Weather Update ঘন কুয়াশার করিডরে দক্ষিণবঙ্গ ,বাতিল উড়ান , জানুন আবহাওয়ার আপডেট

0
4
হীয়া রায় , দেশের সময়

কলকাতা : সকাল দশটাতেও রোদের দেখা নেই। দৃশ্যমানতা বেশ কম। যশোর রোডে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলছে রীতিমতো ধীর গতিতে। ২৪ জানুয়ারি সকালে এমনই পরিস্থিতির সাক্ষী রইল জেলা শহর বনগাঁ। একাধিক অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়ান কলকাতার বদলে ল্যান্ড করতে বাধ্য হলো চেন্নাই–ভুবনেশ্বরে। পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব রেলেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাইনের উপর ঘন কুয়াশার চাদর। কোথাও কোথাও দৃশ্যমানতা ২০ মিটারের কাছাকাছি। তাই গতি কমিয়ে, বার বার হর্ন বাজিয়ে চললো ট্রেন।

ঘন কুয়াশার জেরে শুক্রবার সকাল থেকেই কলকাতা বিমানবন্দরে বিপর্যস্ত বিমান পরিষেবা। নির্ধারিত সময়ের একটু আগে বাতিল করা হয় দিল্লিগামী বিমান। আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা।

প্রসঙ্গত, ঘন কুয়াশার জেরে শুক্রবার সকালে একহাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এদিকে, বিপর্যস্ত হয়েছে বিমান পরিষেবা। কলকাতা বিমানবন্দরে সকালে দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারে পৌঁছে যায়। যার জেরে বিপর্যস্ত হয় পরিষেবা। একাধিক বিমান মাঝ আকাশে চক্কর কেটেছে। কোনও বিমান অন্যত্র অবতরণ করানো হয়েছে। কুয়াশার জেরে প্রবল ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। কারও দিল্লি থেকে যাওয়ার কথা ছিল বাগডোগরা, তাঁকে নামানো হয়েছে কলকাতায়। এতেই যাত্রীরা হয়ে পড়েন বিরক্ত। 

জানা গেছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় দমদম থেকে ‌‌উড়ে যাওয়ার কথা ছিল দিল্লিগামী SG130 বিমানের। নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছন যাত্রীরা। অভিযোগ, বিমান ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে জানানো হয় যে বিমানটি বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ তৈরি হয় যাত্রীদের মধ্যে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাতিলের কারণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি। এদিকে বিমানবন্দর সূত্রে খবর, দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত আলোর ক্যাটের ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশ কিছু বিমান দেরিতে উড়ছে। তবে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে খানিকটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার সকালে এমন পরিস্থিতি শুধু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকাতেই ছিল, তা নয়। দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশই এ দিন ঢেকেছে ঘন কুয়াশায়। শুক্রবার সকালে এমন পরিস্থিতি শুধু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকাতেই ছিল, তা নয়। দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশই এ দিন ঢেকেছে ঘন কুয়াশায়।

মাঘ মাস চলছে। কিন্তু কলকাতায় চেনা শীতের দেখা নেই বললেই চলে। তাপমাত্রাও বেড়েই চলেছে। শুক্রবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি বেশি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে পারদ কিছুটা নামতে পারে। তবে জাঁকিয়ে শীতের সম্ভাবনা নেই।

শুক্রবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.১ ডিগ্রি বেশি। বৃহস্পতিবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, এক দিনে প্রায় দু’ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে তাপমাত্রা।

২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তা-ও স্বাভাবিকের চেয়ে ১.২ ডিগ্রি বেশি।

কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মূলত শুকনো আবহাওয়াই থাকবে। কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু কুয়াশার কারণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে সকালের দিকে কমতে পারে দৃশ্যমানতা।

উত্তরবঙ্গেও কুয়াশার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘন কুয়াশা থাকতে পারে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কালিম্পঙে। এই জেলাগুলিতে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা ২০০ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে নেমে যেতে পারে। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আগামী ২৪ ঘণ্টা তাপমাত্রার হেরফের হবে না। মূলত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে উত্তুরে হাওয়া বাধা পাচ্ছে বলেই শীতের দেখা মিলছে না বঙ্গে। তবে উত্তুরে হাওয়া প্রবেশ করতে পারে রবিবার থেকে। পরবর্তী দু’দিনে তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি কমতে পারে। যদিও জাঁকিয়ে শীতের সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার মৌসম ভবনের প্রকাশ করা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাব ও দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলা এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের অনেকটা অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘ফগ করিডর’ বা কুয়াশা–পথ। কয়েক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকা ভোর থেকে পুরোপুরি কুয়াশার দখলে।

উত্তর–পশ্চিম ভারতে তৈরি হওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, দেশের উত্তর–পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তে তৈরি একাধিক ঘূর্ণাবর্তের জেরে ভারত ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছে। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ওই জলীয় বাষ্পই উত্তরের সমভূমির সংস্পর্শে এসে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে কুয়াশায় পরিণত হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে অবশ্য কুয়াশার পাশাপাশি অন্য চিন্তাও রয়েছে। সেটা হলো শীতের অকালবিদায়ের সম্ভাবনা। কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ১২ জানুয়ারির পরে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। একই সময়ে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ২৩ ডিগ্রির ঘরে নামতে পারেনি। এই ১২ দিনের বেশির ভাগ সময়েই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪–২৫ ডিগ্রির মধ্যে থেকেছে। ২২ জানুয়ারি দিনের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রিও ছুঁয়েছে। আবহবিদদের আশঙ্কা, হয়তো জানুয়ারি পার করার আগেই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রিতে পৌঁছবে। গত বছর সেই তাপমাত্রা উঠেছিল ২০ ফেব্রুয়ারিতে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, সামনের কয়েক দিন বাংলার — বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের রাতের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। তার পর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিছুটা দুর্বল হলে দু’তিন দিনের জন্য রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমার আশা রয়েছে। তবে, ‘হাড় কাঁপানো’ শীত পড়ার সম্ভাবনা আর তেমন নেই।

Previous articleWeather Update সকাল থেকে কুয়াশার দাপট দক্ষিণবঙ্গে ,  ট্রেন-লঞ্চ-উড়ান , প্রভাব সর্বত্র,  কবে ফিরবে শীতের আমেজ? রইল আপডেট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here