দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমানায় অর্থাৎ গত প্রায় দশ বছরে নতুন ১২১২টি কারখানার পত্তন হয়েছে বলে জানাল শাসক দল।
একুশের নির্বাচন আসছে। তার আগে বৃহস্পতিবার তপসিয়ায় তৃণমূল দফতরে ওই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ নেতা নেত্রীরা। তাতেই দাবি করা হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলায় ৮৩২২টি কারখানা ছিল। ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে ৯৫৩৪। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারখানার মজুরদের গড় আয় বছরে ১.৩ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.৩ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা বেড়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক দশকের জমানায় উন্নয়নের ‘রিপোর্ট কার্ড’ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আর সেখানেই গত দশ বছরে দশটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের কথা তুলে ধরলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীর মতো শীর্ষ নেতারা সেই সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তাতে যেমন রয়েছে রাজ্যবাসীর গড় আয়ের প্রসঙ্গ, তেমনি রয়েছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নানান উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা। তৃণমূল ভবনে আজ দুপুরে দলের বর্ষীয়ান মন্ত্রী ও সাংসদরা এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করলেন।
২০১১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তৃণমূল সরকার কী কী প্রকল্প গ্রহণ করেছে, তারই সাফল্যের সংকলন গ্রন্থ এই ‘রিপোর্ট কার্ড’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে জমি কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে হালে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ পর্যন্ত নানা ধরনের পদক্ষেপ করেছেন। মমতা জমানায় কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, ঐক্যশ্রী, জল ধরো জল ভরো, চা-সুন্দরী সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলিতে কী কী সাফল্য মিলেছে, কতটা কাজ এগিয়েছে তাও তুলে ধরা হয়।
এদিন তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, রাজ্যবাসীর গড় আয় গত এক দশকে দ্বিগুণ বেড়েছে। বেড়েছে রাজ্যের জিডিপি’ও। গত ১০ বছরে রাজ্যে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫০টি কলেজ-সহ একাধিক নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। বাংলা আবাস যোজনায় নিজের ঘর পেয়েছেন বাংলার প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ। নির্মল বাংলা প্রকল্পে তৈরি হয়েছে শৌচাগার। কর্মসংস্থানের দিকেও বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলা। সেইসমস্ত পরিংখ্যানও তুলে ধরা হয় এদিন৷
Today, with immense pride, we are happy to release #TMCReportCard which highlights the key milestones, across 11 sectors, that @MamataOfficial has achieved in the past 10 years!
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) December 10, 2020
Didi continues to take Bengal to greater heights with new fervor! #TMCReportCard pic.twitter.com/6RMfSZXCn3
তৃণমূল জমানায় উন্নয়নের এই ‘বেঙ্গল মডেল’ নিয়েই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই প্রকল্পগুলি ছাড়াও আর্থিক সূচক, মানবোন্নয়ন সূচক-সহ বিভিন্ন সূচকের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ গত এক দশকে কতটা এগিয়েছে, তার বিবরণ এই রিপোর্ট কার্ডে রয়েছে। উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের অন্যান্য নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তার উপরেও আলোকপাত করা হয়েছে বলে খবর।
তৃণমূল সরকারের নানা উন্নয়নী প্রকল্প ইতিমধ্যে ভিন রাজ্যের রাজনীতিবিদদের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়ে ভিন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলেও চর্চা শুরু হয়েছে। বুধবারই যেমন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা শত্রঘ্ন সিনহা ওই কর্মসূচির প্রশংসা করেন। টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানুষের বাড়ি বাড়ি সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি নামে এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। যা বলার মতো একটি বিষয়।’
স্কুলে যেমন ছেলেমেয়েদের রিপোর্ট কার্ড বেরোয়, এও অনেকটা তেমনই দেখতে। সেই রিপোর্ট কার্ডের উপরের ছবিতে লেখা রয়েছে বাংলার গর্ব মমতা। আর নিচে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার লেখা নেই। নামের স্থানে লেখা রয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ। অনেকে মনে করছেন, এর মধ্যেও একটা বার্তা রয়েছে।
সে যাক রিপোর্টের একদম শেষে রয়েছে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ। ‘বাংলায় আজ প্রতি হাতে কাজ’ শীর্ষক সেই অংশে দাবি করা হয়েছে, গত ১০ বছরে ১.৬৩ কোটি লোককে একশ দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় কাজ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ১.৩৫ কোটি মানুষ কাজ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়। তবে এরা যে সবাই বর্তমান জমানায় কাজ পেয়েছেন সেই দাবি করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ২০১২ সালে বাংলায় ৩৪.৬ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল, তা বেড়ে হয়েছে ৮৯ লক্ষ।
রিপোর্টের শুরুতেই বলা হয়েছে, দ্বিগুণ আয় এই বাংলায়। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১০ সালে রাজ্যে মাথা পিছু আয় ছিল ৫১,৫৪৩ টাকা। তা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ১,০৯,৪৯১ টাকা।
এদিন রিপোর্ট প্রকাশের পর লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি একে রিপোর্ট বলব না। বলছি শ্বেতপত্র।” এ কথা বলে সরকারের সাফল্য বর্ণনা করেন তিনি।
এই রিপোর্ট সম্পর্কে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমি রিপোর্ট দেখিনি। কারণ, ওটা তো মিথ্যা আর বুজরুকির সমাহার। তবে যা শুনছি তাতে তো একশো দিনের কাজেই একমাত্র কর্মসংস্থান হয়েছে দেখছি। ওতে মূল কৃতিত্ব তো কেন্দ্রের। দিল্লির প্রকল্প, দিল্লিরই টাকা। রাজ্য কী করল?” আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, “যে পরীক্ষা দিয়েছে, সেই নম্বর দিয়েছে, সেই নিজেকে সার্টিফিকেট দিয়ে বলেছে, তুমিই অনন্যা। এর বাইরে কিছু বলার নেই।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যের শাসকদল বিরোধীদের মোকাবিলা করতে কাদা ছোড়াছুড়ির রাস্তায় না-গিয়ে উন্নয়নের ইতিবাচক দিক নিয়েই প্রচারে থাকতে চাইছে। এই ইতিবাচক প্রচারকে আরও জোরদার করার জন্যই এ বার তৃণমূল নেতৃত্ব এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করলেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ হওয়ার পরই এই উন্নয়নের খতিয়ান নিয়েই একেবারে নিচুতলায় প্রচার চালাতে শুরু করবেন তৃণমূল কর্মীরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার চালানো হবে। বিজেপি ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা মাধ্যমে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার শুরু করেছে। সেই প্রচারের মোকাবিলায় ভোটের আগে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের বড় হাতিয়ার হতে চলেছে এই রিপোর্ট কার্ডই ।