বর্ষণের জেরে এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। সেখানে মারা গিয়েছেন ৯১ জন। উত্তরাখণ্ডে মারা গিয়েছেন ১৬ জন, উত্তরপ্রদেশে মারা গিয়েছেন ১৪ জন, হরিয়ানায় ১৬ জন। পঞ্জাবে ১১ জন৷
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত প্রায় গোটা উত্তর ভারত। প্লাবন এবং লাগাতার ধসের জেরে বিদ্ধস্ত হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড।
আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন (আইএমডি)। ১৭ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরাখণ্ডে। জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। এখনও পর্যন্ত ওই দুই রাজ্যে আটকে বহু পর্যটক। বৃষ্টির কারণে প্লাবন এবং দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই উত্তর-পশ্চিম ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। বেহাল রাজধানী দিল্লি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সেনার সাহায্য চেয়েছেন।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। সেখানে মারা গিয়েছেন ৯১ জন। বৃষ্টির জেরে উত্তরপ্রদেশে মারা গিয়েছেন ১৪ জন, উত্তরাখণ্ডে মারা গিয়েছেন ১৬ জন, পঞ্জাবে ১১ জন, হরিয়ানায় ১৬ জন।
হাওয়া অফিসে পূর্বাভাস,উত্তরাখণ্ডে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ৷ দেহরাদূন আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ‘‘হরিদ্বার, পাউরি গাঢ়োয়ালে বৃষ্টির প্রভাব সব থেকে বেশি পড়তে পারে। ১৬ জুলাই, রবিবার বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। মানুষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’ বুধবার উত্তরাখণ্ডের রুরকিতে ৩০০ মিলিমিটার, হরিদ্বারের কাছে লাকসারে ২২০ মিলিমিটার, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে ২১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রুদ্রপ্রয়াগে বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।
ইতিমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দিল্লিতে। লালকেল্লা, রাজঘাট জলমগ্ন। জল ঢুকেছে সুপ্রিম কোর্টেও। ১৬ জুলাই, রবিবার পর্যন্ত বন্ধ দিল্লির সব স্কুল। শুক্রবারও দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জলের নীচে মুম্বই শহরের অনেক এলাকা। হিমাচলের লাহৌল, স্পিতিতে পাঁচ দিন আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হয়েছে ২৫৬ জন পর্যটককে।
সাংলা এবং কিন্নরে আটকে থাকা ১০০ জন পর্যটককে হেলিকপ্টারে করে তুলে আনা হয়েছে। ১৭ জুলাই, সোমবার থেকে আবার মধ্যপ্রদেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিসে। হাওয়া অফিসের পূ্র্বাভাস, ১৬ জুলাই, রবিবার উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে নতুন করে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে আগামী দিনে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্লাবিত দিল্লি। ভয়াবহ বৃষ্টিতে বানভাসি অবস্থা রাজধানীর। জনজীবন বিপর্যস্ত। যানচলাচল ব্যাহত। রবিবার অবধি সমস্ত স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে বলা হয়েছে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রয়েছেন ফ্রান্সে। সেখান থেকেই তিনি যোগাযোগ রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে। ফ্রান্স থেকে তিনি কথাও বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে। শাহর কাছ থেকে দিল্লির পরিস্থিতি জেনেছেন মোদী।
শাহ আশ্বাসও দিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনার জলস্তর নামবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অফিস থেকে বৃহস্পতিবার রাতে একটি টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্যা কবলিত দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। অমিত শাহজি গোটা পরিস্থিতি জানিয়েছেন মোদীজিকে। উদ্ধারকাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী রয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।’ প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে বাস্তিল ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মোদী।
এদিকে বাংলায় আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তির পাশাপাশিই বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দক্ষিণবঙ্গে ৷ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পরিমাণ ও ব্যাপকতা কিছুটা বাড়তেও পারে। শনি ও রবিবার উপকূলের জেলাগুলিতে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। ভারী বৃষ্টি হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। পার্বত্য এলাকা-সহ উপরের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। আলিপুরদুয়ারে প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা। প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা রয়েছে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলাতেও।
কালিম্পং, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা। বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হবে মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। আগামীকাল, শনিবার থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমবে উত্তরবঙ্গে। তবে উপরের পাঁচ জেলাতে হালকা মাঝারি বৃষ্টি চলবে। রবিবার থেকে আরও কমবে বৃষ্টির পরিমাণ।
ভারী বৃষ্টির ফলে উত্তরবঙ্গের নদীর জলস্তর বাড়তে পারে। তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, সঙ্কোশ নদীতে জল বিপদসীমা ছাড়তে পারে। নিচু এলাকার ফসলের ক্ষতি হবে, বিশেষ করে হর্টিকালচারের বেশি ক্ষতি হতে পারে। পাহাড়ি রাস্তায় দৃশ্যমানতা কমতে পারে। ধস নেমে যান চলাচল ব্যাহত হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
কলকাতায় আজ থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টি। রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। কলকাতায় আজ, শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৬৪ থেকে ৮৮ শতাংশ।