দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : বাংলায় দুর্বল বর্ষার এই-রোদ-বৃষ্টির খেলার মধ্যেই বর্ষাপ্রেমীদের জন্য বুধবার সুখবর জানাল হাওয়া অফিস ৷ এবার বাংলায় ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পেতে পারে বর্ষা।
ওড়িশার উপকূলে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের উপকূলের জেলায়। বাকি জেলায় ‘পাসিং শাওয়ার’। উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি কম হবে এবং বাড়বে তাপমাত্রা।
তবে একই সঙ্গে আবহবিদেরা এ-ও জানিয়েছেন যে বঙ্গে বর্ষার পুরোদমে শুরু হতে হলে বাংলার উপকূলের কাছাকাছি কোনও এলাকায় নিম্নচাপ তৈরি হওয়া দরকার। তবেই বর্ষার ঘন মেঘ স্থায়ী হবে আকাশে।
কলকাতায় আংশিক মেঘলা আকাশ। দু-এক পশলা বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সামান্য সময়ের এই বৃষ্টি হবে পাসিং শাওয়ারের মতো। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তি হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা শহরে তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে।
আজ, বুধবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। গতকাল বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিক। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৬২ থেকে ৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৬ মিলিমিটার।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের উপকূলের জেলায়। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় মেঘলা আকাশ থাকলেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। বেশিরভাগ এলাকায় পাসিং সাওয়ার বা স্বল্প সময়ের বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি না হলে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থাকবে।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা প্রায় একই থাকবে। উত্তরবঙ্গে আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। হালকা মাঝারি বৃষ্টির পরিমাণও কমবে আগামী চার থেকে পাঁচ দিন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দু থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে পারে দিনের বেলায়। দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি এই জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। নীচের জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা রয়েছে। ওড়িশা উপকূলে নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে। তাই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার কটালের জেরে বুধ ও বৃহস্পতিবার ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার কটালের জেরে বুধ ও বৃহস্পতিবার ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। এর জেরে নদী ও সমুদ্র উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপকূল এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতির মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
এখন মাছ ধরার মরসুম চলছে। সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, সাগর ও পাথরপ্রতিমা থেকে প্রায় আড়াই হাজার ট্রলার মাঝসমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। মৎস্য দফতরের তরফে মঙ্গলবার ট্রলার-সহ মৎস্যজীবীদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন বিকেলের মধ্যে বেশিরভাগ ট্রলারই ফিরে এসেছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, সাগরের মৎস্য বন্দরগুলিতে এ বিষয়ে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।
সতর্ক করা হয়েছে চাষিদেরও। গত বছর ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের জেরে নোনা জল ঢুকে সুন্দরবন উপকূল এলাকার বিস্তীর্ণ জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছিল। এখানে প্রচুর পান চাষ হয়। ঝড়ের আগে পানের বরজের চারপাশে বাঁধন দিতে বলা হয়েছে। আনাজ বাগানের চারপাশে নালা কাটতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ওড়িশা উপকূলে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে এটি কিছুটা দক্ষিণে ঝুঁকে রয়েছে। মৌসুমী অক্ষরেখা রাজস্থানের জয়সলমের থেকে কোটা হয়ে রায়পুর হয়ে ওড়িশা পর্যন্ত সুস্পষ্ট নিম্নচাপের মধ্যে দিয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ ভারতে বঙ্গোপসাগরে রয়েছে শিয়ার জোন । এ ছাড়া পঞ্জাবে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী কোথাও কোথাও প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে।