

মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় শুধু তুমুল বৃষ্টি নয়, সঙ্গী হয়েছিল ভয়াবহ বজ্রপাত। কয়েক মুহূর্ত পর পর কান ফাটানো বাজের আওয়াজে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মানুষজন। তবে প্রকৃতি যত তাণ্ডবই দেখাক, রাজ্যের দক্ষিণ অংশে ‘যথাযথ’ বর্ষা নামতে এখনও কিছুটা দেরি রয়েছে বলেই মনে করছেন আবহবিদদের একাংশ।

বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি অবশ্য বজায় থাকবে দক্ষিণবঙ্গে ।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের প্রভাবে ‘যথাযথ’ বর্ষা শুরু হওয়ার একাধিক শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো—নির্দিষ্ট এলাকার অন্তত ৭০ শতাংশ ওয়েদার স্টেশনে জুন মাস পড়ার পর টানা দু’দিন ২.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে হবে।

এ ছাড়াও ওই এলাকায় বায়ুর চাপ কতটা এবং প্রতি বর্গমিটার এলাকা থেকে কত পরিমাণ তাপ বিকিরণ হচ্ছে ‘মনসুন অনসেট’–এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে এই বিষয়ও রয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে এখনও এই সব ক’টি শর্ত ‘বর্ষাকাল’–এর উপযুক্ত হয়নি।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘স্থানীয় স্তরে অত্যন্ত ঘন এবং উঁচু হয়ে মেঘের স্তর জমেই অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে।’
মঙ্গলবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার আকাশে জমে উঠেছিল প্রায় আট কিলোমিটার উঁচু মেঘের স্তম্ভ। আর তারই জেরে সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে তিন ঘণ্টায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি পেল মহানগর। সল্টলেকে বৃষ্টির পরিমাণ ৮১ মিমি, দমদমে ৫৭ মিমি।

বৃষ্টির সঙ্গে ঘনঘন প্রবল বজ্রপাত সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বর্ষা শুরুর পর্যায়ে এমনটা খুবই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ এই সময়ে খুব বেশি থাকে। মেঘের উঁচু স্তম্ভ এবং ভাসমান ধূলিকণা মিলে প্রবল বজ্রপাতের ‘আদর্শ’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’

এ বছর দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাস ১ জুনের পরিবর্তে ২৪ মে কেরালায় প্রবেশ করেছে। উত্তরবঙ্গেও বর্ষা শুরু হয়েছে ৮ জুনের পরিবর্তে ২৯ মে। তার পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গেও সময়ের কিছুটা আগে বর্ষা নামার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার লক্ষণ দেখা যায়নি। আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন, কয়েক দিন আগে বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছিল, সেই নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর–পূর্ব ভারতে সময়ের আগে বর্ষা ঢুকলেও নিম্নচাপ জলীয় বাষ্প টেনে নিয়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমন কিছুটা থমকে দিয়েছে।