আজ গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’। এমনও একটি দিন যে পালিত হতে পারে তা ২০১৮ সালের আগে কেউ জানত না। পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ৩ জুন আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবস হিসেবে পালন করার কথ।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে তা পালিতও হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতে, সাইকেল হল শান্তি-সংস্কৃতির প্রতীক। সাইকেল চালানোর মধ্যে প্রছন্ন ভাবে সামাজিক সাম্য, শ্রদ্ধা আর সংযুক্তির বার্তা থাকে। থাকে সহিষ্ণুতাও। তাই বাড়তি গুরুত্ব দাও সাইকেলে। তা ছাড়া এখন সকলেই জেনে গিয়েছেন, সাইকেল চালানো নিজের এবং পরিবেশের জন্য ভাল। স্বাস্থ্য ভাল থাকে, নিজেকে ‘ফিট’ রাখা যায়। সাইকেল চালাতে ‘ফসিল ফুয়েল’ , মানে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হয় না। ফলে কার্বন নির্গমন হয় না। ক্ষতি হয় না পরিবেশের।
দূষণ এড়াতে সরকারি উদ্যোগে সাইকেল চালানোর সুবিধাগুলোকে প্রচার করা হয়। বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসের মতো পশ্চিমী দেশগুলিতেও ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় সাইকেল।
এমনকী কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও সাইকেল চালান। পরিবেশ বাঁচাতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন সাইকেলের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু যদি আপনি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে তাকান তাহলেও প্রতিদিন সাইকেল চালানোর উপকারিতাগুলো উপেক্ষা করতে পারবেন না।
ব্যস্ত জীবনযাত্রার দৌড়ে নিয়ম শরীরচর্চায় মন লাগে না বেশির ভাগ মানুষেরই। মরিং ওয়ার্কে যাওয়ার অভ্যাস থাকলেও এক-আধ দিন সেটাও মিস হয়ে যায়। এর পরিবর্তে আপনি যদি দিনের যে কোনও সময় সাইকেল চালান তাহলে একাধিক উপকারিতা মিলবে।
আজকের এই বিশ্ব সাইকেল দিবসে জেনে নিন রোজ সাইকেল চালানোর উপকারিতাগুলো কী-কী…
এখন মানুষ সহজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সাইকেলিং। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রকৃতির মাঝে সাইকেলে চালাতে এন্ডোরফিনস ও অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যার ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। নিয়মিত যারা সাইকেল চালান, তাদের কাছে এটা মেডিটেশনের মতো কাজ করে। এতে মনসংযোগও বেড়ে যায়। আর ফিজিকাল অ্যাংজাইটি কমে গেলে রাতে ঘুমও হয় অনেক ভাল।
ওজন কমাতে চান কিন্তু শরীরচর্চা করার সময় নেই। এই ক্ষেত্রে রোজ সাইকেলে করে অফিস যাতায়াত করুন। কৈশোরের দিনগুলো হয়তো ফিরে আসবে না। কিন্তু শরীর ঠিক থাকতে এতে। নিয়মিত সাইকেল চালাতে ওজন কমতে বাধ্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এক ঘণ্টা সাইকেল চালালে প্রায় ৫০০ ক্যালোরি ওজন কমে। একই সঙ্গে ওবেসিটি, ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। এর পাশাপাশি হার্ট খুব ভাল থাকে।
দৌড়ানোর মতোই সাইকেল চালানোর জন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হয়। এতে শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া দ্রুত চলতে থাকে। ফলে ফুসফুস ভালো থাকে ও কার্যক্ষমতা বাড়ে।
সাইকেল চালালে পায়েরও ব্যায়াম হয়। প্রতিদিন সাইকেল চালালে পায়ের পেশিতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। এতে পায়ের জোর বাড়ে এবং বার্ধক্যের সঙ্গে ‘হাঁটুতে ব্যথা’-এর সম্মুখীন হতে হয় না। সাইকেল চালানোর অভ্যাস আদতে আপনার উপকারই করে। দু-চাকার মোটরসাইকেল বা চার চাকার গাড়ির পরিবর্তে যদি সাইকেলকে সঙ্গী করেন তাহলে পরিবেশ ও আপনার স্বাস্থ্য দুটোই ভাল থাকবে।