দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। পার্থ-অনুব্রত গ্রেফতারির পর এই প্রথমবার। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বিজেপি। আজ বিধানসভায় এই নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব আনবে তৃণমূল। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই দুর্নীতির ইস্যুতে কামান দাগবে বিজেপিও। সব মিলিয়ে আজ তুমুল বাগযুদ্ধে সরগরম হবে কক্ষ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, ইডির বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আজ বিধানসভায় প্রস্তাব আনছে সরকার। বিধানসভায়, স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ”আসন্ন অধিবেশনে সরকারের তরফে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব আনা হবে। আমিও মনে করি বিধানসভায় এ বিষয়ে আলোচনা দরকার৷” আজ সেই প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এদিকে আজই বিধানসভার অধিবেশনে মুখোমুখি হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। পার্থ-অনুব্রত গ্রেফতারির পর এই প্রথমবার দুই শীর্ষ নেতা মুখোমুখি। সব মিলিয়ে আজ তুমুল বাগযুদ্ধে সরগরম হতে চলেছে বিধানসভার কক্ষ।
গত কয়েক মাস ধরেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল। পার্থ-অনুব্রতর গ্রেফতারি, মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশি অভিযান, কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ। এই সব ইস্যুকে সামনে রেখে মাঠে ময়দানে সরব ঘাসফুল শিবির। শুধুই নিন্দামন্দ, সমালোচনার ঝড় নয়। এজেন্ডার টক্করে পাল্টা ময়দানে নেমেছে রাজ্যের সংস্থাও। পুরনো মামলা সাজিয়েই কোমর বেঁধে আসরে সিআইডি। তাতে আবার পাল্টা বাগযুদ্ধে বঙ্গবিজেপিও।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগকে কার্যত সমর্থন করে অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, রাজ্যে বিশেষ করে সরকারি দলের বিধায়কদের যেভাবে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে তাতে আমরা আতঙ্কিত। তদন্তের নামে রাজ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এটা বাঞ্ছনীয় নয়।”
সম্প্রতি, রাজ্যের শিক্ষা দূর্নীতি কাণ্ডে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন। এর পর, গরু ও কয়লা পাচার কাণ্ডে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ফিরহাদ হাকিম, অরূপ রায়, মলয় ঘটক-সহ একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়ক ইডি ও সিবিআই-এর নজরে। এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে পাল্টা ময়দানে নেমেছে তৃণমূলও।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভায় এই ইস্যুতে সরকারি ভাবে প্রস্তাব আনার কথা বলে এবার, সেই প্রতিবাদকে রাজনীতির ময়দান থেকে বিধানসভায় তুলে আনল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।” বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ”ইডির তদন্তে, ওদের খাট, আলমারির তলা থেকে বস্তা বস্তা টাকা বেরচ্ছে। তাই ওরা আতঙ্কিত হয়ে এসব করছেন।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, “আসলে ওরা যে ভয় পেয়েছেন সেটা নিজের মুখেই বলে ফেলছেন ওদের নেতারা। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে কোন রাজ্য সরকার এ ধরনের প্রস্তাব আনতে পারে না।বিধানসভায় এ ধরনের প্রস্তাব এলে বিজেপি তার বিরোধিতা করবে৷” বিজেপি-র মতে, এর আগেও কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যপাল, বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি-সহ একাধিক ইস্যুতে বিধানসভায় কেন্দ্র বিরোধী প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল। সংখ্যাধিক্যের জোরে এবারেও এই প্রস্তাব ধনি ভোটে পাশ হলেও, সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতাদের দূর্নীতি তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরোধিতা করে আনা এই প্রস্তাব জনতার আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রস্তাবের পাল্টা সওয়াল করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিনা যুদ্ধে যে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না তা আগেই স্পষ্ট করেছে বঙ্গবিজেপি। প্রস্তাবের বিরোধীতায় আগেই সরব হয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। গত বৃহস্পতিবারই পরপর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল বঙ্গপদ্ম। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রস্তাব নাকচ করলেও গেরুয়া শিবিরের দাবি, দুর্নীতি হয়েছে বলেই রাজ্যে তদন্তে নামতে হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে।
এবার মুখোমুখি দুই শিবিরের দুই সুপ্রিমোই। একদিকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে শাসকদলের নিন্দা প্রস্তাব। বক্তা খোদ মমতা। অন্যদিকে, দুর্নীতি ইসুতে অলআউট অ্যাটাকে শান শুভেন্দুর। দুই মহারথীর বাগযুদ্ধে অধিবেশন কক্ষের উত্তাপ যে কয়েকগুণ বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। সব মিলিয়ে এজেন্সি বনাম এজেন্সির লড়াইয়ে সরগরম বাংলা।