দেশের সময় : শনিবার সকাল ৭টায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের
গ্রহণ শুরু হতেই গোটা রাজ্য থেকে হিংসা ও অশান্তির খবর আসতে শুরু করে দেয়। পড়তে শুরু করে একের পর এক লাশ ৷
দক্ষিণ ২৪ পরগনা :
বাসন্তীতে আবার বোমার আগাতে মৃত্যু হল আরও এক তৃণমূল কর্মীর। জানা গেছে ভোট দিতে এসেছিলেন আনিসুর ওস্তাগর (৪২)। তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
নদিয়া : অন্যদিকে ভোট দিতে গিয়ে নদিয়ার চাপড়ায় খুন এক তৃণমূল কর্মী। নিহতের নাম, হামজার আলি হাসান (৫২)। স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হামজার। তখনই আচমকা অশান্তি শুরু হয়। তাতেই মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল কর্মীর। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। তবে বোমা না গুলি, ঠিক কী কারণে মৃ্ত্যু তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।
মুর্শিদাবাদ : সবচেয়ে অশান্ত মুর্শিদাবাদ জেলা। শুক্রবার রাত থেকে এই জেলায় দফায় দফায় বোমাবাজি ও গোলাগুলি চলেছে। মুড়ি মুড়কির মতো বোম পড়ছে। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই কাপাসডাঙায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম বাবর আলি। নিজের বাড়ির বাইরে খুন হয়েছেন বাবর। তাঁকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে ও পরে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবরকে প্রথমে বেলডাঙা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে বহরমপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।খড়গ্রাম ও রেজিনগরে আরও দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন বলে খবর।
বেলা গড়ালেও মৃত্যুমিছিল অব্যাহত মুর্শিদাবাদে। ফের লালগোলায় খুন হয়েছেন এক সিপিএম সমর্থক। জানা গেছে, লালগোলার একটি স্কুলের বুথে শাসকদলের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে সিপিএমের। ভোট দিতে এসে সেই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান রওশন আলি নামে ওই সিপিএম সমর্থক। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
একই সময়ে উত্তপ্ত নওদাতেও প্রাণ খোয়াতে হল এক কংগ্রেস কর্মীকে। এখানেও তৃণমূলের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে কংগ্রেস কর্মীদের। গুলি চলে বলে অভিযোগ। গুলিতে জখম হন ওই কংগ্রেস কর্মী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মালদহ :একই ভাবে অশান্ত মালদহ। জেলার মানিকচক এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার নাম শেখা মালেক। বয়স ৩০ বছর। গুলি লাগার পর তাঁকে মালদহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোচবিহার :
ওদিকে ভোট শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কোচবিহারে বিজেপির এক পোলিং এজেন্টকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের ১ নম্বর ব্লকের ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। জানা গেছে, নির্বাচন শুরুর ঘণ্টা খানেক পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গায। গুলি, বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। বিজেপির পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাসকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পোলিং বুথে ঢুকতে চেয়েছিলেন মাধব। সেই সময় তাঁকে বাধা দেয় কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে বচসা। অভিযোগ, তার মাঝেই আচমকা গুলি চালানো হয়। গুলি লাগে মাধবের গায়ে। ঘটনায় আহত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীও।
এদিন সকালে দিনহাটার ১ নম্বর ব্লকে যে বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হন, তাঁর মৃত্যু হয় দিনহাটা হাসপাতালে। মৃতের নাম চিরঞ্জিত কার্জি। শনিবার সকালে দিনহাটার কালীরপাট গ্রামে ভোট ঘিরে তুমুল অশান্তি শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বুথে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। বাধা দেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের উপর চড়াও হয় তারা। বুথের মধ্যেই গুলি চলে। তৃণমূল কর্মীদের মারে রাধিকা বর্মন নামে তাদের আরও একজন কর্মী জখম হন।
উত্তর দিনাজপুর : উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখোরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হলেন তৃণমূলের বিদায়ী প্রধানের স্বামী। নিহতের নাম মহঃ সাহেনশা (৩৫)। গোয়ালপোখোর ২ নম্বর ব্লকের চাকুলিয়ার বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেবরা ১০ নং বুথের ঘটনা।
জানা গিয়েছে, ভোটকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বুথে উত্তেজনা ছিল। বেলা গড়াতে বুথের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কর্মীরা। অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয় তৃণমূলের বিদায়ী প্রধানের স্বামীর। ঘটনার জেরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা।
বেলা গড়াতে আবার হেমতাবাদ থেকে খবর মেলে এক তৃণমূল কর্মীর দেহ উদ্ধারের। অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম নারায় সরকার। বছর আটত্রিশের নারায়ণের দেহ মেলে বাড়ির দু’কিলোমিটার দূরে পাট খেতের পাশ থেকে। পরিবারের দাবি, ভোট দিতেই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শনিবার। পরে ধোয়ারাই এলাকায় একটি পাট খেতের পাশে পাওয়া যায় তাঁর দেহ।
পূর্ব বর্ধমান : মারা গেছেন পূর্ব বর্ধমানের রাজিবুল হক। আউসগ্রাম-২ নম্বর ব্লকের বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন সিপিএম কর্মী রাজিবুল। শুক্রবার প্রথমে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শারীরিক অবস্থার অবনতির হওয়ায় গভীর রাতে এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। আজ সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় ৩২ বছর বয়সি রাজিবুলের।
এর পরে বেলা গড়াতেই কাটোয়া মহকুমায় ভোটের বলি হন আরও এক তৃণমূল কর্মী। শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলছিল কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন বুথ থেকে। আধাসামরিক বাহিনী পর্যাপ্ত না থাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় একাধিক বুথে। কাটোয়া দু’নম্বর ব্লকের নন্দীগ্রামে তৃণমূল এজেন্টে গৌতম রায়ের সঙ্গে বচসা বাঁধে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের। অভিযোগ তখন ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান গৌতমবাবু। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শনিবার, ভোটের দিনেও রাজ্যের জেলায় জেলায় হিংসার জেরে প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে। যদিও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, ভোটের দিন রাজ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অশান্তির দায়িত্ব তিনি ঠেলেছেন রাজ্য পুলিশের উপর। স্পষ্টই জানিয়েছেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের কাজ ‘ব্যবস্থাপনা’। সেই কাজ তারা করে গিয়েছে। অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন এসপি এবং জেলাশাসককে। নিজের তাগিদে পুলিশ তদন্ত করবে। গ্রেফতার করবে।