দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তাঁকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসেই থাকবেন না শিবির বদল করবেন এথন তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনীতির অলিন্দ থেকে পাড়ার চায়ের আড্ডায়। আর এসবের মধ্যে কিন্তু নিজের মেজাজেই আছেন নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা। গত ৪৮ ঘণ্টায় বাংলার প্রতিটি সংবাদমাধ্যম জুড়ে কেবল তিনি। কিন্তু একটিও রাজনৈতিক কথা শোনা যাচ্ছে না নন্দীগ্রামের বিধায়কের গলায়। উল্টে নিজেকে নিয়ে জল্পনা বাড়ানোর আরও রসদের যেন যোগান দিয়ে চলেছেন তিনি। এমনকি বুধবারও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে সেই রহস্য বাড়িয়ে দিলেন শুভেন্দু। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেয়ালি করে বুধবার নন্দীগ্রামের বিধায়ক জানালেন, ‘আমি বাংলার ছেলে, আমি ভারতের ছেলে।’
বিশেষ সূত্রের খবর,অন্য দিকে বুধবার রাতেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের অন্দরে বার্তা দিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী বিষয় সংক্রান্ত অধ্যায় ‘ক্লোজ’ করে দেওয়ার জন্য৷ অর্থাৎ, এর পর আর শুভেন্দুর সঙ্গে কোনও আলোচনার অবকাশ রইল না।দলনেএীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের কথা অনুযায়ী, শুভেন্দুকে ছাড়াই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। বুধবার রাতে তিনি দলের এক প্রথমসারির সাংসদকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন। ওই সাংসদের কথায়, ‘‘দিদি বলেছেন, শুভেন্দু চ্যাপ্টার ক্লোজড। ওই বিষয়ে আর কোনও আলোচনা হবে না। আমরা আমাদের লড়াই লড়ব। আমাদের বিশ্বাস, আমরা এই কঠিন লড়াই নিজেদের জোরে জিতে আবার ক্ষমতায় ফিরব।’’
মঙ্গলবার তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর রাতেই নন্দীগ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। বুধবার নিজেই নীরবতা ভেঙে বর্ষীয়াণ সাংসদ সৌগত রায়কে হোয়াটসঅ্যাপ করে শুভেন্দু জানান, ‘আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।’ যা নতুন করে মোড় ঘুরিয়ে দিল রাজ্য রাজনীতির। এটা যে শুভেন্দুর অদূর ভবিষ্যতে তৃণমূল ত্যাগের স্পষ্ট ইঙ্গিত এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। তাই বৃহস্পতিবার শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর ১৩১তম জন্মদিবসে শুভেন্দু কী বার্তা দেন সেদিকে তাকিয়ে ছিল গোটা রাজনৈতিক মহলই। এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাসদর তমলুকে ক্ষুদিরাম স্মরণে পৃথক ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এড়িয়ে গিয়েছিলেন হলদিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম বির্ষাকীর অনুষ্ঠান ৷
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তিতে মালা দেওয়ার পরে হেঁটে রওনা দেন হ্যামিল্টন স্কুলে। তাম্রলিপ্ত জনকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে তমলুক হাসপাতাল মোড় থেকে হ্যামিলটন হাইস্কুল পর্যন্ত পদযাত্রায় শুভেন্দুর হাতে ছিল তেরঙা। সেখানে সভা করার পর গড়বেতায় শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তি উন্মোচন করতে যান তিনি। এই অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুভেন্দু কোন বার্তা দেন সেদিকেই নজর ছিল গোটা বাংলার। তবে সব কিছুতে জল ঢেলে অরাজনৈতিক সভায় সংক্ষিপ্ত ভাষণে কোনও ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্য করেননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তৃণমূল সম্পর্কে তমলুকের অনুষ্ঠান-মঞ্চ থেকে এদিন মুখ খোলেননি তিনি।
বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কোনও ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দু। তবে তাঁর বলা ‘‘আই অ্যাম সন অব বেঙ্গল’’ নিয়েই এখন জোড় চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলার রাজ্য রাজনীতিতে। এদিন নন্দীগ্রামের বিধায়ক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেবল বলেন ‘আমি বাংলার ছেলে, আমি ভারতের ছেলে।’ দাবি করেন, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ে যেভাবে ‘লড়াই’ করেছেন, সেভাবেই ‘বাংলার জন্য লড়াই’ করবেন। শুভেন্দুর এই কথা নিয়েই এখন কাটাছেরা চলছে। এদিকে এদিন শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ কনিষ্কের মুখে গেরুয়া মাস্ক ও কমলা টিকা দেখা যায়। স্বভাবতই এই রঙ ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে।
দু’তরফের দাবি, পাল্টা দাবি থেকে স্পষ্ট যে, নাটকীয় কিছু না ঘটলে তৃণমূল-শুভেন্দু আলোচনার দরজা আর খুলছে না। পূর্ব পরিকল্পনা মতো শুভেন্দু রবিবার প্রকাশ্যে তাঁর প্রকৃত অবস্থান জানান কি না সেটাই এখন দেখার৷