দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় প্রবল ঝড়ের দাপট দেখা গিয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। আর তাতে প্রাণহানি হয়েছে একাধিক মানুষের।
গত কয়েকদিনের জ্বালাপোড়া গরম থেকে রেহাই পেয়েছে রাজ্যবাসী। আচমকা ঝড়-বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে বঙ্গে। তাপপ্রবাহের হাত থেকেও মিলেছে মুক্তি। কিন্তু, তার মধ্যেই ঝড়ের বলি হলেন মানুষ। ঝড়ের দাপটে ক্ষয়ক্ষতিও হল ব্যাপক।
সোমবার বিকেল হতে না হতেই আকাশ কালো করে আসে শহর কলকাতায়। মুহূর্তে শুরু হয় প্রবল বেগে হাওয়া। দোসর ছিল ধুলোর ঝড়। তারপরই বজ্রবিদ্যুৎ সহ
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয় মহানগরে ৷ জানাগিয়েছে
প্রায় ৮৪ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সাক্ষী থাকে তিলোত্তমাবাসী ৷
একের পর এক গাছ ভেঙে পড়ে শহরের একাধিক রাস্তায় যান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। কলকাতায় যানজট আর ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় অফিসফেরত যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হন।
কলকাতা শহরের প্রায় ১৯টি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। ভিক্টোরিয়ার সামনে এক আইনজীবীর গাড়ির সামনের বনেটের উপর গাছ ভেঙে দু্র্ঘটনা ঘটে। অল্পের জন্য রক্ষা পান আইনজীবী। এ ছাড়াও লেক ভিউ রোড, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বেহালা শিলপাড়া, গল্প গ্রিন সহ একাধিক রাস্তায় গাছ, ওভারহেড তার এবং লাইটপোস্ট উপড়ে পড়ে। পোদ্দার কোর্টের কাছে বিদ্যুতের তারে আগুন লেগে যায়।
এদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, তীব্র গরমের থেকে এবার স্বস্তি মিলতে চলেছে শহরবাসীর। আপাতত পূর্বাভাস অনুযায়ী, কলকাতার আকাশ মঙ্গলবারও দিনভর আংশিক মেঘলাই থাকবে। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিকর গরম থেকে মুক্তি মিলবে।
সপ্তাহ জুড়েই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে ঝড় বৃষ্টির সতর্কতা। শনিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি বাড়বে রাজ্যে।
বিহার থেকে ওড়িশা পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। এই অক্ষরেখার টানে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকবে বাংলায়। এর প্রভাবেই বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি ও ঝড়ের আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের।
দক্ষিণ বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। দক্ষিণবঙ্গে শনিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। একইসঙ্গে পশ্চিমের জেলাগুলিতে আজ, মঙ্গলবার ও আগামিকাল বুধবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই দিনের বেলায় গরম বাড়বে থাকবে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি। বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হবে। আজ, মঙ্গলবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা থাকবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাতে।
আগামিকাল, বুধবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা থাকবে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া জেলাতে। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা শনিবার পর্যন্ত। বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো হাওয়া এবং ও বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকছে।
আজ, মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি ও হালকা ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা। বুধবার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা। থাকবে বজ্রপাতের আশঙ্কাও।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টি বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলাতে। বৃষ্টির সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বজ্রপাতের আশঙ্কা।
শুক্র এবং শনিবারে ও দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং হালকা ঝোড়ো হওয়ার সম্ভাবনা। দমকা বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ।
উত্তরবঙ্গে সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং হালকা ঝড়ের পূর্বাভাস। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা। বৃহস্পতিবার দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকছে। উত্তরবঙ্গের আট জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে হালকা ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি ও ঝড়ের সতর্কতা দিলেই নিরাপদ আশ্রয় থাকার পরামর্শ আবহাওয়াবিদদের। কলকাতায় আজ, মঙ্গলবার আংশিক মেঘলা আকাশ। গতকালের ঝড়-বৃষ্টির পরে রাতের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি নেমে যায়। তবুও আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনভর গরম ও আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থাকবে।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে। আজ, মঙ্গলবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম। গতকাল, সোমবার বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৪৫ থেকে ৯০ শতাংশ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা থাকবে কলকাতা শহরে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।