

বর্ষার প্রবেশের আগেই বাংলা জুড়ে চরম দুর্যোগ। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস মিলিয়ে মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় নিম্নচাপ। কয়েক দিন ধরেই সমুদ্রে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টির আবহ তৈরি হয়েছিল। সোমবার ঘূর্ণাবর্তটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই তার শক্তি বাড়তে শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় ওই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়। আজ বুধবার ওই নিম্নচাপ আরও কিছুটা শক্তি বাড়াবে -এমনটাই অনুমান আবহবিদদের। ওডিশার উত্তর উপকূলের কাছে তৈরি ওই নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির বড় অ্যালার্ট জারি করেছে হাওয়া অফিস। আগামী সাতদিন সব জেলায় ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডব জারি থাকবে। নিম্নচাপের জেরে সপ্তাহের মাঝামাঝি বৃষ্টির দাপট বাড়বে আরও।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর। বাকি সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে। আগামিকাল, বুধবার হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কলকাতা, হাওড়া ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির দাপট বেশি থাকবে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা রয়েছে। বাকি জেলায় ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার ও বুধবার ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় দুর্যোগের সতর্কতা জারি হয়নি। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা এবং দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে।
শুক্রবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুরে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা এবং দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহে ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে শনিবারেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার এক অধিকারীক জানাচ্ছেন ‘নিম্নচাপ মৌসুমি বাতাসের পথে বাধা হবে না। হিসেব বলছে শুক্রবার নাগাদ উত্তরবঙ্গে বর্ষা নেমে যাবে।’ তবে ওই নিম্নচাপের জন্যই বাংলা এ বারে আনুষ্ঠানিক ভাবে বর্ষা নামার ব্যাপারটা তেমন ভাবে বুঝতে পারবে না কারণ রাজ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি। এর সঙ্গে নিম্নচাপ–প্রভাবিত বৃষ্টি মিশে গিয়ে মে–র শেষ কয়েক দিন পরিস্থিতি বেশ খারাপ হতে চলেছে।

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ বুধবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত অর্থাৎ অতিভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হলুদ সতর্কতা জারি থাকছে কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।

অবস্থানগত কারণের জন্য নিম্নচাপ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলতে চলেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা ও ব্লক স্তরে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিঘা ও মন্দারমণিতে সমুদ্র উত্তাল ছিল। পর্যটকরা যাতে কোনও ভাবেই সমুদ্রে নামতে না পারেন, তার ঘোষণা চলেছে। তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবিরও। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের ৩১ মে পর্যন্ত সমুদ্রস্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।