দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুজোর মুখে রাজ্যে নিম্নচাপের ভ্রুকুটির কথা আগেই জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। মধ্য-পশ্চিম ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ওপর তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। পশ্চিম, মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে এর অভিমুখ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে (weather)। উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল হয়ে এই নিম্নচাপ স্থলভাগে ঢুকেছে। আপাতত এর অবস্থান ওড়িশা ও দক্ষিণ ছত্তীসগড়ে। এর প্রভাবেই বাংলা ও ওড়িশার উপকূলে তুমুল ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
সকাল থেকে নাগাড়ে চলছে বৃষ্টিপাত (Rain)। সপ্তাহের শুরুতেই গভীর নিম্নচাপের জেরে কার্যত রাস্তায় বেরিয়ে নাকাল নিত্যযাত্রীরা। তার মধ্যেই একাধিক এলাকায় রয়েছে মিটিং-মিছিল। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শহরের একাধিক এলাকা। ফলে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে শহরের যান চলাচল। কোন কোন পথে সোমবার যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে? কী জানাচ্ছেল লালবাজার ট্রাফিক গার্ড !
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম জানাচ্ছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মৌলালিতে একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যার জেরে একাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছে। এর ফলে শিয়ালদা চত্বরে যান চলাচলের গতি বেশ স্লথ।
সতর্কতা ছিলই। বঙ্গোপসাগরে ঘনীয়ে ওঠা নিম্নচাপ আরও গভীর হয়ে উপকূলে ঢুকে গেছে ৷ আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়েই স্থলভাগে ঢুকেছে। এর জেরে প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা আছে বাংলার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। মুষলধারে বৃষ্টিতে ভাসবে কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকাও। উপকূলে ঝোড়ো হাওয়ার কারণে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে মানা করা হয়েছে। সৈকত শহরগুলিতে পর্যটকদের সমুদ্রের ধারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাত ৮টা নাগাদ অপর একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল রয়েছে মার্সডেন স্ট্রিটে। মিছিলটি এগোবে সান্ডাল স্ট্রিট, নওয়াব আবদুল লতিফ স্ট্রিট হয়ে। মিছিলটি শেষ হবে রিপন স্ট্রিটে। সন্ধ্যার পর ওই অঞ্চলে খানিকটা যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, শক্তিশালী নিম্নচাপের জেরে সোমবার টানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে শহরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কলকাতায়। যার জেরে একাধিক এলাকা জলমগ্ন।
জল জমেছে ঠনঠনিয়া কালিবাড়ি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, কলুটোলা লেন, লালবাজার, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, এমজি রোড, গণেশ চন্দ্র এভিনিউ, সেন্ট্রাল এভিনিউ, মানিকতলা। পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যেমন বেহালা, সখের বাজার, শিলপাড়া, রাসবিহারী, সাদার্ন অ্যাভিনিউও জলমগ্ন। সেক্টর ফাইভ এলাকায় হাঁটুজল জমায় বিপাকে পড়েছেন ওই অঞ্চলে কর্মরত নিত্যযাত্রীরা। সপ্তাহের শুরুতেই যানজটে নাকাল হয়ে অফিসে লেট মার্ক। বাইপাসের উপরও কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে যান চলাচল। দীর্ঘক্ষণ ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে রয়েছে গাড়ি।
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের বৃষ্টি চলবে বুধবার অবধি। গভীর নিম্নচাপের জেরে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হবে। সমুদ্রের ভেতরে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে (Weather)।
উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। যার জেরে ক্রমশই দুর্যোগ বাড়ছে রাজ্যে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে এর প্রভাব ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। ইতিমধ্যেই উত্তাল হয়ে উঠেছে দিঘার সমুদ্র।
পর্যটকদের জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত দিঘা, মন্দারমনি ও সাগর সৈকতে পর্যটকদের সমুদ্রে স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
পাশাপাশি মৎস্যজীবীদেরও আগামী ৪৮ ঘণ্টা সমুদ্র যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আজ সোমবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে ত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০০ মিলিমিটার অবধি বৃষ্টি হতে পারে।
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে কলকাতা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম পশ্চিম মেদিনীপুর হাওড়া এবং নদিয়া জেলায়।
মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টির হবে। ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া মুর্শিদাবাদ, মালদা, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম এবং পূর্ব মেদিনীপুরে।
বুধবারে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়।
হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরে জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা।
কলকাতা হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের কিছু অংশে হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে।