দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শহরজুড়ে শীতের মরশুম। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিলই। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার সকালেই এক ধাক্কায় প্রায় ২ ডিগ্রি পারদ পতন হল কলকাতা শহরে। সোমবার যেখানে শহরের তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠায়, মঙ্গলে সেখানে তিলোত্তমার তাপমাত্রা নেমে দাঁড়াল ১৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে নভেম্বরের শেষদিকে কনকনে ঠান্ডার জন্য প্রস্তুত শীতপ্রিয় বাঙালি। যদিও শীত থিতু হতে এখনও বেশ কিছুটা দেরি হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।

আপাতত হাল্কা শীতের আমেজে মজে রয়েছে বাঙালি। বাঙালির কাছে শীতকাল মানেই একগুচ্ছ উৎসব, মেলা, পিকনিক, সন্ধেবেলা জমাটি আড্ডা। উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁর বাসিন্দা সুকুমার দেবনাথ। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নিয়ম করে সকালে হাঁটতে বেরোন। শীতের সকালে হাঁটতে কেমন লাগে জিজ্ঞেস করায় জানালেন, ‘এখনও তো পুরোপুরি শীত পড়েনি। এই ওয়েদারে সকালে হাঁটা, ব্যায়াম করার লোক প্রচুর। গরমকালের মত প্যাচপ্যাচে ঘাম নেই, সকালের দিকে সময়টা পাওয়া যায় অনেকটা। তারপর বাড়ি ফেরার পথে দোকানে বসে সবাই মিলে এক কাপ চা আর সঙ্গে খবরের কাগজ। এর থেকে বেশি মজা বাঙালি আর কিসে পাবে বলুন।”

শীতের আমেজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ বেড়েছে খাওয়াদাওয়াতেও। কমলালেবুর দাম চড়া হলেও লোকাল ট্রেনে ঠাণ্ডা জলের বদলে এখন হাঁক বাড়ছে লেবু বিক্রেতাদের। মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য বাজারে এসে গিয়েছে নলেন গুড়।

কাশ্মীরের দিক থেকে শালওয়ালারা অন্য বছরের মত চলে এসেছে শহর কলকাতার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন শহরেও। গত দুটো বছর করোনার কারণে ব্যবসা মার গেছে। সারা শীতকালটা বাড়িতে বাড়িতে শাল, ফিরহান বিক্রি করছে তারা। শীতের সকালে মাঠে একদিকে চলছে ব্যায়াম, অন্যদিকে জমে গিয়েছে ক্রিকেট ম্যাচ।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কলকাতা সহ জেলার বাজারগুলিতে রাস্তার দু’ধারে দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি দোকান। খুব কম দামে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে শীতের পোশাক। জ্যাকেট থেকে শুরু করে সোয়েটার কি নেই সেখানে। অফিসযাত্রী বলুন কি পথচলতি মানুষ, দরদাম করে কেনাকাটা করছেন। জমিয়ে শীত না পড়লে কি আর সেসব কাজে লাগবে!  

সেখানকারই এক বিক্রেতা সুজন ঘোষ। বিক্রিবাট্টার কী অবস্থা জানতে চাইলে উত্তর এল, ‘এখনও সেরকমভাবে শীত না পড়ায় আপাতত হাফ সোয়েটার, হাতকাটা জ্যাকেট নিয়ে বসেছি। এখনও যে খুব একটা লাভের দেখা পেয়েছি সেটা বলব না। তবে আশা করছি এবারে ঠান্ডাটা পড়বে আর মানুষের ভিড়টাও ভালই হবে।’

আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরের মতো এবারও শীত থিতু হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। ফলে জাঁকিয়ে শীতের জন্য আরও বেশ কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে রাজ্যবাসীকে। তবে নভেম্বরের শেষে খানিকটা পারদ পতনের জন্য শীতের আমেজ বজায় থাকবে। আগামী কয়েকদিন শুষ্ক আবহাওয়াই থাকবে শহরজুড়ে।

কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় অব্যাহত থাকবে পারদ পতন।চলতি সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে পারদ পতনের সম্ভাবনা শহরে। স্বাভাবিকের নীচে নামবে তাপমাত্রা। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে তাপমাত্রা অনেকটাই কমবে। কোনও জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় দেখা যাবে কুয়াশা। শিশিরও পড়তে দেখা যাবে। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও রয়েছে পারদ পতনের সম্ভাবনা। সেখানেও জাঁকিয়ে শীত
কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। আপাতত কোনও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।

এদিকে, দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সুস্পষ্ট হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপ দক্ষিণ ভারত অভিমুখী। এটি ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিকে এগচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় এটি শক্তি বাড়াবে। এটি অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাডু উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে জানা যাচ্ছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টি, তুষারপাত উত্তর পশ্চিম ভারতে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা চলে যেতেই অবাধ উত্তর পশ্চিমের শীতল হাওয়া। বুধ, বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে সেখানে। আন্দামান ও দক্ষিণ ভারতে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা। তামিলনাড়ুতে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। তামিলনাড়ু ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, পন্ডিচেরিতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে। মৎস্যজীবীদের মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here