দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা: সোমবার থেকে বিধিনিষেধ চালু হলেও কার্যত ঠাসাঠাসি ভিড়ের মাঝেই লোকাল ট্রেনে চলছে ঝুঁকির যাত্রা। সরকারি নির্দেশ কার্যত উধাও স্টেশনে স্টেশনের অফিস টাইমের ভিড়ে। ট্রেন না বাড়লে এই অবস্থা চলবে এমনটাই মনে করছেন যাত্রীরা। ভিড়ের মাঝে শিকেয় উঠেছে ন্যূনতম কোভিড বিধি। এমনই আশংকার ছবি দেখা গেল সোমবার রাজ্যে ফের কড়া বিধিনিষেধ চালু হওয়ার প্রথম দিনেই।
গতকাল নবান্ন থেকে জারি কড়া সরকারি নির্দেশ একপ্রকার উধাও ছিল বারাসাত স্টেশনের হাসনাবাদ শিয়ালদা বা বনগাঁ শিয়ালদা সমস্ত ট্রেনগুলিতেই। বাদুড়ঝোলা ভিড় চোখে পড়েছে সর্বত্র। বেশিরভাগ মানুষেরই সঙ্গে মাস্ক আছে, কিন্তু কারও গলায় তো কারও মাক্স থুতনিতে। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করানোর কথা থাকলেও সমস্ত ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে এদিন সকালে।
ভিড়ের নাম রীতিমতো বিখ্যাত বনগাঁ লোকালে মাত্র অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব বলেই জানাচ্ছেন ভুক্তভুগী যাত্রীরা। সকালের মতোই সন্ধ্যাতেও সমস্যা আরও বাড়বে বলেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন যাত্রীরা। তাঁদের আশংকা, সাতটায় লোকাল ট্রেন বন্ধ হলে নিত্যযাত্রীদের প্রভূত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
প্রসঙ্গত, করোনার বাড়বাড়ন্তের মোকাবিলায় ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই লোকাল ট্রেন পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ, সোমবার থেকে এই নিয়ন্ত্রণ লাগু হচ্ছে বলে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর। প্রান্তিক স্টেশন থেকে রাতের শেষ ট্রেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই যাতে রওনা হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে রেল।
লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমালে ভিড় আরও বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় দিনের বেলা পরিষেবার সময়ে নতুন করে ট্রেন কাটছাঁট করা হবে না বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরনো সূচি মেনেই ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলও জানিয়েছে, লোকাল ট্রেন পরিষেবা মিলবে ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলবে পুরনো সূচি মেনেই।
নবান্নের রবিবারের নির্দেশে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চালানোর কথা বলা হয়েছে। লোকাল ট্রেনে কী ভাবে যাত্রীর ভিড় ৫০ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। রেল আধিকারিকেরা জানান, যাত্রীরা যাতে একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সফর না-করেন, সেই জন্য প্রচার চালানো হবে। সরকারি ও বেসরকারি অফিসে হাজিরা ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনায় যাত্রী-সংখ্যা আগের চেয়ে খানিকটা কমবে বলেও আশা করেছেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা দেখা যাচ্ছে একেবারেই অন্যরকম। আর তাতেই বাড়ছে উদ্বেগ ও ঝুঁকি। কারণ স্টেশনে প্রবেশকাল ভিড় নিয়ন্ত্রণের সরাসরি কোনও ব্যবস্থাই যে সেভাবে নেই।
লোকাল ট্রেন ৭টা পর্যন্ত মানে কী?
রবিবার বিকেলে নবান্নের ঘোষণার পর থেকেই হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের। সেসব প্রশ্ন সোশ্যাল ওয়ালে মস্করার মিম হয়েও ঘুরছে। সব দেখেশুনে, অবশেষে ব্যাখ্যা দিল রেল।
নবান্ন থেকে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেন সন্ধে সাতটার পর চলবে না। এতেই তৈরি হয় ধোঁয়াশা। ধরা যাক সন্ধেবেলা ৬টা ৩৫ মিনিটে হাওড়া থেকে আপ বর্ধমান লোকাল ছাড়ে। বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা দেওয়া সেই ট্রেন শেওড়াফুলি পৌঁছয় সন্ধে সাতটায়। তাহলে আজ থেকে কী হবে? ওই ট্রেনটি কি শেওড়াফুলিতেই থেমে যাবে?
রেলের তরফে বলা হয়েছে, সাতটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়া হবে। যদি দেখা যায় হাওড়ায় সন্ধে ৬টা ৫৮ মিনিটে কোনও বর্ধমান লোকাল রয়েছে তাহলে তা ছাড়বে এবং বর্ধমান পৌঁছবে। বর্ধমান থেকে হাওড়াগামী ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই। এই একই নিয়ম বলবৎ শিয়ালদহ ও হাওড়ার সমস্ত শাখায়।
অন্যদিকে সন্ধে সাতটার পর স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চালাবে রেল। তাতে সরকারি কর্মচারী ও জরুরি বিভাগের সঙ্গে যুক্তরাই উঠতে পারবেন। অন্য কেউ উঠলে জরিমানা নেওয়া হবে।
সন্ধে সাতটার ধন্দ দূর করতে রেল জানিয়েছে, সাতটার আগে পর্যন্ত যে ট্রেন থাকবে সেটাই হবে লাস্ট লোকাল। অর্থাৎ যদি দেখা যায় শিয়ালদহ থেকে একটি কৃষ্ণনগর লোকাল রয়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে তাহলে সেটাই হবে শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর যাওয়ার শেষ যাত্রীবাহী লোকাল।