সোয়েটার-চাদর বের করুন! বৃষ্টি থামলেই ঝুপ করে শীত পড়বে, এবারের ইনিংস লম্বা ৷ দেখুন ভিডিও
ভরা ডিসেম্বরেও শীতের দেখা মিলছিল না। উল্টে রীতিমতো পাখা চালাতে হচ্ছিল। তাতেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মানুষজন। তবে কি এই বছরেও অধরাই থেকে যাবে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা?
হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের দাপটেই উত্তুরে হাওয়া রান তুলতে পারছে না। তবে মঙ্গলবারই অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু উপকূলে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে মিগজাউম। তারপর থেকেই দিনের বেলা সূর্য উধাও, ফলে হাওয়ায় হিমেল পরশ। তার মধ্যে বুধবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বৃষ্টি নেমেছে, যা বৃহস্পতিবারও চলছে।
পূর্বাভাস ছিলই। সেইমতো রাজ্যের জেলায় জেলায় বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া।
বৃষ্টিতে ভোগান্তি আরও বাড়তে চলেছে। জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। মূলত বেশ কয়েকটি জেলার জন্য রয়েছে বিশেষ সতর্কবার্তা। আবহাওয়া দফতরের বেলা ১২টার বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়ায় আগামী ২-৩ ঘণ্টাতেও ভাল বৃষ্টি হবে।
আলিপুর জানিয়েছে, আর ১ দিনের অপেক্ষা। বৃষ্টি থামবে, তারপরেই সপ্তাহান্তে বের করতে হবে সোয়েটার-চাদর-টুপি-মাফলার।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে স্বমহিমায় ফিরবে শীতের আমেজ। তবে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর মেঘলা থাকবে আকাশ। হালকা বৃষ্টিও চলবে জেলায় জেলায়। রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে থেকেও সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার কারণে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে থাকবে। আগামীকাল থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বুধবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ কয়েক পশলা হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। আজ বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা।। উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া এবং কলকাতাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দিনভর পুরোপুরি মেঘলাই থাকবে আকাশ।
স্থলভাগে ঢুকে শক্তি হারাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। ইতিমধ্যেই অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত মিগজাউম। তেলঙ্গানা হয়ে ছত্তীসগড়ের দিকে সরবে নিম্নচাপ। বাংলায় দুর্যোগের আশঙ্কা নেই। আর তারই প্রভাব পড়েছে বাংলায়। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে পাকা ধান থেকে আলুচাষে ক্ষতির আশঙ্কা। শুক্রবারের পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। আজ কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি। মেঘ কাটলে মাঝ ডিসেম্বরে ঠান্ডার বাড়ার আশা।
বুধবার বিকেল থেকেই কলকাতা সহ একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। রাতভর বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতা সহ একাধিক জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, শীতের শুরুতে এই বৃষ্টি ভোগাবে কতক্ষণ। কী বলছে হাওয়া অফিস? আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় বৃহস্পতিতেও দিনভর চলবে বৃষ্টি বাদলার রেশ। কলকাতা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই দিনাজপুর, হুগলি, নদীয়া, দুই বর্ধমানে দিনভর মেঘলা থাকবে আকাশ। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, হাওড়া সহ একাধিক জেলায় এর রেশ থাকবে শুক্রবার পর্যন্ত। দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে শুক্রবার বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সিকিমের তুষারপাতের প্রভাব দার্জিলিংয়ের পার্বত্য এলাকায় পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে শুক্রবার থেকে পরিবর্তন হবে আবহাওয়ার। শনিবার থেকে তাপমাত্রা নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। শনিবার থেকে তাপমাত্রা নামতে পারে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত আবহাওয়া দফতরের। মঙ্গলবারের মধ্যে রাতের তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নামবে। দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে।
উত্তরবঙ্গে আজ বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা। বৃষ্টি হতে পারে মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে। আগামী ২৪ ঘন্টায় দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে।
আগামী তিন-চার দিন উত্তরবঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকবে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় শুক্রবারও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। সিকিমে হালকা তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, তার প্রভাব পড়তে পারে দার্জিলিংয়ের পার্বত্য এলাকায়।
কলকাতায় আজ মূলত মেঘলা আকাশ। হালকা-মাঝারি কয়েক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাতের তাপমাত্রা বেশি থাকলেও দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকায় দিনভর মনোরম পরিবেশ থাকবে। শুক্রবারের পর আবহাওয়ার পরিবর্তন, বেশ কয়েক ডিগ্রি পারদ পতনের ইঙ্গিত শনি ও রবিবার।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫৬ থেকে সর্বনিম্ন ৯০ শতাংশ।
এমনিতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেভাবে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে না। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৩ সালই পৃথিবীর উষ্ণতম বছর হতে চলেছে। ভাঙতে চলেছে ২০১৬, ২০২০ সালের রেকর্ড। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাও। শীতের পূর্বাভাসে সেটাই যেন মনে করিয়ে দিল মৌসম ভবন। তবে একটাই আশার আলো রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মিটলে, আকাশ থেকে মেঘ সরলে দেখা মিলবে রোদের। আর তাতেই পারদ নামার সম্ভাবনা রয়েছে।