ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে জল থইথই কলকাতা পুরসভা
বাঁকুড়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু হল হল দু’জনের, নদীর জলের তোড়ে ভেসে মৃত এক:
কলকাতা: দু’ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতেই নাকাল কলকাতা। যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তিও পোহাতে হলো সাধারণ মানুষকে। কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুরে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয় দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে। আর তার পরেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকা। তার জেরে অফিসপাড়া থেকে বসতি এলাকা বহু রাস্তাতেই জল দাঁড়িয়ে যায়। দেখুন ভিডিও
কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গায় জোয়ার থাকার কারণে দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত সমস্ত লকগেট বন্ধ ছিল। ফলে শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা জল সরতে সময় লাগে। অনেক এলাকা থেকেই জল নামতে রাত হয়ে যায়। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হন পথচারীরা।
আমহার্স্ট স্ট্রিট, মানিকতলা, মহাত্মা গান্ধী রোড, ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায়। গড়িয়াহাট মেন রোড, রাজা এসসি মল্লিক রোড, আলিপুর, বেহালার বিভিন্ন রাস্তাতেও রাত পর্যন্ত জল জমে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। বৃষ্টি এবং জল জমার কারণে রাস্তায় যানবাহনের গতি কমে যায়। শুরু হয় যানজটও।
নিম্নচাপও ঘূর্ণাবর্তে জোড়া দাপটে বাংলা থেকে এখনই ভারী বৃষ্টি কমার কোনও লক্ষ্মণ নেই। এমনটাই বলছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে আকাশ মেঘলা থাকায় বৃষ্টি হলেও আদ্রতাজনিত অস্বস্তি অনুভূত হবে।
দুপুর থেকেই শহরে ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। ভারী বৃষ্টিতে শহরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পুরসভার কন্ট্রোল রুমে বসলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কন্ট্রোল রুম পরিদর্শনে পুরসচিব স্বপন কুণ্ডু, নিকাশি বিভাগের ডিজি শান্তনু ঘোষ।
কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ঠনঠনিয়ায় পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। তৈরি হয়ে গেলে এটুকুও জল জমবে না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দু’দিনের বৃষ্টিতে এই সব এলাকার অনেক পাড়াই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জল কিছুতেই সরছে না। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা পর্ণা শীলের কথায়, ‘বৃষ্টি হলেই আমাদের জমা জল ঠেলে যাতায়াত করতে হয়। বছরের পর বছর এটা সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের।’ বেহালার পর্ণশ্রী, সরশুনা, মহেশতলা, রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দারাও জল জমা নিয়ে একই অভিযোগ করেন।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিংয়ের বক্তব্য, ‘ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে এবং লকগেট বন্ধ থাকার কারণে কিছু রাস্তায় জল দাঁড়িয়েছিল। তবে বেশিরভাগ এলাকাতেই রাতের মধ্যে জল নেমে যায়।’
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপ ক্রমশ বাংলাদেশ থেকে সরে দক্ষিণবঙ্গের উত্তরভাগ এবং ঝাড়খন্ড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে নতুন করে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। এছাড়াও মৌসুমী অক্ষরেখাও সক্রিয় রয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। যে কারণে শনি ও রবিবার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
শনিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর বাঁকুড়া ও দুই বর্ধমান। কলকাতা-সহ বাকি সব জেলাতেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে বিক্ষিপ্তভাবে। একইভাবে রবিবার অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম বাঁকুড়া জেলাতে। সোমবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম জেলায়। বাকি জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নিম্নচাপের জেরে শুক্রবার দুপুর থেকে বাঁকুড়া জেলা জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর তার জেরে ফের জল বাড়তে শুরু করেছে দারকেশ্বর, গন্ধেশ্বরী, কংসাবতী, শিলাবতী, দামোদর, শালী-সহ সবক’টি নদীতেই। গত ২৪ ঘন্টায় বাঁকুড়া জেলায় পৃথক দু’টি বজ্রপাতের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। নদী পারাপার করতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে মৃত্যু হয়েছে এক জনের।
শনি ও রবিবার বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। তবে শনিবার কলকাতার আকাশ মূলত মেঘলা থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বৃষ্টি না হলে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিও থাকবে।
শনিবার থেকে আগামী কয়েকদিন ভারী ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও। আগামী ৭২ ঘণ্টা দার্জিলিং কালিম্পং, জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৫ ডিগ্রি। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৯৪ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার।
ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকবে ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা , গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগড়, সিকিম, বিহার, ঝাড়খন্ড, অরুণাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটক রাজ্যে।