কনকনে শীতে জবুথবু বাংলা। শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ল বাংলা। রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে শৈত্যপ্রবাহ। আঠেরো ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের স্পেল। বড়দিনে বাড়তে পারে উষ্ণতা। জানুয়ারিতে ফের ফিরতে চলেছে শীতের আমেজ ।
কলকাতা : কয়েক দিন আগেও ‘ঠান্ডা লড়াই’ সীমাবদ্ধ ছিল কালিম্পং আর পুরুলিয়ার মধ্যে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার প্রতিযোগিতায় একদিন পুরুলিয়া শীতলতম হয়, তো অন্য দিন কালিম্পং। শেষ পর্যন্ত গত কয়েক দিনে কালিম্পংকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে পুরুলিয়া। শুক্রবার ভোররাতে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের এই জেলার সদর শহরের রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই জায়গায় কালিম্পং ছিল ‘মাত্র’ ৯.৫ ডিগ্রি।
শুক্রবার ভোররাতে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে (৯.৫ ডিগ্রি) অনুভূত হলো কালিম্পংয়ের সমতুল্য ঠান্ডা। ব্যাপারটা এখানেই থামেনি।
এ দিন আলিপুর হাওয়া অফিস যে ওয়েদার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে বীরভূমের শ্রীনিকেতন (৮.২) ও সিউড়ি (৯.৪) এবং ঝাড়গ্রামেও (৯) কালিম্পংয়ের চেয়ে বেশি ঠান্ডা ছিল। এক কথায় বলা যায় দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং ঝাড়গ্রাম — ঠান্ডা যুদ্ধে অন্তত একদিনের জন্য হলেও হারিয়ে দিতে পেরেছে পার্বত্য কালিম্পংকে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব কাটতেই দক্ষিণবঙ্গে ভেলকি দেখাতে শুরু করেছে ঠান্ডা কনকনে উত্তুরে হাওয়া। ক্রিকেটের মাঠে যেমন এমন হাওয়া কাঁপুনি ধরায় ব্যাটারদের, তেমনই আবহবিদ্যার দুনিয়াতেও ওই হাওয়া কলকাঠি নাড়া শুরু করতেই কাঁপুনি গোটা দক্ষিণবঙ্গের। এই প্রসঙ্গে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র গোয়েঙ্কা বলেন, ‘হিমলায়–সংলগ্ন অঞ্চল এবং দক্ষিণবঙ্গ ,এই দু’জায়গায় সম্পূর্ণ আলাদা দুটো পদ্ধতিতে ঠান্ডা পড়ে। দক্ষিণবঙ্গ এখন যে ঠান্ডা পাচ্ছে, সেটা পুরোটাই উত্তুরে হাওয়ার জন্য। এই হাওয়া পাঞ্জাব ও কাশ্মীদের দিক থেকে এসে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের দিকে বয়ে যায়। এটা উত্তরবঙ্গে ঢোকে না।’
দ্রুত তাপমাত্রা কমার সুবাদে উত্তরবঙ্গের সমতলেও রাতের তাপমাত্রা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। কোচবিহার (৯.৭) ইতিমধ্যেই সিঙ্গল ডিজিটে নেমে এসেছে। খুব পিছিয়ে নেই আলিপুরদুয়ার (১০), রায়গঞ্জ (১০.১) এবং জলপাইগুড়িও (১০.২)।
রাজ্যে রবিবার পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ। পশ্চিমের জেলায় ১০ ডিগ্রির নিচে পারদ। কলকাতায় আরও ৩ দিন ১৫ ডিগ্রির নিচে থাকবে তাপমাত্রা। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় কুয়াশার সম্ভাবনা। দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় ঘন কুয়াশা। ১৪, ১৫, ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণের ৫ জেলায় শৈত্য প্রবাহ। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম এই পাঁচ জেলায় শৈত্য প্রবাহ চলবে।
কলকাতায় সোমবার পর্যন্ত ১৫ ডিগ্রির নিচেই থাকবে পারদ। পশ্চিমের জেলায় ১০ ডিগ্রির নিচে চলে যাবে তাপমাত্রা। জাঁকিয়ে শীতের স্পেল রবিবার পর্যন্ত। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়া। জমিয়ে শীতের স্পেল। বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। কুয়াশার দাপট থাকবে তিন জেলাতে। পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাতে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার সম্ভাবনা। কলকাতা-সহ বাকি জেলাতেও সকালের দিকে হালকা কুয়াশা ধোঁয়াশা।
দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি। কালিম্পং ৫ ডিগ্রি। অর্থাৎ দক্ষিণের পাশাপাশি উত্তরেও শৈত্য প্রবাহের পরিস্থিতি। জাঁকিয়ে শীতের স্পেল বাকি উত্তরবঙ্গেও। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় দু থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে থাকবে বলে অনুমান আবহাওয়া দপ্তরের। আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রার কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। কুয়াশার সম্ভাবনা আজকেও দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গে। আজ হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের চার জেলাতে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুর জেলাতে কুয়াশার সতর্কবার্তা।
পারদের তেমন কোনও হেরফের নেই। শহরে জমিয়ে শীতের আমেজ। কলকাতাতে ১৪ ডিগ্রির ঘরে পারদ। সকালে হালকা কুয়াশা। বেলায় ঝলমলে আকাশ। রাত ও দিনের দুই তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের বেশ কিছুটা নিচে। আপাতত ১৫ ডিগ্রির নিচেই থাকবে তাপমাত্রা। জাঁকিয়ে শীতের পরিস্থিতি চলবে ১৬ তারিখ পর্যন্ত। তারপর কিছুটা বাড়বে তাপমাত্রা। উষ্ণ বড়দিনের পূর্বাভাস।
কলকাতার তাপমান আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.৩ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বা আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪২ থেকে ৮৯ শতাংশ। এদিকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা কেরল এবং মাহেতে। তামিলনাডু পন্ডিচেরি কড়াই কাল কর্নাটকে ভারী বৃষ্টি হবে।
শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, মোজাফফরাবাদ, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চন্ডিগড়, দিল্লি, রাজস্থান, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ। ঘন কুয়াশার দাপট আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরাতে।