার বুথের সংখ্যা ২২ হাজার বেড়ে হচ্ছে ১ লক্ষ ১ হাজার। সমস্ত বুথ থাকবে গ্রাউন্ড ফ্লোরে।”
“সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে ভোট চলাকালীন যদি কমিশনের কোনো কর্তা বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এক বছরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”

জেলা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যাবতীয় রিপোর্ট তাঁদের থেকে নেবে কমিশন। তার ওপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট সমস্যার জায়গুলোতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানায় কমিশনেনর ফুল বেঞ্চ। এছাড়াও মডেল কোড চালু হবার পর বাইক র‍্যালির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক থাকবেন, তাঁদের বাছাইয়ের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাঁদেরকেই বাছা হচ্ছে যাঁদের আগে থেকেই নির্বাচনের সময় বাংলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। জঙ্গলমহল বা পাহাড়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যাতে তাঁদের ‘মাটি’ চিনতে কোনও অসুবিধা না হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে রাজ্যে হিংসার পরিবশে তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলে চিফ ইলেকশন কমিশনারের কাছে জানান মুখ্য এবং স্বরাষ্ট্র সচিব। এই বিষয়টি নিয়েও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কমিশন। যদিও আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে একটুও বেচাল বরদাস্ত করা হবে না বলেও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। কোনওরকম গাফিলতি দেখলে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সাসপেন্ড করা হবে বলেও জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, এদিন রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে কমিশনের কর্তারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মাও। তাঁর রিপোর্টেও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়নি বলে কমিশন সূত্রে খবর। গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টের জন্য শুক্রবারই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। নির্বাচন কমিশনের তরফে আজই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে৷

অন্যদিকে, তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিএসএফপ্রসঙ্গে করা অভিযোগ নিয়ে সুনীল অরোরা বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষায় দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা ফোর্স হল বিএসএফ। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ খুবই দূর্ভাগ্যজনক।’ সূত্রের খবর, এদিন এডিজি আইনশৃঙ্খলার কাছে কমিশন জানতে চায়, সিভিক ভলান্টিয়াররা কী প্রক্রিয়ায় কাজ করেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট কমিশনে ইতিমধ্যেই জমা করেছে রাজ্য প্রশাসন।

অন্যদিকে, বিহার মডেলে হেঁটেই বঙ্গে ভোট করানোর পথে মত দিয়েছে কমিশন। ভিড় এড়াতে বুথ প্রতি ১ হাজার ভোটার নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়াও কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত পোলিং স্টেশন, গ্রাউন্ড ফ্লোরে করতে হবে। বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সমস্ত রকমের সুযোগ সুবিধা রাখার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। কোভিডের কারণে এবারে বাংলায় ভোটের সংখ্যা ধার্য করা হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৭৯০।

তবে এসবের মধ্যেও রাজনৈতিক অশান্তি এড়িয়ে বাংলায় ২১-এর হাইভোল্টেজ নির্বাচন অবাধ এবং নির্বিঘ্নে করানোটাই এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Previous articleমোদী কলকাতায় আসার আগেই মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজীব, কী বললেন তিনি? জানুন
Next article‘কানকাটা, নাককাটাদের বের করেছে’, এবার শুভেন্দুর নিশানায় কারা জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here